Total Pageviews

Saturday, August 30, 2014

মুসলিম উত্তরাধিকার আইন ও আইনের উত্‍স:

মুসলিম উত্তরাধিকার আইন ও আইনের উত্‍স:

মুসলিম উত্তরাধিকার আইন কি?
ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী কোন মুসলমান মারা গেলে তার ফেলে যাওয়া সম্পত্তি বা ত্যাজ্য সম্পত্তি কিভাবে কাদের মধ্যে বন্টন করা হবে সে  সম্পকির্ত বিধানকে মুসলিম উত্তরাধিকার বা ফারায়েজ বলে।
উত্তরাধিকার আইনের উত্‍স:
 

১. কোরআন
উত্তরাধিকার আইনের প্রথম ও প্রধান উত্‍স আল-কোরআন।আল কোরআনের সূরা নেসায়ের সপ্তম,অষ্টম,একাদশ,দ্বাদশ এবং একশত ছিয়াত্তর আয়াতে প্রত্যক্ষভাবে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে বলা আছে। 
যেমন- মুসলিম উত্তরাধিকার বা ফারায়েজ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সূরা নিসায় বলা আছে যে,  ১২ জন সম্পত্তির অংশীদার। যাদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ এবং ৮ জন নারী।পুরুষগন হলেন মুসলিম আইনে কোরআনের পবিত্র বিধান অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশগণ বা উত্তরাধিকারীগণ মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে সুনিদির্ষ্ট অংশ লাভ করিতে বাধ্য থাকে।

২.হাদিস
এক কথায় হাদিস হলো হযরতের উক্তি, নিদের্শাবলী এবং তার জীবনের কার্যাবলীর মহাসংকলন।মুসলিম আইন বিজ্ঞানের বিধান মোতাবেক যে সকল বিষয় সমূহ হাদিসের ক্ষেত্রে অপরিহার্য তা নিম্নরূপ-
ক. হযরত মুহম্মদ(সঃ) এর অভিমত,উক্তি,শিক্ষা,উপদেশ,অনুশাসন এবং বাণীর সংকলন বিষয়ক মন্তব্য
খ. হযরতের দৈনন্দিন জীবন যাপন প্রণালী,কমর্তত্‍পরতা এবং হযরত কতৃর্ক সম্পাদিত কার্যাবলী বিষয়ক তত্‍পরতা,
গ. হযরতের পছন্দনীয় কার্যাবলী এবং অপছন্দনীয় কার্যসমূহের বিবরণ মূলক বক্তব্য,
ঘ. হযরত কতৃর্ক তার সাহাবীদের ক্ষেত্রে ইঙ্গিতবাহী সম্মতি বা নীরব সমথর্ন।
যেমন- হযরত ফাতেমা(রাঃ) একবার দাবী করেন যে, তিনি তাঁর পিতার সম্পদের ওয়ারিছ। কিন্তু এর উত্তরে হযরত আবুবকর(রাঃ) রাসুলুল্লাহর পবিত্র বাণী" আমরা,নবীরা কোন সম্পদ ওয়ারিছদের জন্য রেখে যাই না; আমাদের যা থাকে, তা অবশ্যই খয়রাতের জন্য'। এই হাদিসের সত্যতা সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন করল না। হযরত ফাতেমার(রাঃ) দাবি অগ্রাহ্য করা হল।

৩. ইজমা 

প্রকৃত অর্থে উলেমাগণের ঐক্যমত্যই হইল ইজমা এবং উহা অভ্রান্ত বলিয়া ধরিয়া নেওয়া হয়। কোরআন,  হাদিস এবং সুন্নাহর মাধ্যমে যে আইন প্রনয়ণ কাজ চলে আসছিল  তা হযরতের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে যায় অথচ নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হতে লাগল যার সমাধানের জন্য কোরআন, সুন্নাহ কিংবা হাদিসের মধ্যে কোন নিদের্শ পাওয়া যেত না। এমতাবস্থায় অন্য কোন উপায়ে ঐ সব সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন হয়ে পড়ত। এই উদ্দেশ্যে অাইনবিদগন আইনের যে নীতির উদ্ভব করেছিলেন উহাই ইজমা।
যেমন- ধমীর্য় অনুশাসনের ব্যাপারে যেমন- রোজা, নামাজ,জনগণের সম্মিলিত মত দ্বারা বিধি প্রণয়ন, হযরত আবুবক্করকে খলিফা নিযুক্ত করা ইত্যাদি ঐক্যমত বা ইজমার দ্বারা হয়েছিল।

৪.কিয়াস 

যখন কোন সমস্যা সমাধানের জন্য কোরআন,সুন্নাহ বা ইজমার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া না যায় তখন কিয়াস অথার্ত্‍ "ফলপ্রসু  যুক্তি"-র দ্বারা সমাধান করাকে কিয়াস বলা হয়।
যেমন- ইসলামে মাদকতা সৃষ্টিকারী তীব্র পানীয়কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মদকে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ না করা হলেও যেহেতু মদ মাদকতা সৃষ্টিকারী তীব্র পানীয়, সুতরাং সাদৃশ্যমূলকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে বিবেচিত হয়। এটাই কিয়াস।

৫.আরবীয় প্রথা

মুসলিম আইনের পঞ্চম উত্‍স হল প্রাক ইসলামী প্রথা। কোরআন, হাদিস, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস ব্যতীত আইনবিদগণ যে উত্‍সটির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন সেটা হল রীতি বা প্রথা। বহু পুরাতন আরব প্রথা কোরআনের আয়াত দ্বারা নাকচ করা হয়েছে। যা কোরআন কতৃর্ক নাকচ করা হয় নি এবং যা সুন্নাহ কতৃর্ক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গৃহীত হয়েছে, উহা মুসলিম আইনের বিধি হিসাবে বতর্মান রয়েছে।
যেমন- প্রাক ইসলামী প্রথায় যিহার, ইলা, খুলা ইত্যাদি যে কোন প্রকার প্রথার মাধ্যমেই তালাক বা বিবাহ- বিচ্ছেদ হত, তালাকপ্রাপ্তাকে পুনরায় বিবাহ করার আগে কিছু কাল অপেক্ষা করতে হতো। এরূপে কোন নারীর পুনবির্বাহের পূর্বে এই অপেক্ষমান সময়কে ইদ্দত পালন বলে। ইসলামী আইনেও নিদির্ষ্ট মেয়াদে ইদ্দত পালন করতে হয়।

৬. বিধিবদ্ধ আইন

বাংলাদেশে মুসলমানদের উপর শুধু মুসলিম ব্যক্তিগত আইনই প্রয়োগ করা হয়। উত্তরাধিকার,বিবাহ,বিবাহ-বিচ্ছেদ, উইল, হিবা এবং ওয়াকফ্ সংক্রান্ত বিষয়গুলিতে মুসলিম আইন প্রয়োগ করা হয়। এ ছাড়াও মুসলিম ব্যক্তিগত আইন সম্পর্কে ও কতিপয় আইন বিধিবদ্ধ করা হয়েছে এবং  ঐ প্রকারের আইনগুলোকে ৬ষ্ঠ উত্‍স বলে মুসলিম আইন বিকাশে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
বিধিবদ্ধ আইন হিসাবে আইন সভা দ্বারা পাশকৃত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আইনগুলো হল:
১.শরীয়া আইন,১৯৩৭
২.মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৭
৩.মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ,১৯৬১( অধ্যাদেশ নং ৮)
৪.মুসলিম বিবাহ ও বিবাহ-বিচ্ছেদ রেজিষ্ট্রেশন আইন, ১৯৭৪

৭. আদালতের সিদ্ধান্ত

দেশের উচ্চ আদালতের কোন জটিল বিষয়ের সিদ্ধান্তও মুসলিম আইনের উত্‍স হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।


সুন্নী (হানাফী) উত্তরাধিকার আইনে যেসব উত্তরাধিকারীদের মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে অধিকার দেওয়া আছে: 

 অংশীদারগণ  
১) স্ত্রীর সম্পত্তিতে স্বামীর অধিকার (Husband): মুসলিম আইন এবং কোরআনের বিধান মোতাবেক সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে স্বামীকে দুটি অবস্থায় বিশ্লেষণ করা যায়; যথা -
ক) মৃত ব্যক্তির সন্তান সন্ততি বা পুত্রের সন্তান সন্ততি বা তার নিম্নে কেউ না থাকলে ১/২ অংশ পাবেযেমন:   
  মৃত  ব্যক্তি 
 
স্বামী (১/২)  
 
পিতা (১/২)
                                    
খ) আবার মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান- সন্ততি কেউ থাকলে সেক্ষেত্রে ১/৪ অংশ পাবে যেমন:
                    
  মৃত    ব্যক্তি 
 স্বামী (১/৪)  তিন পুত্র (৩/৪)
২) স্বামীর সম্পত্তিতে বিধবা স্ত্রীর অধিকার (Wife): মৃত ব্যক্তির স্ত্রী একজন থাকুক আর একাধিক থাকুক তাদের  সম্পত্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দুটি অবস্থা উল্লেখ করা যায়; যথা-ক) মৃত ব্যক্তির সন্তান সন্ততি বা তার নীচে কেউ না থাকলে স্ত্রী ১/৪ অংশ পাবে যেমন:        
 মৃত  ব্যক্তি
 স্ত্রী (১/৪)পিতা (৩/৪) 
খ) অপরদিকে মৃত ব্যক্তির সন্তান সন্ততি বর্তমান থাকলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী ১/৮ অংশ পাবে। আর যদি মৃত ব্যক্তির একাধিক বিধবা স্ত্রী থাকে, তবে সব বিধবা স্ত্রীরাই উপরোক্ত ১/৪ বা ১/৮ অংশ হতে যেরকমই হয়, সমান হারে তাদের অংশ ভাগ করে পাবে যেমন:
  মৃত   ব্যক্তি  
 স্ত্রী  (১/৮) পুত্র (৭/৮)
স্বামী পীড়িত অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দিলে উক্ত তালাকী স্ত্রীর ইদ্দত কাল এর মধ্যে স্বামী মারা গেলে তালাকী স্ত্রী স্বামীর ওয়ারিশ হবে (192 Sind, 1771) কিন্তু স্বামী একইভাবে স্ত্রীর  উত্তরাধিকারী হতে পারবেনা
৩) মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে পিতার অধিকার (Father): মুসলিম আইন এবং কোরআনের বিধান অনুযায়ী পিতা কোরানিক অংশীদার। পিতার এই অংশ তিনটি অবস্থায় দেখানো হলো
ক) মৃত ব্যক্তির পুত্র কিংবা তার চেয়ে নীচে কেউ থাকলে পিতা মাত্র ১/৬ অংশ পাবে
যেমন: সেলিম একজন সুন্নী মুসলমান সে পিতা, এক পুত্র ও এক কন্যাকে ওয়ারিশ রেখে মৃত্যুবরণ করেছে, এখন মৃত সেলিম এর সম্পত্তি বন্টন করা হবে ।
পিতা -১/৬ =৩/১৮অংশ অংশীদার হিসেবে প্রাপ্ত হবে   
পুত্র -৫/৯ = ১০/১৮অংশ অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে প্রাপ্ত হবে  
কন্যা-৫/১৮= ৫/১৮অংশ অবশিষ্টংশভোগী হিসেবে প্রাপ্ত হবে  
এক্ষেত্রে পিতা মৃত (পুত্র) সেলিম এর পুত্র, কন্যা বিদ্যমান থাকায় ১/৬ অংশীদার হিসেবে প্রাপ্ত হবে
পুত্র ও কন্যা তাদের মৃত পিতার সম্পত্তিতে অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে যথাক্রমে ৫/৯  এবং ৫/১৮ অংশ প্রাপ্ত হবে কন্যা পুত্রের অর্ধেক পাবে
খ) পুত্র না থাকলে কন্যা বা তার নীচে কেউ থাকলে পিতা ১/৬ অংশ এবং এবং অবশিষ্টভোগী হিসেবে সম্পত্তি পাবে যেমন:
   মৃত জলিল 
 পিতা  কন্যা
 ১/৬ + ২/৬ (আসাবা) = ১/২  ৩/৬=১/২

গ) পুত্র কন্যা বা পুত্রের পুত্র বা তার নীচে কেউই না থাকলে পিতা আসাবা বা অবশিষ্টাংশভোগী হবে এবং  অবশিষ্ট সম্পত্তি পাবে

   মৃত বশীর  
পিতা কালামমাতা ফুলি ভাই জাহেদবোন নূরী
 ২/৩ ১/৩ 
বশিরের পিতা জীবিত থাকায় ভাইবোন বঞ্চিত হবেন। তবে ভাইবোন জীবিত থাকায় মাতা ফুলি ১/৬ অংশ প্রাপ্ত হয়। অবশিষ্টভোগী হিসেবে পিতা কালাম ৫/৬ অংশ পেয়েছে
অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে পিতা: মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান এমনি নিম্নগামী অধঃস্তন বংশধর বিদ্যমান না থাকলে পিতা অবশিষ্টাংশভোগী বা শেষভোগী হিসেবে সম্পত্তি প্রাপ্য হয়
অনুরূপভাবে মৃত ব্যক্তির অংশীদার শ্রেণীভুক্ত অন্য কোন ওয়ারিশ বিদ্যমান থাকলে, উক্ত অংশীদার শ্রেণীভুক্ত ওয়ারিশদের অংশ মিটিয়ে দেবার পরই পিতা অবশিষ্টাংশভোগী বা শেষভোগী হিসেবে সম্পত্তি প্রাপ্ত হবেন। যেমন: খায়ের একজন সুন্নী মুসলমান সে এক স্ত্রী ও পিতাকে ওয়ারিশ রেখে মৃত্যুবরণ করেছে এখন মৃত খায়ের এর সম্পত্তি বন্টন করতে হবে:

 মৃত খায়ের 
স্ত্রী ১/৪
 
পিতা ৩/৪
এক্ষেত্রে মৃত খায়ের নিঃসন্তান বিধায় তার স্ত্রী ১/৮ এর স্থলে ১/৪ অংশ প্রাপ্ত হয়েছে এবং স্ত্রী অংশীদার  শ্রেণীভুক্ত হওয়ায় তার ১/৪ অংশ মিটিয়ে দেবার পরই পিতা মৃত খায়ের এর বাকী (১ - ১/৪) = ৩/৪ অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে প্রাপ্ত হয়েছে 
৪) মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে প্রকৃত পিতামহ বা দাদার অধিকার (True Grand-Father): মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান অথবা পুত্রের সন্তান (যতই নিম্নগামী হোক না কেন) থাকলে এবং পিতা অথবা নিকটতম পিতার পিতা না থাকলে সত্যিকার পিতামহ ১/৬ অংশ পায়। এবং এরা কেউ না থাকলে সত্যিকার পিতামহ অবশিষ্টভোগী অংশ গ্রহণ করবে অর্থাত্‍‌ পিতা যে অবস্থায় যা পায় পিতামহ সে অবস্থায় তাই পাবে, কিন্তু পিতা জীবিত থাকলে পিতামহ কিছুই পাবে না যেমন:
 
  মৃত ব্যক্তি 
পিতামহ পিতা
 
পিতার অবর্তমানে পিতার  উল্লেখিত তিনটি অবস্থা পিতামহের উপর বর্তাবে  কিন্তু ৪টি  মাত্র স্থানে  পিতা ও পিতামহের কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়; যথা-
ক) পিতার মাতা পিতার সাথে থাকলে সম্পত্তি পায়না কিন্তু পিতামহের  সাথে পেয়ে থাকে 
খ) স্বামী বা স্ত্রীর সাথে পিতা ও মাতা থাকলে স্বামী বা স্ত্রীকে  দিয়ে যা অবশিষ্ট থাকে মাতা তার ১/৬ অংশ পায় কিন্তু এক্ষেত্রে  পিতার স্থলে পিতামহ থাকলে মাতা সমস্ত সম্পত্তির ১/৩ অংশ পায়
গ) সহোদর ও বৈমাত্রেয় ভাই বোনগণ পিতার সাথে বঞ্চিত হবে, কিন্তু কোন কোন ইমামের মতে  তারা পিতামহের সাথে বঞ্চিত হবে ইমাম আবু হানিফা (রঃ) এর মতে তারা পিতামহের সাথেও বঞ্চিত হবেআমরা উত্তরাধিকার বন্টনের ক্ষেত্রে উক্ত ইমাম সাহেবের মত অনুসরণ করে  থাকি
৫) মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার প্রকৃত মাতামহী/পিতামহী (নানী/দাদী) এর অধিকার (True Grand Mother): উত্তরাধিকার লাভের ক্ষেত্রে নানী/দাদীর তিনটি অবস্থা লক্ষ্য করা যায়:
ক)মৃত ব্যক্তির মাতা, নিকটতম প্রকৃত মাতামহী কিংবা নিকটতম প্রকৃত পিতামহী না থাকলে নানী ১/৬ অংশ সম্পত্তি লাভ করেন
খ) মৃত ব্যক্তির মাতা, পিতা, নিকটতম প্রকৃত মাতামহী কিংবা নিকটতম প্রকৃত পিতামহী না থাকলে  দাদী ১/৬ অংশ সম্পত্তি লাভ করেন
গ) দাদী ও নানী উভয়েই থাকরে তারা একত্রে ১/৬ অংশ সমান পাবেন। প্রকৃত পিতামহী হলেন এমন একজন পূর্বনারী যার এবং মৃত ব্যক্তির মধ্যে মাতৃ সম্পর্কীয় কোন পিতামহ মধ্যবর্তী হননা যেমন: পিতার মাতা, পিতার মাতার মাতা, পিতার পিতার মাতা, মাতার মাতা মাতার মাতার মাতা
(৬) মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার মাতার অধিকার (Mother): উত্তরাধিকার লাভের ক্ষেত্রে মাতার তিন অবস্থা হতে পারে:
ক) যদি মৃত ব্যক্তির  সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নেরই হউক, অথবা যদি পূর্ণ  বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় দুই বা ততোধিক ভাই কিংবা বোন, এমনকি একজন ভাই এবং একজন বোন থাকে, তাহলে ও ১/৬ অংশ পাবেন। যেমন:                                  
 
মৃত   ব্যক্তি
 
মাতা (১/৬) পুত্র (৫/৬)
                                       


খ) কিন্তু যেসকল ক্ষেত্রে  মাতা  ১/৩ অংশ পায় সেক্ষেত্র গুলো নীচে দেওয়া হলো:
যখন মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান অথবা পুত্রের সন্তান (যতই নিম্নগামী হোক না কেন) না থাকে,  অথবা, যখন মৃত ব্যক্তির এক ভাই অথবা এক বোন এর বেশী না থাকে কিন্তু বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, যদি মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর অথবা স্বামীর সাথে মাতা এবং পিতা থাকে, তবে সেক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রীর অংশ বাদ দেবার পর যে অংশ বাকি থাকে, মাতা তার ১/৩ অংশ পাবে প্রকৃত পিতামহী হলেন এমন একজন পূর্বনারী যার এবং মৃত ব্যক্তির মধ্যে মাতৃ সম্পর্কীয় কোন পিতামহ মধ্যবর্তী হন না যেমন: পিতার মাতা, পিতার মাতার মাতা, পিতার পিতার মাতা, মাতার মাতা মাতার মাতার মাতা
(৭) কন্যার অধিকার (daughter): মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে মৃত ব্যক্তির ঔরশজাত কন্যার অংশ বন্টনের ক্ষেত্রে তিন অবস্থায় অংশ বন্টন করা হয় যেমন-
ক) মৃত ব্যক্তির কন্যা একজন থাকলে এবং পুত্র না থাকলে সে ১/২ (অর্ধেক) ভাগ সম্পত্তি পাবে 
খ) দুই বা ততোধিক কন্যা থাকলে এবং কোন পুত্র না থাকলে তারা ২/৩ (তিন ভাগের দুই) ভাগ সমানভাগ পাবে
গ) মৃত ব্যক্তির পুত্র থাকলে কন্যা/কন্যারা অংশীদার হিসেবে সম্পত্তি না পেয়ে পুত্রের সাথে ২:১ অনুপাতে অর্থাত্‍ অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে পুত্র যা পাবে কন্যা তার অর্ধেক পাবে। কন্যা কখনো  পিতা/মাতার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয়না 
(৮) পুত্রের কন্যার (son's daughter) অথবা পুত্রের পুত্রের কন্যা অর্থাত্‍ পোত্রীর অধিকার:পুত্রের কন্যা বা পুত্রের পুত্রের কন্যা যত নিম্নের হোক এর উত্তরাধিকার আইন, ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ এর ৪ ধারার প্রভাবে পরিবর্তন হয়েছে বিধায় তা মূল মুসলিম হানাফী আইন এবং পরিবর্তিত আইন এই দুই উপ-শিরোনামে আলোচনা করা যায়
মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ এর ৪ ধারার প্রভাবে এই বঞ্চিত হওয়ার বিধান বাতিল হয়েছে। উক্ত ধারার মূল মুসলিম হানাফী আইন: মুল মুসলিম হানাফী আইন অনুসারে পুত্রের কন্যার সম্পত্তি লাভের ক্ষেত্রে চারটি অবস্থা লক্ষ্য করা যায়:
ক) মৃত ব্যক্তির পুত্র বা একাধিক  কন্যা থাকলে পুত্রের কন্যা সম্পূর্ণরূপে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়
খ) মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা না থাকলে পুত্রের কন্যা একা হলে ১/২ অংশ এবং একাধিক হলে ২/৩ অংশ সম্পত্তি পায়
গ) মৃত ব্যক্তির যদি একমাত্র কন্যা তাকে, তবে পুত্রের কন্যা একা বা একাধিক যাই থাকুক একা বা সবাই শুধুমাত্র ১/৬ অংশ পাবে একাধিক হলে এই ১/৬ অংশ সবাই সমানভাবে পাবে
ঘ) মৃত ব্যক্তির পুত্রের পুত্র থাকলে, পুত্রের কন্যা অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে তার বা তার সাথে ২:১ সম্পত্তি লাভ করবে।
পুত্রের পুত্রের কন্যা যত নিম্নের হোক পুত্রের কন্যার মত পুত্রের পুত্রের কন্যার সম্পত্তি লাভের ক্ষেত্রে ও চারটি অবস্থা লক্ষ্য করা যায়
ক) মৃত ব্যক্তির পুত্র বা একাধিক কন্যা বা নিকটতম পুত্রের পুত্র বা নিকটতম পুত্রের পুত্র বা নিকটতম পুত্রের একাধিক কন্যা থাকলে দুরবর্তী পুত্রের কন্যা উত্তরাধিকার হতে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয়
খ) মৃত ব্যক্তির পুত্র কন্যা বা নিকটতম পুত্রের পুত্র বা নিকটতম পুত্রের কন্যা না থাকলে দূরবর্তী কন্যা একা হলে ১/২ অংশ এবং একত্রে হলে সবাই ২/৩ অংশ পাবে
গ) মৃত ব্যক্তির যদি একমাত্র কন্যা বা নিকটতম পুত্রের একমাত্র কন্যা থাকে, তবে দূরবর্তী পুত্রের কন্যা এক বা একাধিক যাই থাকুক, একা বা সবাই একত্রে শুধুমাত্র ১/৬ অংশ পাবে
ঘ) পুত্রের পুত্রের কন্যার সাথে সমান স্তরে পুত্রের পুত্র থাকলে পুত্রের পুত্রের কন্যা অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে তার বা তাদের সাথে ২:১ হারে সম্পত্তি লাভ করবে একই সাথে পুত্রের পুত্র/পুত্রের কন্যা এবং পুত্রের পুত্রের পুত্র/পুত্রের পুত্রের কন্যা অবস্থান করে তখন প্রথম ব্যক্তি শেষোক্ত ব্যাক্তির তুলনায় মৃত ব্যক্তির নিকটতম পুত্রের পুত্র/পুত্রের কন্যা হিসেবে গন্য করা হয় একই সাথে যখন পুত্রের পুত্রের পুত্র ও পুত্রের পুত্রের কন্যা অবস্থান করে তখন তাদেরকে সমান স্তরের পুত্রের পুত্রের পুত্র এবং পুত্রের পুত্রের কন্যা হিসেবে উল্লেখ করা যায় 
পরিবর্তিত আইন: পুত্রের কন্যার উত্তরাধিকার আইন আলোচনা করতে গিয়ে এটি লক্ষ্য করা যায় যে, পুত্রের কিংবা একাধিক কন্যার বর্তমানে মৃত পুত্রের কন্যা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি হতে সম্পূর্নরূপে বঞ্চিত এবং শুধুমাত্র এক কন্যার বর্তমানে সে আংশিকভাবে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয় ১৯৬১ সনের মর্ম মতে বর্তমানে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন করার   আগে যার সম্পত্তি ভাগ করা হবে তার মৃত্যুর আগে তার পুত্র বা কন্যার মৃত্যু হলে, উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পত্তি বন্টন  করবার  সময় ঐ মৃত পুত্র বা কন্যা জীবিত থাকলে, যে পরিমাণ সম্পত্তি লাভ করত, তার সমান অংশ ঐ মৃত পুত্র বা কন্যার সন্তানরা লাভ করবে নীচের উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিস্কারভাবে বোঝানো হলো:
উদাহরণ- ১: বশিরের দুই পুত্র, বাদল ও জাহেদ এবং এক কন্যা জমিলা প্রথম পুত্র বাদল এক কন্যা রেখে মারা যায়। তারপর বশির মারা যায় মূল মুসলিম হানাফী আইনানুসারে  বশিরের ত্যক্ত সমস্ত সম্পত্তি জাহেদ ও কন্যা জমিলা ২:১ হারে পেত মৃতপুত্র বাদলের কন্যা  কোন সম্পত্তি পেতনা কিন্তু বর্তমান পরিবর্তিত আইনানুযায়ী বশিরের ত্যক্ত সম্পত্তি মোট ৫ ভাগ হবে এর ২/৫ অংশ জাহেদ এবং ১/৫ অংশ কন্যা জমিলা পাবে। বাকী ২/৫ অংশ মৃত পুত্রের কন্যা পাবে কারণ মৃত পুত্র বাদল বশিরের মৃত্যু আগে মারা না গেলে এই ২/৫ অংশই পেত
উদাহরণ- ২: জালালের দুই পুত্র হাশেম ও কাশেম এবং এক কন্যা সালেহা। ছালেহা এক পুত্র রেখে মারা যায়। মূল মুসলিম হানাফী আইন অনুসারে জালালের সম্পত্তি তার দুই জীবিত পুত্রের প্রত্যেকে অর্ধেক করে পেত। তার কন্যার এক পুত্র করিম সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হতো। বর্তমানে পরিবর্তিত আইন অনুযায়ী তার মৃত কন্যা ছালেহা বেঁচে থাকলে যে ১/৫ অংশ সম্পত্তি পেত তা মৃত কন্যা ছালেহার পুত্র রাশেদ পাবে 
(৯) মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার  আপন বোন বা পূর্ণ বোনের অধিকার (Full Sister): মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে মৃত ব্যক্তির  পুর্ণ বোন বা সহোদর বোন থাকলে তারা পাঁচটি অবস্থায় অংশ প্রাপ্ত হয়ে থাকে। যেমন -
ক) মৃত ব্যক্তির যদি একজন আপন বোন থাকে তাহলে সে ঐ ব্যক্তির সম্পত্তির ১/২ অংশ পাবে ।
খ) যদি দুইবা ততোধিক সহোদর বোন থাকে তাহলে তারা ঐ সম্পত্তির ২/৩ অংশ পাবে ।
গ) আপন ভাইয়ের উপস্থিতিতে আপন বোন অবশিষ্টাংশভোগী  হিসেবে ২:১ হারে সম্পত্তি পেতে পারে।
ঘ) আপন বোন মৃত ব্যক্তির সন্তান, পুত্রের সন্তান যত নীচের হোক, বা পুত্রের উপস্থিতিতে ও সে অংশীদার হতে বাদ পড়ে অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে সম্পত্তি পেতে পারে  কিন্তু ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবরিক আইনের বিধান মোতাবেক আপন বোন কোন অংশ পাবেনা। পুত্রের কন্যাই সব অংশ পাবে 
ঙ) মৃত ব্যক্তির পিতা বা দাদা বর্তমান থাকলে সহোদর বোন বঞ্চিত হবে 

(১০) মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার বৈমাত্রেয় বোনের (যেখানে পিতা একজন কিন্তু  মাতা দুইজন তাদের সন্তানগনের) অধিকার (Consanguine Sister): মুসলিম  উত্তরাধিকার আইনে মৃত ব্যক্তির বৈমাত্রেয় বোন থাকলে তার অংশ ছয়টি অবস্থায় বন্টন করা হয়ে থাকে যেমন -
ক) মৃত ব্যক্তির বৈমাত্রেয় বোন একজন থাকলে সে ১/২ অংশ প্রাপ্ত এবং একাধিক বৈমাত্রেয় বোন একত্রে ২/৩ অংশ সমানভাগে পায়
খ) মৃত ব্যক্তির বৈমাত্রেয় ভাই বর্তমান থাকলে সেক্ষেত্রে বৈমাত্রেয় বোন তার সাথে অবশিষ্টাংশভোগী বা আসাবা হবে এবং ভাই যত পাবে বোন তার অর্ধেক অংশ পাবে ২:১ হারে সম্পত্তি পায়
গ) মৃত ব্যক্তির একজন মাত্র আপন বোন থাকলে বৈমাত্রেয় বোন একজন হোক আর একাধিক হোক সবাই একত্রে ১/৬ অংশ পাবে।
ঘ) কিন্তু আপন বোন একাধিক থাকলে বৈমাত্রেয় বোন বঞ্চিত হবে যেমন:
 মৃত ব্যক্তি 
 বৈমাত্রেয় বোনআপন বোন  চাচা
২/৩১/৩
                                               
                                     
ঙ) মৃত ব্যক্তির পুত্র, পুত্রের সন্তান যত নীচের হোক, পিতা অথবা পিতার পিতা  অর্থাত্‍‌ দাদা, একাধিক আপন ভাই এর উপস্থিতিতে বৈমাত্রেয় বোন উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে
চ) মৃত ব্যক্তির কন্যা বা পুত্রের কন্যা বর্তমান থাকলে তার সাথে অবশিষ্টাংশভোগী হবে এবং অবশিষ্ট সম্পত্তি  পাবে
(১১) বৈপিত্রেয় ভাই ও বৈপিত্রেয় বোনের অধিকার: (যেখানে পিতা দুইজন কিন্তু মাতা একজন তাদের সন্তানগণ) (Uterine Brother/Sister): বৈপিত্রেয়   ভাই/বোন এর উত্তরাধিকারলাভে দুটি অবস্থা লক্ষ্য করা যায়।
ক) মৃত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা, পুত্রের পুত্র বা পুত্রের কন্যা ইত্যাদি কেউই বর্তমান না থাকলে ও একজন বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন থাকলে ও সে ১/৬  অংশ এবং একাধিক বৈপিত্রেয় ভাই/বোন একত্রে ১/৩ অংশ সমানভাবে পাবে। বৈপিত্রেয় ভাই-বোনেরা সমান  অংশ পায়। এক্ষেত্রে ভাই-বোনের অংশের অনুপাত ২:১ না হয়ে ১:১ হবে ।
খ) মৃত ব্যক্তির পুত্র, কন্যা, পৌত্র (পুত্রের পুত্র), পৌত্রী (পুত্রের কন্যা),  পিতা বা পিতার পিতা ইত্যাদি কেউ জীবিত থাকলে বৈপিত্রেয় ভাই/ বোন উত্তরাধিকার হতে বাদ পড়ে। দুটি  উদাহরণের মাধ্যমে অংশীদারদের মাঝে সম্পত্তি বন্টন প্রক্রিয়াটি পরিস্কার ভাবে বোঝা যায় ।
উদাহরণ -১: একজন সুন্নী মুসলমান তার ক) পিতা খ) মাতা এবং গ) পুত্রের কন্যাকে রেখে মারা গেলেন এই ক্ষেত্রে তার ওয়ারিশদের অংশ বন্টন নীচের প্রক্রিয়া অনুযায়ী হবে:
পিতা -১/৬, মাতা -১/৬, কন্যা -১/২, পুত্রের কন্যা -১/৬
এই  উদাহরণে সব ওয়ারিশরাই অংশীদার বা কুরানী ওয়ারিশ। ছেলেমেয়ে যেমন কন্যা এবং পুত্রের কন্যা থাকায় পিতা এবং মাতার  প্রাপ্য অংশ ১/৬ হয়েছে একজন কন্যার অংশ ১/২ অংশ একজন কন্যা থাকায় পুত্রের কন্যা ১/৬ অংশ পাবেন তবে মৃত ব্যক্তির দুইজন কন্যা থাকলে মৃত ব্যক্তির পুত্রের একজন কন্যা থাকায় পুত্রের কন্যা এক বা একাধিকই থাকুক, তার অংশ ১/৬ কমে এসেছে। এভাবে এই উদাহরণে যদিও মৃত ব্যক্তির পুত্রের কন্যা চারজন থাকতো, তবু তারা সবাই যৌথভাবে ঐ ১/৬ অংশই পেত এবং এই ৬/১ অংশই তাদের মাঝে সমানভাবে ১/২৪ অংশ ভাগ করা হতো
উদাহরণ -২: একজন সুন্নী মুসলমান তার ক) মাতা, খ) তিন জন পূর্ণ বোন গ) একজন বৈমাত্রেয় বোন (যেখানে মাতা দুইজন কিন্তু পিতা একজন তাদের সন্তানগন) এবং একজন বৈপিত্রেয় বোনকে অথবা একজন বৈপিত্রেয় ভাইকে (যেখানে পিতা দুইজন কিন্তু মাতা একজন তাদের সন্তানগন) রেখে মারা গেলএক্ষেত্রে ঐ মৃত ব্যক্তির বৈধ ওয়ারিশদের মধ্যে  সম্পত্তি  বন্টনের স্ব স্ব অংশ দেখানো হলো:
মাতা - ১/৬ অংশ (কারণ এইক্ষেত্রে একাধিক আপন বোন আছে)
৩ জন আপন বোন - ২/৩ অংশ (প্রত্যেকে ২/৩ অংশের ১/৩ অংশ করে)
১ জন বৈমাত্রেয় বোন - একাধিক আপন বা পূর্ণ বোন দ্বারা উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন
বৈপিত্রেয় বোন বা বৈপিত্রেয় ভাই -১/৬ অংশ
এইক্ষেত্রে সম্পত্তির মোট অংশ হলো ১/৬+২/৩+১/৬ = ৬/৬ =১ অর্থাত্‌ এখানেই সম্পত্তি শেষ হওয়ায় সম্পত্তি বন্টন ও শেষ হবে



মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে স্বীকৃত উত্তরাধিকারীদের অধিকারের বিভিন্ন  লঙ্ঘন ও প্রতিকারসমুহ:

      
১. সম্পত্তি বেদখল
[ কি ]
[কিভাবে হয়]
[ সংষ্লিষ্ট আইন ও ব্যাখা]
[কোথায় যেতে হবে ]
[কারা সাহায্য করবে ]

২. নারী অংশীদারদের বঞ্চিতকরণ
[ কি ]
[কিভাবে হয়]
[ সংষ্লিষ্ট আইন ও ব্যাখা]
[কোথায় যেতে হবে ]
[কারা সাহায্য করবে ]
৩. মৃত ওয়ারিশদের
সন্তানদের বা এতিমদের বঞ্চিতকরন
[ কি ]
[কিভাবে হয়]
[ সংষ্লিষ্ট আইন ও ব্যাখা]
[কোথায় যেতে হবে ]
[কারা সাহায্য করবে ] 
৪. দলিল জালিয়াতি
[ কি ]
[কিভাবে হয়]
[ সংষ্লিষ্ট আইন ও ব্যাখা]
[কোথায় যেতে হবে ]
[কারা সাহায্য করবে ]
৫.জমির খতিয়ান রদবদল
[ কি ]
[কিভাবে হয়]
[ সংষ্লিষ আইন ও ব্যাখা]
[কোথায় যেতে হবে ]
[কারা সাহায্য করবে ]
৬. জমির দাগ রদবদল
[ কি ]
[কিভাবে হয়]
[ সংষ্লিষ্ট আইন ও ব্যাখা]
[কোথায় যেতে হবে ]
[কারা সাহায্য করবে ]
৭.মানসিক  ভারসাম্যহীন লোককে বঞ্চিতকরণ
[ কি ]
[কিভাবে হয়]
[ সংষ্লিষ্ট আইন ও ব্যাখা]
[কোথায় যেতে হবে ]
[কারা সাহায্য করবে ]
৮. সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় ভুল ব্যাখা
[ কি]
[ কখন হয়]
[ সংষ্লিষ্ট আইন ও ব্যাখা]
[কোথায় যেতে হবে ]
[কারা সাহায্য করবে ]
৯.ধর্মের পার্থক্য
 [ কি]
[ কেন করতে হয় ]
[ সংষ্লিষ্ট আইন ও ব্যাখা]
[কোথায় যেতে হবে ]
[কারা সাহায্য করবে ]
[ উলে­খযোগ্য কোন সিদ্বান্ত ]

               
  

সম্পত্তি বেদখল


সম্পত্তি বেদখল কি:
সম্পত্তি  বেদখল বলতে বোঝায় প্রকৃত মালিককে তার  মালিকানা থেকে জোর করে  উচ্ছেদ করে অবৈধভাবে সেখানে তার স্বত্তা প্রতিষ্ঠিত করা।
সম্পত্তি বেদখল কিভাবে হয়: জমি জমা ভোগ দখলে রাখার আশা মানুষের চিরকালের। তাই জমির দখল নিয়ে সব সময়ই সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। অসাধু দাঙ্গাটে প্রকৃতির লোকেরা   প্রায়ই লোকজনকে জোরপুর্বক বা  চাতুরী পন্থায় ভুমি হতে বেদখল করছে।

করণীয় কী:
ভুমি হতে বেদখল হলে দখল পুনরুদ্বারের জন্য যে সমস্ত প্রতিকার আছে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো:

সালিশের মাধ্যমে: কোন ব্যক্তির জমি বেদখল হলে তার গ্রামের স্থানীয় লোকদের নেতৃত্বে সালিশের মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তি তার জমি ফেরত পেতে পারেন । সালিশে মীমাংসার মাধ্যমে উভয়  পক্ষের মধ্যে সমাধান করা হয়ে থাকে ।

ফৌজদারী আদালতে মামলা:
কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি হতে বেদখল হওয়ার ২ মাসের মধ্যে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে বেদখল করার চেষ্টা হতে বিরত করার জন্য বা সম্পত্তিতে ঐ ব্যক্তির প্রবেশ বারিত করে আদেশ প্রদানের জন্য ১ম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট এর আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারার বিধান অনুসারে মামলা করতে পারবেন। এ ধরনের  মামলা অল্প সময়ের মধ্যেই নিস্পত্তি হয়ে থাকে। [ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫ ধারা বিস্তারিত জানতে  ক্লিক করুন]

দেওয়ানী আদালতে মামলা:

১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এর ঌ ধারার বিধান হলো যিনি ভুমি হতে বেদখল হয়েছেন তাকে বেদখল হওয়ার তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে মধ্যে দখল পুনরুদ্বারের দাবিতে দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে হবে । ৬ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে মামলা তামাদি দোষে বারিত হবে । এভাবে ৯ ধারায় মামলা করে আদালতের মাধ্যমে দখল পুনরুদ্বার করা যায়।
বাদী যদি সম্পত্তিতে নিজের স্বত্ব (মালিকানা) প্রমাণে সমর্থ নাও হন কেবল বেদখল হওয়ার পুর্ব পর্যন্ত দখলে থাকা প্রমাণ করতে পারেন তবেই তিনি তার পক্ষে ডিক্রী পেতে পারেন ।সুনির্দিষ্ট প্রতিকার  আইনের ৯ ধারা  মতে প্রদত্ত ডিক্রী বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বা রিভিউ করার কোন বিধান নেই ।তবে  মহামান্য হাইকোর্টে  রিভিশন করা যাবে। কিন্ত সরকার  কর্তৃক বেদখল হলে এ আইনে কোন প্রতিকার পাওয়া যাবে না।

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭ এর ৮, ৯ ও ৪২ ধারাসমুহ  এবং ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারাসমুহ:

ধারা ৮। সুনির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার:
সুনির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির দখলের অধিকারী ব্যক্তি দেওয়ানী কার্যবিধি অনুযায়ী উহা নির্ধারিত পন্থায় পুনরুদ্ধার করতে পারে।

বিশ্লেষণ:
১। ধারাটি প্রতিপাদ্য বিষয়:
ধারা ৮ এর প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় হলো যদি কোন ব্যক্তি দখলভুক্ত কোন স্থাবর সম্পত্তির দখল চুত্য বা দখল হারিয়ে ফেলে তবে সে ব্যক্তি দেওয়ানী কার্যবিধির বিধান মোতাবেক তা উদ্ধার করতে পারবে ।

২। দখল কি:
দখল বলতে সাধারণত কোন কিছুর উপর নিয়ন্ত্রণকে বুঝায়। এ ধারার দখল বলতে বর্তমান দখলকেই নির্দেশ করা হয়েছে। দখল প্রত্যক্ষ হয়ে থাকে। তবে এমন সম্পত্তি আছে স্পর্শত দখল করা যায় না। যেমন ব্যবসায়ের সুনাম।

এতদ্ব্যতীত দখলের আবার দু'টি দিক রয়েছে-(ক) অবয়বগত বা দেহের অধিকার এবং (খ) মনের ইচ্ছা। যেমন শহরে বসবাসকারী ব্যক্তির গ্রামের বাড়ীর সম্পত্তির দখল। এখানে উক্ত জমির উপর ব্যক্তির মনের অধিকার রয়েছে। কোন সম্পত্তির উপর যদি কোন মনের অধিকার না থাকে তবে তা দখলভুক্ত নহে। দৈহিক দখল না থেকেও যদি মনের দখল থাকে, তবে তা দখলভুক্ত বলে বিবেচিত হয়। অন্যের জমির উপর দিয়ে যাওয়া রাস্তায় আপনি হাঁটেন, অথচ উক্ত জমির মালিক আপনি নন। এক্ষেত্রে আপনি উহার মালিক নন।
  
ধারা ৯। স্থাবর সম্পত্তির দখল চুত: ব্যক্তি কর্তৃক মামলা যথাযথ আইনগত পন্থা ব্যতিরেকে যদি কোন ব্যক্তি তার অসম্মতিতে স্থাবর সম্পত্তির দখল চুত্য হয়, তবে সে অথবা তা মাধ্যমে দাবিদার কোন ব্যক্তি মামলার মাধ্যমে তার দখল পুনরুদ্ধার করতে পারে, যদিও তেমন মামলায় অপর কোন স্বত্ব খাড়া করা হতে পারে, তথাপিও।

এই ধারার কোন কিছুই তেমন সম্পত্তির ব্যাপারে নিজের স্বত্ব প্রতিষ্ঠা এবং তার দখল পুনরুদ্ধার করার জন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক মামলা দায়েরের পথে প্রতিবন্ধকতা হবে না।
তামাদি: দখল চুত্যির ১২ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা করতে হবে।

ধারাটির মূল বক্তব্য:
ধারা-৯ এর মূল বক্তব্য হলো আইনগত পন্থা ছাড়া দখলচুত্য ব্যক্তি সম্পত্তিতে তার কোন স্বত্ব থাক বা না থাক, উক্ত দখলচুত্য স্থাবর সম্পত্তির দখল উদ্ধারের জন্য মোকদ্দমা দায়েরের মাধ্যমে তা উদ্ধার করতে পারে। তবে সম্পত্তিতে প্রকৃত স্বত্ববান ব্যক্তির স্বত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য মামলা দায়েরে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকে না।

সরকারের ক্ষেত্রে এ ধারার কোন প্রয়োগযোগ্য নেই। আদালত যে আদেশ দেবে তার বিরুদ্ধে আপীল বা পুনর্বিবেচনার আবেদন করা যাবে না।

ধারা-৪২। মর্যাদা বা অধিকার ঘোষণা সম্পর্কে আদালতের ইচ্ছাধীন ক্ষমতা।- আইনানুগ পরিচয় কিংবা কোন সম্পত্তির স্বত্বের অধিকারী কোন ব্যক্তি এমন যে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে পারে যে, তেমন মর্যাদা বা অধিকারের ব্যাপারে তার স্বত্ব অস্বীকার করেছে কিংবা অস্বীকার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, এবং আদালত তার ইচ্ছাধীন এবং তেমন মামলায় আরও কোন প্রতিকার দাবি করা বাদীর জন্য আবশ্যক নয়।
তেমন ঘোষণার সাথে প্রতিবন্ধকতা- তবে শর্ত থাকে যে, যেখানে দাবি কেবলমাত্র স্বত্বের ঘোষণা ছাড়াও আরও প্রতিকার দাবি করতে সমর্থ, কিন্তু তা করা হতে বিরত থাকে, সেখানে আদালত তেমন ঘোষণা প্রদান করবেন না।

ব্যাখ্যা।- একটি সম্পত্তির জিম্মাদার এমন একটি স্বত্ব অস্বীকার করতে আগ্রহী ব্যক্তি, যে জীবিত নয় এমন এক ব্যক্তির স্বত্বের প্রতিকূল এবং যদি সে বেঁচে থাকত, তবে সে তার জন্য একজন জিম্মাদার হতো।

ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮
ধারা ১৪৫। জমি প্রভৃতি সংক্রান্ত বিরোধের ফলে শাস্তিভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকিলে উহার ক্ষেত্রে:

যখন কোন মেট্টোপলিটান ম্যাজিষ্ট্রেট, জিলা ম্যাজিষ্ট্রেট, মহকুমা ম্যাজিষ্ট্রেট বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট পুলিস রিপোর্ট বা অন্য কোনরূপ সংবাদ পাইয়া এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, তাঁহার অধিক্ষেত্রের স্থানীয় সীমার মধ্যে জমি বা পানি বা উহার সীমানা সম্পর্কে এমন একটি বিরোধ রহিয়াছে, যাহা শান্তিভঙ্গ ঘটাইতে পারে, তখন তিনি তাঁহার এইরূপ সন্তুষ্ট হওয়ার কারণ উল্লেখ করিয়া তাঁহার দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে ব্যক্তিগতভাবে বা উকিলের মারফত তাঁহার আদালতে হাজির হওয়ার এবং বিরোধের বিষয়বস্তুতে প্রকৃত দখল সম্পর্কে তাহাদের স্ব-স্ব দাবি সম্বন্ধে লিখিত বিবৃতি পেশ করিবা নির্দেশ দিয়া একটি লিখিত আদেশ দিবেন।
 এই ধারার উদ্দেশ্যে জমি বা পানি বলিতে দালান, বাজার, মত্স খামার, ফসল বা জমিতে উত্‍‌পন্ন অন্যান্য দ্রব্য এবং এইরূপ কোন সম্পত্তির খাজনা বা লভ্যাংশও অন্তর্ভূক্ত।
ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশক্রমে এইরূপ ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণের উপর আদেশের একটি নকল, এই বিধিতে সমন জারির জন্য বিহিত পদ্ধতিতে জারি করিতে হইবে এবং অন্ততপক্ষে একটি নকল বিরোধের বিষয়বস্তুতে বা উহার নিকটে কোন প্রকাশ্য স্থানে লটকাইয়া দিয়া জারি করিতে হইবে।
দখল সম্পর্কে ইনকোয়ারী অতঃপর ম্যাজিষ্ট্রেট, বিষয়টির ন্যায়-অন্যায় বা বিরোধের বিষয়বস্তুতে উক্ত পক্ষসমূহের কাহারও দখলের অধিকারের দাবির প্রসঙ্গ না তুলিয়া, পেশকৃত বিবৃতিসমূহ পাঠ করিবেন, পক্ষসমূহের বক্তব্য শ্রবণ করিবেন, তঁাহারা যে সাক্ষ্য প্রমাণ হাজির করে তাহা গ্রহণ করিবেন, এইরূপ সাক্ষ্য প্রমাণের ফলাফল বিবেচনা করিবেন, প্রয়োজন মনে করিলে তিনি অতিরিক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ (যদি থাকে) গ্রহণ করিবেন এবং সম্ভব হইলে উপরিউক্ত আদেশের তারিখে কোন পক্ষ বিরোধীয় বিষয়বস্তুতে দখলকার ছিলেন কিনা, এবং কোন পক্ষ দখলকার ছিলেন তাহা স্থির করিবেন।
তবে শর্ত থাকে যে, ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত আদেশের তারিখের অব্যবহিত পূর্ববর্তী দুই মাসের মধ্যে কোন পক্ষকে বলপূর্বক ও অন্যায়ভাবে বেদখল করা হইয়াছে, তাহা হইলে তিনি এরূপ বেদখল পক্ষকে উক্ত তারিখ দখলকার ছিলেন বলিয়া গণ্য করিতে পারিবেন।
তবে আরও শর্ত থাকে যে ম্যাজিষ্ট্রেট যদি ঘটনাটিকে জরুরী বলিয়া মনে করেন, তাহা হইলে এই ধারা অনুসারে তাঁহার সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে যেকোন সময় এই বিষয়বস্তু ক্রোক করিতে পারেন।
এই ধারায় যাহাই থাকুক না কেন, উক্তরূপে হাজির হওয়ার নির্দেশপ্রাপ্ত কোন পক্ষ বা অন্য কোন স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রমাণ করিতে পারিবেন যে, উক্তরূপ কোন বিরোধের অস্তিত্ব নাই বা ছিল না; এবং এইরূপ ক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেট তঁাহার পূর্বোক্ত আদেশ বাতিল করিবেন এবং পরবর্তী সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখিবেন, তবে এইরূপ বাতিলকরণ সাপেক্ষে ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক ১ উপধারা অনুসারে প্রদত্ত আদেশ চূড়ান্ত বলিয়া বিবেচিত হইবে।
       (ক) আইনানুগভাবে উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত
       (খ) দখলকারের দখল অব্যাহত
      (গ) ম্যাজিষ্ট্রেট যদি সিদ্ধান্ত করেন যে, পক্ষসমূহের মধ্যে এক পক্ষ বিরোধীয় বিষয়বস্তুতে দখলকার ছিলেন বা উপধারার প্রথম শর্ত অনুসারে তাহাকে উক্ত বিষয়বস্তুতে দখলকার বলিয়া গণ্য করা উচিত, তাহা হইলে তিনি একটি আদেশ দ্বারা সেই পক্ষকে আইন অনুসারে যথাযথভাবে উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত দখলের অধিকারী বলিয়া ঘোষণা করিবেন এবং এইরূপ উচ্ছেদ না পাওয়া পর্যন্ত উক্ত দখলের প্রতি সকল প্রকার বিঘ্ন সৃষ্টি নিষিদ্ধ করিবেন এবং তিনি যখন ৪ উপধারার প্রথম শর্ত অনুসারে অগ্রসর হন, তখন তিনি বলপূর্বক ও অন্যায়ভাবে বেদখল পক্ষকে দখল প্রত্যর্পণ করিতে পারেন।
      (ঘ) এইরূপ কোন কার্যক্রমের কোন পক্ষ যখন মারা যায় তখন ম্যাজিষ্ট্রেট মৃত পক্ষের আইনসঙ্গত প্রতিনিধিকে কার্যক্রমের পক্ষ করাইতে পারিবেন এবং অতঃপর তিনি অনুসন্ধান চালাইয়া যাইবেন এবং মৃত পক্ষের আইনসঙ্গত প্রতিনিধি সম্পর্কে যদি কোন প্রশ্ন উঠে তাহা হইলে মৃত পক্ষের প্রতিনিধি বলিয়া দাবিদার সকল ব্যক্তিকে কার্যক্রমের পক্ষ করিতে হইবে।
ম্যাজিষ্ট্রেট যদি মনে করেন যে, এই ধারা অনুসারে তাহার বিবেচনাধীন কোন কার্যক্রমের বিষয়বস্তু, কোন সম্পত্তির ফসল বা অন্য কোন উত্‍পন্ন দ্রব্য দ্রুত ও স্বাভাবিকভাবে ক্ষয়শীল, তাহা হইলে তিনি উক্ত সম্পত্তির যথাযথ হেফাজত বা বিক্রয়ের জন্য আদেশ দিতে পারিবেন এবং অনুসন্ধান সমাপ্ত হওয়ার পর উক্ত সম্পত্তি বা উহার বিক্রয়লব্ধ অর্থ  বিলি-বন্টনের জন্য তিনি যেরূপ উপযুক্ত বিবেচনা করেন, সেইরূপ আদেশ দিবেন।
ম্যাজিষ্ট্রেট উপযুক্ত বলিয়া মনে করিলে এই ধারা অনুসারে পরিচালিত কোন কার্যক্রমের যেকোন পর্যায়ে যেকোন পক্ষের আবেদনক্রমে কোন সাক্ষীকে হাজির হওয়ার বা কোন দলিল বা বস্তু হাজির করিবার নির্দেশ দিয়া সমন করিতে পারিবেন।
এই ধারায় কোন বিধান ম্যাজিষ্টেটের ১০৭ ধারা অনুসারে অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা ব্যাহত করে বলিয়া গণ্য করা যাইবে না।

এ ছাড়াও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সাহায্য নিতে পারেন যারা বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা প্রদান করে থাকে।

আইনগত সহায়তা প্রদানকারী মানবাধিকার সংগঠন:
১) ব্লাষ্ট অর্থাত্‍ বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট, ১৪১/১, সেগুনবাগিচা, ঢাকা -১০০০
 ফোন- ৮৩১৭১৮৫ , ৯৩৪৯১২৬।
২) বাঁচতে শেখা,  শহীদ মশিউর রহমান রোড, আরবপুর,যশোর  ফোন - ০৪২১ ৬৬৪৩৬,৭৩২৩৮]।
৩) মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশেন নতুন শহর, মাদারীপুর, ফোন - ০৬৬১ ৫৫৫১৮, ৫৫৬১৮]।



নারী অংশীদারদের বঞ্চিতকরণ:


কিভাবে বঞ্চিত হয়:
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে নারীদের উত্তরাধিকার স্বীকৃত থাকলেও পুরুষ উত্তরাধিকার কর্তৃক তারা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।নিম্নলিখিত ভাবে নারী তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন ।
মৃত ব্যক্তির পুত্র দ্বারা কন্যা অংশীদারদের বঞ্চিতকরণ: আমাদের দেশে  সাধারণত পিতা মারা গেলে তার কন্যাদেরকে ভিটাবাড়িসহ জায়গা - জমিতে তাদের অধিকার নেই বুঝিয়ে পুত্ররা অনেক সময় সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করে। আবার কন্যারা বিবাহিত হলেও তারা পিতার কাছ থেকে কোন সম্পত্তি পাবেনা মর্মে বোঝানো হয়। এসব ক্ষেত্রে পুত্ররা অনেকটা জোর দেখিয়ে কন্যাদের পিতার কাছে প্রাপ্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে ।

বিধবা স্ত্রীকে বঞ্চিতকরণ: 
মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান এমন নীচের বংশধর থাকাকালে, স্ত্রী এক বা একাধিক থাকলে একক বা সমষ্টিগতভাবে তার মৃত স্বামীর সম্পত্তির ১/৮ অংশ পাবেন তবে মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তান এমন নীচের দিকে কেউ না থাকে স্ত্রী এক বা একাধিক থাকলে একক বা সমষ্টিগতভাবে ১/৪ অংশ পাবেন । তবে এক্ষেত্রে বিধবা স্ত্রীকে তার স্বামীর উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করে তার স্বামীর অপরাপর অংশীদারেরা। তখন বিধবা স্ত্রী একজন কোরানিক অংশীদার হয়েও তার মৃত স্বামীর অংশ থেকে বঞ্চিত হন।

সংশ্লিষ্ট আইন ও প্রতিকার: মুসলিম পুরুষের মতই একজন নারী  সম্পত্তি অর্জন করতে পারে, সেজন্য মুসলিম আইনে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা রয়েছে:

মুসলিম উত্তরাধিকার সুত্রে: 
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার কন্যার অধিকার (daughter):
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে মৃত ব্যক্তির ঔরশজাত কন্যার অংশ বন্টনের ক্ষেত্রে তিন অবস্থায় অংশ বন্টন করা হয়। যেমন -
 ক) মৃত ব্যক্তির কন্যা একজন থাকলে এবং পুত্র না থাকলে সে ১/২ (অর্ধেক) ভাগ সম্পত্তি পাবে।
খ) দুই বা ততোধিক কন্যা থাকলে এবং কোন পুত্র না থাকলে তারা ২/৩ (তিন ভাগের দুই) ভাগ সমানভাগে পাবে ।
গ) মৃত ব্যক্তির পুত্র থাকলে কন্যা/কন্যারা অংশীদার হিসেবে সম্পত্তি না পেয়ে  পুত্রের সাথে ২:১ অনুপাতে অর্থাত্‍ অবশিষ্টাংভোগী হিসেবে পুত্র যা পাবে কন্যা তার অর্ধেক পাবে। কন্যা কখনো পিতা/মাতার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয়না ।
স্বামীর সম্পত্তিতে বিধবা স্ত্রীর অধিকার: (Wife): মৃত ব্যক্তির স্ত্রী একজন থাকুক আর একাধিক থাকুক তাদের সম্পত্তি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দুটি অবস্থা উল্লেখ করা যায়; যথা -
ক) মৃত ব্যক্তির সন্তান সন্ততি বা তার নীচে কেউ না থাকলে স্ত্রী ১/৪ অংশ পাবে।
খ) অপরদিকে মৃত ব্যক্তির সন্তান সন্ততি বর্তমান থাকলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী ১/৮ অংশ পাবে। আর যদি মৃত ব্যক্তির একাধিক বিধবা স্ত্রী থাকে, তবে সব বিধবা স্ত্রীরাই উপরোক্ত ১/৪ বা ১/৮ অংশ হতে যেরকমই হয়, সমান হারে তাদের অংশ ভাগ করে পাবে।

বিবাহের দেনমোহরদেনমোহর হচ্ছে কিছু টাকা, গহণা বা অন্য কোন সম্পত্তি যা একজন মুসলিম মহিলা বিবাহের সম্মান স্বরূপ স্বামীর কাছে পাওয়ার অধিকারী হন। দেনমোহর সূত্রে সম্পত্তি অর্জন বিষয়ে বলা হয়েছে, যেহেতু দেনমোহর নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা অন্য কোন সম্পত্তি এবং একজন স্বামী স্ত্রীকে সণ্মান দেখিয়ে বিবাহ চুক্তির ফলশ্রুতিতে দেনমোহর দিতে বাধ্য। তাই একজন মুসলিম মহিলা দেনমোহর হিসেবে সম্পত্তি অর্জনের অধিকারী। একজন মুসলিম বিধবা স্বামীর সম্পত্তি হতে দেনমোহর বাবদ প্রাপ্য অর্থ আদায় করতে পারেন।
এ ছাড়াও দান এবং উইলসূত্রেও একজন নারী সম্পত্তির অধিকার পায়।
গণপ্রজাতন্ত্রী  বাংলাদেশের  সংবিধানে ৪২(১) ধারায় বলা আছে আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা নিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও অন্যভাবে বিলি- ব্যবস্থা করিবার অধিকার থাকিবে এবং আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়াত্ত বা দখল করা যাইবেনা।
কাজেই নাগরিক হিসেবে একজন নারীরও একজন পুরুষের মতই সম্পত্তিতে অধিকার রয়েছে।

ভুমি হতে বেদখল হলে কোন মহিলা, দখল পুনরুদ্বারের জন্য যে সমস্ত প্রতিকার আছে তা নিম্নে তুলে ধরা হলো:

সালিশের মাধ্যমে
আদালতে মামলা করার মাধ্যমে

সালিশের মাধ্যমে: 
কোন মহিলা জমি হতে বেদখল হলে তার গ্রামের স্থানীয় লোকদের সহায়তায় সালিশের মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তি তার জমি ফেরত পেতে পারেন । সালিশে মীমাংসার মাধ্যমে উভয়  পক্ষের মধ্যে সমাধান করা হয়ে থাকে ।

ফৌজদারী আদালতে মামলা:
কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি হতে বেদখল হওয়ার ২ মাসের মধ্যে তিনি উক্ত ব্যক্তিকে বেদখল করার চেষ্টা হতে বিরত করার জন্য বা সম্পত্তিতে ঐ ব্যক্তির প্রবেশ বারিত করে আদেশ প্রদানের জন্য ১ম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট এর আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারার বিধান অনুসারে মামলা করতে পারবেন। এ ধরনের  মামলা অল্প সময়ের মধ্যেই নিস্পত্তি হয়ে থাকে।
[ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৫ ধারা  বিস্তারিত জানতে  ক্লিক করুন]

দেওয়ানী আদালতে মামলা:

১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এর ঌ ধারার বিধান হলো যিনি ভুমি হতে বেদখল হয়েছেন তাকে বেদখল হওয়ার তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে মধ্যে দখল পুনরুদ্বারের দাবিতে দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে হবে । ৬ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে মামলা তামাদি দোষে বারিত হবে । এভাবে ৯ ধারায় মামলা করে আদালতের মাধ্যমে দখল পুনরুদ্বার করা যায়।
বাদী যদি সম্পত্তিতে নিজের স্বত্ব (মালিকানা) প্রমাণে সমর্থ নাও হন কেবল বেদখল হওয়ার পুর্ব পর্যন্ত দখলে থাকা প্রমাণ করতে পারেন তবেই তিনি তার পক্ষে ডিক্রী পেতে পারেন ।সুনির্দিষ্ট প্রতিকার  আইনের ৯ ধারা  মতে প্রদত্ত ডিক্রী বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বা রিভিউ করার কোন বিধান নেই । তবে  মহামান্য হাইকোর্টে  রিভিশন করা যাবে। কিন্ত সরকার  কর্তৃক বেদখল হলে এ আইনে কোন প্রতিকার পাওয়া যাবে না।

সম্পত্তিতে যার বৈধ মালিকানা স্বত্ব আছে তিনি কোন কারণে বেদখল হলে, বেদখল হওয়ার ১২ বছরের মধ্যে [তামাদি আইন বা Limitation Act, 1908১৮৭৭   সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ধারা মতে দেওয়ানী আদালতে মামলা করে সম্পত্তির দখল পুনরুদ্বার করতে পারেন। 
তবে কোন ব্যক্তির জমির স্বত্ব যদি অস্বীকার করা হয় সেক্ষেত্রে সে ৪২ ধারায় মামলা করে এর  প্রতিকার চাইতে পারেন।

[সুনির্দিষ্ট  প্রতিকার  আইনের ৮, ৯ ও ৪২ ধারাসমুহ  এবং তামাদি আইনের  ধারাসমুহ  বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন]

এ ছাড়াও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সাহায্য নিতে পারেন যারা বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা প্রদান করে থাকে।

আইনগত সহায়তা প্রদানকারী মানবাধিকার সংগঠন:
১) ব্লাষ্ট অর্থাত্‍ বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট, ১৪১/১, সেগুনবাগিচা, ঢাকা -১০০০
 ফোন- ৮৩১৭১৮৫ , ৯৩৪৯১২৬।
২) বাঁচতে শেখা,  শহীদ মশিউর রহমান রোড, আরবপুর,যশোর । ফোন - ০৪২১ ৬৬৪৩৬,৭৩২৩৮]।
৩) মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশেন নতুন শহর, মাদারীপুর, ফোন - ০৬৬১ ৫৫৫১৮, ৫৫৬১৮]।



মৃত ওয়ারিশদের সন্তানদের বা এতিমদের বঞ্চিতকরন:


কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার আগে তার পুত্র কিংবা কন্যা সন্তান মারা গেলে সেই পুত্র বা কন্যার সন্তানেরা মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হতো।
মূল মুসলিম হানাফী আইনে যদি কোন ব্যক্তির মৃত্যুর আগে তার ওয়ারিশেরা অর্থাত্‍ (ছেলেমেয়ে) মারা যায় তবে সেই ব্যক্তির মৃত্যু পর তার ওয়ারিশদের সন্তানরা তাদের বাবা-মা যেই সম্পত্তি পেত তা অন্য ওয়ারিশদের ভাগ করে দেওয়া হতো ।

সংশ্লিষ্ট আইন ও প্রতিকার:
মুসলিম ও পারিবারিক  আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১: এই অধ্যাদেশের ৪ ধারায় মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশেরা তার আগে মারা গেলে তার সন্তানেরা যাতে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য ১৯৬১ সনের ১৫ জুলাই  এই অধ্যাদেশ  বলবত্‍ হয়েছে।
এই অধ্যাদেশের ৪ ধারার বিধান অনুযায়ী- উত্তরাধিকার আরম্ভ হওয়ার পূর্বে মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র বা কন্যার মৃত্যু ঘটিলে সেই উত্তরাধিকার আরম্ভ হওয়ার কালে উক্ত পুত্র বা কন্যার জীবিত সন্তানগণ যদি কেহ থাকে, ক্ষেত্রমতে, উক্ত পুত্র বা কন্যা জীবিত থাকলে যা পেত, তার সমান অংশ শাখা বা মওজুদ অনুযায়ী লাভ করিবে ।

ধারার উদ্দেশ্য: যেসকল দুর্ভাগা সন্তানদের পিতা বা মাতা, পিতামহ কিংবা মাতামহের জীবদ্দশায় মারা গেছেন, তাদের দুর্ভোগ উপশম করাই অত্র ধারার মূল উদেদ্দশ্য।

ধারার আওতা ও প্রয়োগ: এই  ধারা প্রয়োগের পূর্ব শর্ত হলো, মৃত ব্যক্তির ছেলে কিংবা মেয়েকে উত্তরাধিকার শুরু হওয়ার আগেই ইন্তেকাল করে থাকতে হবে। অন্যথায়, এই ধারার প্রয়োগ চলবে না।
১৯৬১ সনের ১৫ ই জুন হতে উত্তরাধিকার শুরু হলে, এই ধারায় বর্ণিত প্রতিনিধিত্বের নীতি কার্যকর। যদি মৃত ব্যক্তির ছেলে কিংবা মেয়ে উত্তরাধিকার শুরু হওয়ার আগেই মারা গিয়ে থাকে এবং একই সাথে এই অধ্যাদেশ বলবত্‍ হয়ে থাকে, তবে ৪ ধারার বিধান, এর পূর্ন শক্তিতে প্রযোজ্য হবে এবং মৃত ব্যক্তির প্রাক - মৃত ছেলে বা কন্যার সন্তানগণ মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারীর শ্রেণীভুক্ত হয়ে অংশীদার হবে।

মওজুদ অনুযায়ী বন্টন: এই অধ্যাদেশে মূল ব্যক্তির  মৃত্যুকালীন সময়ে রেখে যাওয়া সম্পত্তির মওজুদের উপর সমষ্টিগতভাবে উত্তরাধিকারীদের  মধ্যে বন্টনের নীতিকে গ্রহণ করা হয়েছে।

বিষয়টি একটি উদাহরণের মাধ্যমে পরিষ্কার করা যায় ।
'কালাম' ১৯৮০ সনের ১ লা মার্চ মারা গেলেন। মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে 'ফরিদ' এবং  দুই নাতি 'জালাল' ও 'সালাম' কে রেখে গেলেন। জালাল' এবং 'সালাম' এর পিতা হাবিব যিনি কালামের এর বড় ছেলে। হাবিব ১৯৭৮ সনের ১ লা জানুয়ারী মারা গেছেন। প্রচলিত মুসলিম হানাফী আইনের বিধান অনুসারে জালাল এবং সালাম তাদের দাদা কালাম এর সম্পত্তিতে কোন আংশ পেত না। কিন্তু বর্তমানে মুসলিম ও পারিবারিক  আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ এর ৪ ধারার বিধান অনুসারে হাবিব যা পেত,  জালাল ও সালাম তা পাবে অর্থাত্‍ তারা তাদের দাদার সম্পত্তির  অর্ধেক পাবে ।
                   
আরেকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হলো
মুসলিম সুন্নী (হানাফী) আইনের বিধান অনুসারে যখন মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র সন্তান না থাকে, কিন্তু তিনি ১টি কন্যা ও পুত্রের কন্যা রেখে মারা যান, সেক্ষেত্রে তার নিজ কন্যা ১/২ অংশ এবং পুত্রের কন্যা ১/৬ অংশ পাবে। কিন্তু মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুযায়ী তার নিজ কন্যা ১/৩ অংশ এবং মৃত পুত্রের কন্যা ২/৩ অংশ সম্পত্তি পাবে।

 এ ছাড়াও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সাহায্য নিতে পারেন যারা বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা প্রদান করে থাকে।

আইনগত সহায়তা প্রদানকারী মানবাধিকার সংগঠন:
১) ব্লাষ্ট অর্থাত্‍ বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট, ১৪১/১, সেগুনবাগিচা, ঢাকা -১০০০
 ফোন- ৮৩১৭১৮৫ , ৯৩৪৯১২৬।
২) বাঁচতে শেখা,  শহীদ মশিউর রহমান রোড, আরবপুর,যশোর । ফোন - ০৪২১ ৬৬৪৩৬,৭৩২৩৮]।
৩) মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশেন নতুন শহর, মাদারীপুর, ফোন - ০৬৬১ ৫৫৫১৮, ৫৫৬১৮]।

দলিল জালিয়াতি


দলিল জ্বালিয়াতি কি ও কিভাবে হয়: একজন মৃত ব্যক্তির একাধিক ওয়ারিশ থাকতে পারে । কিন্তু সেই ওয়ারিশদের বঞ্চিত করার জন্য পাশ্ববর্তী প্রতিবেশী অথবা স্থানীয়  প্রভাবশালী  লোকেরা নিজের নামে দলিল তৈরী করে প্রকৃত ওয়ারিশদের মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তাদের অধিকার  থেকে বঞ্চিত করে থাকে।

সংশ্লিষ্ট আইন ও প্রতিকার:

ধারা : ৪৬৩। দন্ডবিধির  ৪৬৩ ধারা অনুসারে, যদি কোন ব্যক্তি জনসাধারণের বা কোন ব্যক্তি বিশেষের ক্ষতিসাধনের কিংবা কোন দাবি বা স্বত্ব প্রতিষ্ঠার কিংবা কোন ব্যক্তিকে তাহার সম্পত্তি ত্যাগে প্রকাশ্য বা অনুক্ত  চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য করিবার কিংবা কোন প্রতারণা বা যাহাতে প্রতারণা সংঘটিত হইতে পারে, তাহার উদ্দশ্য কোন মিথ্যা দলিল বা দলিলের অংশবিশেষ প্রনয়ণ করে, তবে উক্ত ব্যক্তি জ্বালিয়াতি করিয়াছে বলিয়া গন্য হইবে।
বিশ্লেষণ: দলিলটি যদি সম্পুর্ণ বা আংশিক মিথ্যাভাবে তৈরি করা না হয় তাহলে একে জ্বালিয়াতি বলা যাবেনা। সম্ভাব্য জ্বালিয়াতি সংঘটনের প্রস্তুতিকে জ্বালিয়াতি বলা যায় না।
দন্ডবিধির ৪৬৩ হতে ৪৭৭ ধারা পর্যন্ত জ্বালিয়াতি সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত বিধান রয়েছে।                        
ধারা: ৪৬৪। মিথ্যা দলিল প্রণয়ন: যদি কোন ব্যক্তি নিণ্মোক্ত তিনটি ক্ষেত্রে কোন মিথ্যা দলিল প্রণয়ন করে, তবে উক্ত ব্যক্তি মিথ্যা দলিল প্রণয়ন করিয়াছে বলে গণ্য হবে ।
প্রথমত: যদি কোন ব্যক্তি, যে ব্যক্তি কর্তৃক বা যাহার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বা যে সময়ে কোন দলিল বা তার অংশবিশেষ প্রনীত, স্বাক্ষরিত, সীলমোহরযুক্ত বা সম্পাদিত হয় নাই বলিয়া সে জানে, সেই দলিল বা তাহার অংশবিশেষ সেই ব্যক্তি কর্তৃক বা তাহার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বা সেই সময়ে প্রণীত, স্বাক্ষরিত সীলমোহরযুক্ত বা সম্পাদিত হয় নাই বলিয়া সে জানে, সেই দলিল বা তাহার অংশবিশেষ সেই ব্যক্তি কর্তৃক বা তাহার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বা সেই সময়ে প্রনীত, স্বাক্ষরিত, সীলমোহরযুক্ত বা সম্পাদিত হইয়াছে বলিয়া বিশ্বাস জণ্মানোর উদ্দেশ্যে অসাধুভাবে বা প্রতারণামূলকভাবে অনুরুপ দলিল বা তাহার অংশবিশেষ প্রনয়ণ,স্বাক্ষর বা সীলমোহরযুক্ত বা সম্পাদন করে, কিংবা দলিলটি সম্পাদিত হইয়াছে বলিয়া বুঝাইবার জন্য কোন চিহ্ন বা প্রতীক স্থাপন করে; কিংবা
দ্বিতীয়ত: যদি কোন ব্যক্তি  তত্‌কর্তৃক  বা অপর ব্যক্তি কর্তৃক কোন দলিল প্রণীত সম্পাদিত হওয়ার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব ব্যতীত অসাধুভাবে বা প্রতারণামূলকভাবে উক্ত দলিলের কোন গুরত্বপূর্ণ অংশ বাতিল করণের  মাধ্যমে বা অন্য কোন উপায়ে পরিবর্তন করিয়া অনূরুপ পরিবর্তনের সময় সেই অপর ব্যক্তি জীবিত বা মৃত যাই হোক;  অথবা
তৃতীয়ত: যদি কোন ব্যক্তি অসাধুভাবে বা প্রতারণামূলকভাবে এমন কোন ব্যক্তিকে কোন দলিল স্বাক্ষর,
সীলমোহরযুক্ত, সম্পাদন বা পরিবর্তন করিতে বাধ্য করে, যে ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতাহেতু বা নেশাগ্রস্ততা হেতু  বা তাহার প্রতি প্রতারণাহেতু উক্ত দলিলের বিষয়বস্তু বা পরিবর্তনের প্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত নয় বলিয়া সে জানে।
 
উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝা যাবে:
ক একটি সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া উহা ঘ কে অর্পন করে। ক পরে ঘ - কে তাহার সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সে একই সম্পত্তি খ এর কাছে হস্তান্তর করে একটি দলিল প্রণয়ণ করে। তাহার উদ্দেশ্য ঘ কে প্রদানের ছয় মাস অাগেই সম্পত্তিটি খ কে প্রদান করা হয়েছে এরকম বিশ্বাস সৃষ্টি করা। ক জ্বালিয়াতি করেছে।

জালিয়াতির শাস্তি: যদি কোন ব্যক্তি জ্বালিয়াতি করে, তবে উক্ত ব্যক্তি দুই বত্সর পর্যন্ত মেয়াদের যে কোন বর্ণনার কারাদন্ডে বা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবে ।

বিশ্লেষণ: বর্তমান ধারায় জ্বালিয়াতির অপরাধে দন্ডের বিধান দেওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি জ্বালিয়াতি করে তাহাকে দুই বত্‍‌সরের কারাদন্ড বা জরিমানা, দন্ড অথবা উভয়বিধ দন্ড দেওয়া যায়। কোন ব্যক্তি যদি দলিল লিখন ও সহি সম্পাদনের কাজে সম্পৃক্ত না থাকে তাকে জালিয়াতির অপরাধে দন্ড দেওয়া যায় না।
ফরিয়াদী পক্ষকে জ্বালিয়াতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে  প্রমাণ করতে হবে ।

ধারা: ৪৬৮। প্রতারণার  উদ্দেশ্যে জালিয়াতি: যদি কোন ব্যক্তি প্রতারণা করিবার উদ্দেশ্যে কোন জাল দলিল প্রণয়ন করে বা জ্বালিয়াতি করে, তবে উক্ত ব্যক্তি সাত বত্‌সর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডিত হইবে এবং অর্থদন্ডে ও দন্ডিত হবে ।

শাস্তি:  বর্তমান ধারায় প্রতারণা করবার উদ্দেশ্যে দলিল জালিয়াতির অপরাধে সাত বত্‍‌সরের কারাদন্ড এবং তদুপরি জরিমানার বিধান করা হয়েছে ।
বিশ্লেষণ:এই ধারায় বর্ণিত অপরাধটি গুরুতর ধরনের অপরাধ। ক্ষেত্রবিশেষে আসামীর দন্ড পরিবর্তন হতে পারে।

ধারা: ৪৭০। প্রতারণামুলকভাবে বা অসাধুভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রস্তুতকৃত যে কোন মিথ্যা দলিল জাল দলিল  বলে গন্য হবে ।

বিশ্লেষণ: জাল দলিল কথাটির সাথে জনসাধারণ সুপরিচিত। দলিল জালকরণ বলতে দন্ডবিধির
৪৬৪ ধারায় বর্ণিত মিথ্যা দলিল সৃজনকে বোঝায় । দৃশত: কোন দলিলকে জাল বা তঞ্চকী বলে সাব্যস্ত করা কষ্টসাধ্য। কেননা বিশুদ্ধ্ব দলিল এবং জাল দলিল বহুলাংশে হুবহু সামজ্ঞস্যপূর্ন হতে পারে।

ধাা: ৪৭১। যদি কোন ব্যক্তি প্রতারণামুলকভাবে বা অসাধুভাবে এমন দলিল খাঁটি দলিল বলে ব্যবহার করে যে দলিলটি জাল দলিল বলে সে জানে বা তা বিশ্বাস করবার কারণ আছে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি এমনভাবে দন্ডিত হবে যেন সে দলিলটি জাল করেছে ।
বিশ্লেষণ: কোন ব্যক্তি জাল দলিলকে বিশুদ্ধ দলিল বলে ব্যবহার করলে ৪৭১ ধারার বিধান অনুযায়ী দুই বত্সরের কারাদন্ডে দন্ডিত হবে ।জালিয়াতির অপরাধে ৪৬৫ ধারায়ও দুই বত্‍সরের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।
                                                                                                            (দন্ডবিধি, ১৮৬০)

করণীয় কী: যখন কোন ব্যক্তির উত্তরাধিকার, তার জায়গা জমির  দলিল  জালিয়াতির মাধ্যমে হয় তখন সে ব্যক্তি তার প্রতিকারের জন্য যদি আর্থিক ক্ষমতা থাকে তবে সরাসরি ফৌজদারী মামলায় যেতে পারে নিজস্ব আইনজীবি নিয়োগের মাধ্যমে। আর যদি আর্থিক ক্ষমতা না থাকে সেক্ষেত্রে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সাহায্য নিতে পারেন যারা বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা প্রদান করে থাকে ।

আইনগত সহায়তা প্রদানকারী মানবাধিকার সংগঠন:
১) ব্লাষ্ট অর্থাত্‍ বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট, ১৪১/১, সেগুনবাগিচা, ঢাকা -১০০০
 ফোন- ৮৩১৭১৮৫ , ৯৩৪৯১২৬।
২) বাঁচতে শেখা,  শহীদ মশিউর রহমান রোড, আরবপুর,যশোর । ফোন - ০৪২১ ৬৬৪৩৬,৭৩২৩৮]।
৩) মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশেন নতুন শহর, মাদারীপুর, ফোন - ০৬৬১ ৫৫৫১৮, ৫৫৬১৮]।

৫) নিজেরা করি- ৭/৮, ব্লক-সি, লালমাটিয়া, ঢাকা। ফোন: ৮১২২১৯৯, ৯১৪৪০৮৫।



জমির খতিয়ান রদবদল


জমির খতিয়ান রদবদল কি ও কিভাবে হয়: 
খতিয়ান হচ্ছে অধিকারের দলিল। জমির প্রকৃত  মালিক এবং দখলকারের বর্তমান দখলের একটি নির্ভরযোগ্য প্রমাণ হচ্ছে এই খতিয়ান। অধিকাংশ দেওয়ানী মামলাগুলো বিশেষ করে জায়গা জমি সংক্রান্ত মামলাগুলো খতিয়ানের উপর নির্ভরশীল।আর খতিয়ানে থাকে নম্বর যার দ্বারা রেকর্ড অব রাইটস অব টাইটেল বা স্বত্ব লিপি কাগজে বা রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করা হয়। সেই স্বত্ব লিপির ক্রমিক নম্বরকে এক একটি খতিয়ান নম্বর বলা হয়। এই খতিয়ানগুলো বিভিন্ন সময়ে তৈরী হয়েছে। খতিয়ানগুলো যেমন সি.এস খতিয়ান, আর.এস খতিয়ান, পি.এস খতিয়ান, বি.এস খতিয়ান, মাঠ পচা ও নামজারী জরিপের ভিত্তি করে তৈরী  হয়েছে। প্রতারক দল জমির খতিয়ান রদবদল করে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে তার উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত করে ।

সংশ্লিষ্ট আইন ও প্রতিকার: 
জমির খতিয়ান রদবদল দলিল জালিয়াতির সামিল অর্থাত্‍ একই শ্রেণীর অপরাধ যার শাস্তি  দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ৪৬৩- ধারা ৪৭১ এর মধ্যে অন্তভূর্ক্ত।
ধারা : ৪৬৩। দন্ডবিধির  ৪৬৩ ধারা অনুসারে, যদি কোন ব্যক্তি জনসাধারণের বা কোন ব্যক্তি বিশেষের ক্ষতিসাধনের কিংবা কোন দাবি বা স্বত্ব প্রতিষ্ঠার কিংবা কোন ব্যক্তিকে তাহার সম্পত্তি ত্যাগে প্রকাশ্য বা অনুক্ত  চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য করিবার কিংবা কোন প্রতারণা বা যাহাতে প্রতারণা সংঘটিত হইতে পারে, তাহার উদ্দশ্য কোন মিথ্যা দলিল বা দলিলের অংশবিশেষ প্রনয়ণ করে, তবে উক্ত ব্যক্তি জ্বালিয়াতি করিয়াছে বলিয়া গন্য হইবে।
বিশ্লেষণ: দলিলটি যদি সম্পুর্ণ বা আংশিক মিথ্যাভাবে তৈরি করা না হয় তাহলে একে জ্বালিয়াতি বলা যাবেনা। সম্ভাব্য জ্বালিয়াতি সংঘটনের প্রস্তুতিকে জ্বালিয়াতি বলা যায় না।
দন্ডবিধির ৪৬৩ হতে ৪৭৭ ধারা পর্যন্ত জ্বালিয়াতি সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত বিধান রয়েছে।                       
ধারা: ৪৬৪। মিথ্যা দলিল প্রণয়ন: যদি কোন ব্যক্তি নিণ্মোক্ত তিনটি ক্ষেত্রে কোন মিথ্যা দলিল প্রণয়ন করে, তবে উক্ত ব্যক্তি মিথ্যা দলিল প্রণয়ন করিয়াছে বলে গণ্য হবে ।
প্রথমত: যদি কোন ব্যক্তি, যে ব্যক্তি কর্তৃক বা যাহার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বা যে সময়ে কোন দলিল বা তার অংশবিশেষ প্রনীত, স্বাক্ষরিত, সীলমোহরযুক্ত বা সম্পাদিত হয় নাই বলিয়া সে জানে, সেই দলিল বা তাহার অংশবিশেষ সেই ব্যক্তি কর্তৃক বা তাহার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বা সেই সময়ে প্রণীত, স্বাক্ষরিত সীলমোহরযুক্ত বা সম্পাদিত হয় নাই বলিয়া সে জানে, সেই দলিল বা তাহার অংশবিশেষ সেই ব্যক্তি কর্তৃক বা তাহার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বা সেই সময়ে প্রনীত, স্বাক্ষরিত, সীলমোহরযুক্ত বা সম্পাদিত হইয়াছে বলিয়া বিশ্বাস জণ্মানোর উদ্দেশ্যে অসাধুভাবে বা প্রতারণামূলকভাবে অনুরুপ দলিল বা তাহার অংশবিশেষ প্রনয়ণ,স্বাক্ষর বা সীলমোহরযুক্ত বা সম্পাদন করে, কিংবা দলিলটি সম্পাদিত হইয়াছে বলিয়া বুঝাইবার জন্য কোন চিহ্ন বা প্রতীক স্থাপন করে; কিংবা
দ্বিতীয়ত: যদি কোন ব্যক্তি  তত্‌কর্তৃক  বা অপর ব্যক্তি কর্তৃক কোন দলিল প্রণীত সম্পাদিত হওয়ার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব ব্যতীত অসাধুভাবে বা প্রতারণামূলকভাবে উক্ত দলিলের কোন গুরত্বপূর্ণ অংশ বাতিল করণের  মাধ্যমে বা অন্য কোন উপায়ে পরিবর্তন করিয়া অনূরুপ পরিবর্তনের সময় সেই অপর ব্যক্তি জীবিত বা মৃত যাই হোক;  অথবা
তৃতীয়ত: যদি কোন ব্যক্তি অসাধুভাবে বা প্রতারণামূলকভাবে এমন কোন ব্যক্তিকে কোন দলিল স্বাক্ষর,
সীলমোহরযুক্ত, সম্পাদন বা পরিবর্তন করিতে বাধ্য করে, যে ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতাহেতু বা নেশাগ্রস্ততা হেতু  বা তাহার প্রতি প্রতারণাহেতু উক্ত দলিলের বিষয়বস্তু বা পরিবর্তনের প্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত নয় বলিয়া সে জানে।
 
উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝা যাবে:
ক একটি সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া উহা ঘ কে অর্পন করে। ক পরে ঘ - কে তাহার সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সে একই সম্পত্তি খ এর কাছে হস্তান্তর করে একটি দলিল প্রণয়ণ করে। তাহার উদ্দেশ্য ঘ কে প্রদানের ছয় মাস অাগেই সম্পত্তিটি খ কে প্রদান করা হয়েছে এরকম বিশ্বাস সৃষ্টি করা। ক জ্বালিয়াতি করেছে।

জালিয়াতির শাস্তি: যদি কোন ব্যক্তি জ্বালিয়াতি করে, তবে উক্ত ব্যক্তি দুই বত্সর পর্যন্ত মেয়াদের যে কোন বর্ণনার কারাদন্ডে বা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবে ।

বিশ্লেষণ: বর্তমান ধারায় জ্বালিয়াতির অপরাধে দন্ডের বিধান দেওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি জ্বালিয়াতি করে তাহাকে দুই বত্‍‌সরের কারাদন্ড বা জরিমানা, দন্ড অথবা উভয়বিধ দন্ড দেওয়া যায়। কোন ব্যক্তি যদি দলিল লিখন ও সহি সম্পাদনের কাজে সম্পৃক্ত না থাকে তাকে জালিয়াতির অপরাধে দন্ড দেওয়া যায় না।
ফরিয়াদী পক্ষকে জ্বালিয়াতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে  প্রমাণ করতে হবে ।

ধারা: ৪৬৮। প্রতারণার  উদ্দেশ্যে জালিয়াতি: যদি কোন ব্যক্তি প্রতারণা করিবার উদ্দেশ্যে কোন জাল দলিল প্রণয়ন করে বা জ্বালিয়াতি করে, তবে উক্ত ব্যক্তি সাত বত্‌সর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডিত হইবে এবং অর্থদন্ডে ও দন্ডিত হবে ।

শাস্তি:  বর্তমান ধারায় প্রতারণা করবার উদ্দেশ্যে দলিল জালিয়াতির অপরাধে সাত বত্‍‌সরের কারাদন্ড এবং তদুপরি জরিমানার বিধান করা হয়েছে ।
বিশ্লেষণ:এই ধারায় বর্ণিত অপরাধটি গুরুতর ধরনের অপরাধ। ক্ষেত্রবিশেষে আসামীর দন্ড পরিবর্তন হতে পারে।

ধারা: ৪৭০। প্রতারণামুলকভাবে বা অসাধুভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রস্তুতকৃত যে কোন মিথ্যা দলিল জাল দলিল  বলে গন্য হবে ।

বিশ্লেষণ: জাল দলিল কথাটির সাথে জনসাধারণ সুপরিচিত। দলিল জালকরণ বলতে দন্ডবিধির
৪৬৪ ধারায় বর্ণিত মিথ্যা দলিল সৃজনকে বোঝায় । দৃশত: কোন দলিলকে জাল বা তঞ্চকী বলে সাব্যস্ত করা কষ্টসাধ্য। কেননা বিশুদ্ধ্ব দলিল এবং জাল দলিল বহুলাংশে হুবহু সামজ্ঞস্যপূর্ন হতে পারে।

ধারা: ৪৭১। যদি কোন ব্যক্তি প্রতারণামুলকভাবে বা অসাধুভাবে এমন দলিল খাঁটি দলিল বলে ব্যবহার করে যে দলিলটি জাল দলিল বলে সে জানে বা তা বিশ্বাস করবার কারণ আছে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি এমনভাবে দন্ডিত হবে যেন সে দলিলটি জাল করেছে ।
বিশ্লেষণ: কোন ব্যক্তি জাল দলিলকে বিশুদ্ধ দলিল বলে ব্যবহার করলে ৪৭১ ধারার বিধান অনুযায়ী দুই বত্সরের কারাদন্ডে দন্ডিত হবে ।জালিয়াতির অপরাধে ৪৬৫ ধারায়ও দুই বত্‍সরের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।
                                                                                                            (দন্ডবিধি, ১৮৬০)

করণীয় কী: স্থানীয় সাব রেজিষ্ট্রার অফিসে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তার জায়গার প্রকৃত খতিয়ান তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন এবং তার প্রতিকারের জন্য যদি আর্থিক ক্ষমতা থাকে তবে সরাসরি ফৌজদারী মামলায় যেতে পারে নিজস্ব আইনজীবি নিয়োগের মাধ্যমে। আর যদি আর্থিক ক্ষমতা না থাকে সেক্ষেত্রে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সাহায্য নিতে পারেন,যারা বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা দিয়ে থাকে।

  
আইনগত সহায়তা প্রদানকারী মানবাধিকার সংগঠন:
১) ব্লাষ্ট অর্থাত্‍ বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট, ১৪১/১, সেগুনবাগিচা, ঢাকা -১০০০
 ফোন- ৮৩১৭১৮৫ , ৯৩৪৯১২৬।
২) বাঁচতে শেখা,  শহীদ মশিউর রহমান রোড, আরবপুর,যশোর । ফোন - ০৪২১ ৬৬৪৩৬,৭৩২৩৮]।
৩) মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশেন নতুন শহর, মাদারীপুর, ফোন - ০৬৬১ ৫৫৫১৮, ৫৫৬১৮]।

জমির দাগে রদবদল

জমির দাগে রদবদল কি: ম্যাপে ও খতিয়ানে ভূমির পৃথক চিহ্নিত স্বত্ব অনুযায়ী প্রতিটি প্লটে যে ক্রমিক নম্বর বসানো হয় তাকে দাগ নম্বর বলে। কোন ব্যক্তির পার্শ্ববর্তী অথবা স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জমির দাগ নম্বর রদবদল করে প্রকৃত জমির মালিকের উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তির  অংশ থেকে  বঞ্চিত করতে পারে।
কিভাবে হয়: 
কোন প্রতারক ব্যক্তি কোন জমির দখল নিজের বলে দাবী করার জন্য প্লটে যে  ক্রমিক নম্বর আছে তার নম্বর বদলিয়ে নিজের সুবিধামতো নম্বর বসায়। এতে করে প্রকৃত মালিক তার নিজের জমির সংক্রান্ত দাবীর ব্যাপারে জোর দিতে পারেননা। 
সংশ্লিষ্ট আইন ও ব্যাখা: 
জমির দাগে রদবদল
 দলিল জালিয়াতির সামিল অর্থাত্‍ একই শ্রেণীর অপরাধ যার শাস্তি  দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ৪৬৩- ধারা ৪৭১ এর মধ্যে অন্তভূর্ক্ত।
ধারা : ৪৬৩। দন্ডবিধির  ৪৬৩ ধারা অনুসারে, যদি কোন ব্যক্তি জনসাধারণের বা কোন ব্যক্তি বিশেষের ক্ষতিসাধনের কিংবা কোন দাবি বা স্বত্ব প্রতিষ্ঠার কিংবা কোন ব্যক্তিকে তাহার সম্পত্তি ত্যাগে প্রকাশ্য বা অনুক্ত  চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য করিবার কিংবা কোন প্রতারণা বা যাহাতে প্রতারণা সংঘটিত হইতে পারে, তাহার উদ্দশ্য কোন মিথ্যা দলিল বা দলিলের অংশবিশেষ প্রনয়ণ করে, তবে উক্ত ব্যক্তি জ্বালিয়াতি করিয়াছে বলিয়া গন্য হইবে।
বিশ্লেষণ: দলিলটি যদি সম্পুর্ণ বা আংশিক মিথ্যাভাবে তৈরি করা না হয় তাহলে একে জ্বালিয়াতি বলা যাবেনা। সম্ভাব্য জ্বালিয়াতি সংঘটনের প্রস্তুতিকে জ্বালিয়াতি বলা যায় না।
দন্ডবিধির ৪৬৩ হতে ৪৭৭ ধারা পর্যন্ত জ্বালিয়াতি সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত বিধান রয়েছে।                       
ধারা: ৪৬৪। মিথ্যা দলিল প্রণয়ন: যদি কোন ব্যক্তি নিণ্মোক্ত তিনটি ক্ষেত্রে কোন মিথ্যা দলিল প্রণয়ন করে, তবে উক্ত ব্যক্তি মিথ্যা দলিল প্রণয়ন করিয়াছে বলে গণ্য হবে ।
প্রথমত: যদি কোন ব্যক্তি, যে ব্যক্তি কর্তৃক বা যাহার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বা যে সময়ে কোন দলিল বা তার অংশবিশেষ প্রনীত, স্বাক্ষরিত, সীলমোহরযুক্ত বা সম্পাদিত হয় নাই বলিয়া সে জানে, সেই দলিল বা তাহার অংশবিশেষ সেই ব্যক্তি কর্তৃক বা তাহার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বা সেই সময়ে প্রণীত, স্বাক্ষরিত সীলমোহরযুক্ত বা সম্পাদিত হয় নাই বলিয়া সে জানে, সেই দলিল বা তাহার অংশবিশেষ সেই ব্যক্তি কর্তৃক বা তাহার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বা সেই সময়ে প্রনীত, স্বাক্ষরিত, সীলমোহরযুক্ত বা সম্পাদিত হইয়াছে বলিয়া বিশ্বাস জণ্মানোর উদ্দেশ্যে অসাধুভাবে বা প্রতারণামূলকভাবে অনুরুপ দলিল বা তাহার অংশবিশেষ প্রনয়ণ,স্বাক্ষর বা সীলমোহরযুক্ত বা সম্পাদন করে, কিংবা দলিলটি সম্পাদিত হইয়াছে বলিয়া বুঝাইবার জন্য কোন চিহ্ন বা প্রতীক স্থাপন করে; কিংবা
দ্বিতীয়ত: যদি কোন ব্যক্তি  তত্‌কর্তৃক  বা অপর ব্যক্তি কর্তৃক কোন দলিল প্রণীত সম্পাদিত হওয়ার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব ব্যতীত অসাধুভাবে বা প্রতারণামূলকভাবে উক্ত দলিলের কোন গুরত্বপূর্ণ অংশ বাতিল করণের  মাধ্যমে বা অন্য কোন উপায়ে পরিবর্তন করিয়া অনূরুপ পরিবর্তনের সময় সেই অপর ব্যক্তি জীবিত বা মৃত যাই হোক;  অথবা
তৃতীয়ত: যদি কোন ব্যক্তি অসাধুভাবে বা প্রতারণামূলকভাবে এমন কোন ব্যক্তিকে কোন দলিল স্বাক্ষর,
সীলমোহরযুক্ত, সম্পাদন বা পরিবর্তন করিতে বাধ্য করে, যে ব্যক্তি মানসিক অসুস্থতাহেতু বা নেশাগ্রস্ততা হেতু  বা তাহার প্রতি প্রতারণাহেতু উক্ত দলিলের বিষয়বস্তু বা পরিবর্তনের প্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত নয় বলিয়া সে জানে।
 
উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝা যাবে:
ক একটি সম্পত্তি বিক্রয় করিয়া উহা ঘ কে অর্পন করে। ক পরে ঘ - কে তাহার সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে সে একই সম্পত্তি খ এর কাছে হস্তান্তর করে একটি দলিল প্রণয়ণ করে। তাহার উদ্দেশ্য ঘ কে প্রদানের ছয় মাস অাগেই সম্পত্তিটি খ কে প্রদান করা হয়েছে এরকম বিশ্বাস সৃষ্টি করা। ক জ্বালিয়াতি করেছে।

জালিয়াতির শাস্তি: যদি কোন ব্যক্তি জ্বালিয়াতি করে, তবে উক্ত ব্যক্তি দুই বত্সর পর্যন্ত মেয়াদের যে কোন বর্ণনার কারাদন্ডে বা অর্থদন্ডে বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবে ।

বিশ্লেষণ: বর্তমান ধারায় জ্বালিয়াতির অপরাধে দন্ডের বিধান দেওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি জ্বালিয়াতি করে তাহাকে দুই বত্‍‌সরের কারাদন্ড বা জরিমানা, দন্ড অথবা উভয়বিধ দন্ড দেওয়া যায়। কোন ব্যক্তি যদি দলিল লিখন ও সহি সম্পাদনের কাজে সম্পৃক্ত না থাকে তাকে জালিয়াতির অপরাধে দন্ড দেওয়া যায় না।
ফরিয়াদী পক্ষকে জ্বালিয়াতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে  প্রমাণ করতে হবে ।

ধারা: ৪৬৮। প্রতারণার  উদ্দেশ্যে জালিয়াতি: যদি কোন ব্যক্তি প্রতারণা করিবার উদ্দেশ্যে কোন জাল দলিল প্রণয়ন করে বা জ্বালিয়াতি করে, তবে উক্ত ব্যক্তি সাত বত্‌সর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডিত হইবে এবং অর্থদন্ডে ও দন্ডিত হবে ।

শাস্তি:  বর্তমান ধারায় প্রতারণা করবার উদ্দেশ্যে দলিল জালিয়াতির অপরাধে সাত বত্‍‌সরের কারাদন্ড এবং তদুপরি জরিমানার বিধান করা হয়েছে ।
বিশ্লেষণ:এই ধারায় বর্ণিত অপরাধটি গুরুতর ধরনের অপরাধ। ক্ষেত্রবিশেষে আসামীর দন্ড পরিবর্তন হতে পারে।

ধারা: ৪৭০। প্রতারণামুলকভাবে বা অসাধুভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রস্তুতকৃত যে কোন মিথ্যা দলিল জাল দলিল  বলে গন্য হবে ।

বিশ্লেষণ: জাল দলিল কথাটির সাথে জনসাধারণ সুপরিচিত। দলিল জালকরণ বলতে দন্ডবিধির
৪৬৪ ধারায় বর্ণিত মিথ্যা দলিল সৃজনকে বোঝায় । দৃশত: কোন দলিলকে জাল বা তঞ্চকী বলে সাব্যস্ত করা কষ্টসাধ্য। কেননা বিশুদ্ধ্ব দলিল এবং জাল দলিল বহুলাংশে হুবহু সামজ্ঞস্যপূর্ন হতে পারে।

ধারা: ৪৭১। যদি কোন ব্যক্তি প্রতারণামুলকভাবে বা অসাধুভাবে এমন দলিল খাঁটি দলিল বলে ব্যবহার করে যে দলিলটি জাল দলিল বলে সে জানে বা তা বিশ্বাস করবার কারণ আছে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি এমনভাবে দন্ডিত হবে যেন সে দলিলটি জাল করেছে ।
বিশ্লেষণ: কোন ব্যক্তি জাল দলিলকে বিশুদ্ধ দলিল বলে ব্যবহার করলে ৪৭১ ধারার বিধান অনুযায়ী দুই বত্সরের কারাদন্ডে দন্ডিত হবে ।জালিয়াতির অপরাধে ৪৬৫ ধারায়ও দুই বত্‍সরের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।
করণীয় কী: যখন কোন ব্যক্তির উত্তরাধিকার, তার জায়গা জমির  দলিল  জালিয়াতির মাধ্যমে হয় তখন সে ব্যক্তি তার প্রতিকারের জন্য যদি আর্থিক ক্ষমতা থাকে তবে সরাসরি ফৌজদারী মামলায় যেতে পারে নিজস্ব আইনজীবি নিয়োগের মাধ্যমে। আর যদি আর্থিক ক্ষমতা না থাকে সেক্ষেত্রে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সাহায্য নিতে পারেন যারা বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা প্রদান করে থাকে ।
আইনগত সহায়তা প্রদানকারী মানবাধিকার সংগঠন:
১) ব্লাষ্ট অর্থাত্‍ বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট, ১৪১/১, সেগুনবাগিচা, ঢাকা -১০০০
 ফোন- ৮৩১৭১৮৫ , ৯৩৪৯১২৬।
২) বাঁচতে শেখা,  শহীদ মশিউর রহমান রোড, আরবপুর,যশোর । ফোন - ০৪২১ ৬৬৪৩৬,৭৩২৩৮]।
৩) মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশেন নতুন শহর, মাদারীপুর, ফোন - ০৬৬১ ৫৫৫১৮, ৫৫৬১৮]।



মানসিক ভারসাম্যহীন লোককে বঞ্চিতকরণ


মানসিক ভারসাম্যহীন লোককে বঞ্চিতকরণ কি ও কিভাবে তাকে বঞ্চিত করা হয়: যখন কোন   ব্যক্তি সুস্থভাবে তার দৈন্দনিন কার্যকলাপ করতে অপারগ হয় কিংবা যার মধ্যে বুদ্বিবৃত্তির স্বাভাবিকতা প্রকাশ পায়না তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন লোক বলে। পরিবারে কোন লোক মানসিক ভারসাম্যহীন হলে তাকে বঞ্চিত করার মানসিকতা সৃষ্টি হয়। মৃত ব্যক্তির সসম্পত্তি থেকে এ ধরনের লোকেরা তাদের প্রাপ্য অংশ পায়না ।

সংশ্লিষ্ট আইন ব্যাখা: দেওয়ানি কার্যবিধির আদেশ- ৩২, বিধি ১ থেকে ১৫ পর্যন্ত কিভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি কাউকে তার পক্ষে নিযুক্ত করে মামলা করিয়ে সম্পত্তিতে তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন সে সম্পর্কে বলা আছে।

করণীয় কী: মানসিক ভারসাম্যহীন লোককে নিয়ে হয় সালিশের মাধ্যমে না হয় দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়েরের মাধ্যমে সম্পত্তিতে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
আর যদি আর্থিক ক্ষমতা না থাকে সেক্ষেত্রে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সাহায্য নিতে পারেন যারা বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা প্রদান করে থাকে ।

 আইনগত সহায়তা প্রদানকারী মানবাধিকার সংগঠন:
১) ব্লাষ্ট অর্থাত্‍ বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট, ১৪১/১, সেগুনবাগিচা, ঢাকা -১০০০
 ফোন- ৮৩১৭১৮৫ , ৯৩৪৯১২৬।
২) বাঁচতে শেখা,  শহীদ মশিউর রহমান রোড, আরবপুর,যশোর । ফোন - ০৪২১ ৬৬৪৩৬,৭৩২৩৮]।
৩) মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশেন নতুন শহর, মাদারীপুর, ফোন - ০৬৬১ ৫৫৫১৮, ৫৫৬১৮]।



সম্পত্তি নিয়ে মানুষকে বিভিন্ন সময়ে হয়রানী হতে হয়। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে মানুষ প্রচুর অপরাধ সংঘটন করে থাকে। কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার সময় তার কোন একজন ওয়ারিশ ভুল ব্যাখা দিয়ে অন্যান্য ওয়ারিশদের সম্পত্তির ভাগ নিজের নামে বুঝে নিতে পারে। আবার অন্য ওয়ারিশেরা যাতে তাদের মৃত পিতার সম্পত্তি দাবী না করতে পারে সেজন্য তাদের কিছু অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত হওয়ায় উপরোক্ত উপায়ে তারা সম্পত্তির উত্তরাধিকার বঞ্চিত হয় ।
এক্ষেত্রে উক্ত বঞ্চিত ব্যক্তি সর্বপ্র্র্র্রথমে সালিশের মাধ্যমে তার সম্পত্তির  ভাগ ফিরে পেতে ব্যর্থ হলে দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে পারেন। সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় যে দলিল করা হয়েছিল তা বাতিলের জন্য তিনি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩১ ও ৩৯ ধারায় দলিল সংশোধন এবং বিলুপ্তির জন্য মামলা করতে পারেন।
সুনির্দিষ্ট  প্রতিকার আইন,১৮৭৭
ধারা ৩১: যখন দলিল সংশোধন করা যেতে পারে -যখন প্রতারণার মাধ্যমে বা পক্ষসমুহের পারস্পরিক ভুলের দরুন কোন চুক্তি বা অপর কোন লিখিত দলিল সত্যিকারভাবে তাদের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে না, যে পক্ষ কিংবা তাদের স্বার্থ -সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি দলিল সংশোধিত করে নেবার জন্য মামলা দায়ের করতে পারে। যদি আদালত উহা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত দেখতে পান যে, দলিল প্রণয়নের বেলায় প্রতারণা অথবা ভুল করা হয়েছে এবং তা কার্যকরী করার ব্যাপারে পক্ষসমুহের সত্যিকার উদ্দেশ্য নিরুপন করতে অক্ষম হয়, সেখানে আদালত তার ইচ্ছাধীন ক্ষমতা অনুসারে যতদূর পর্যন্ততা তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক সরল বিশ্বাসে এবং মূল্যের বিনিময়ে অর্জিত অধিকারে হস্তক্ষেপ না করেই করা যায়, ততদূর পর্যন্ত দলিল সংশোধন করতে পারেন, যাতে তা সে উদ্দেশ্য ব্যক্ত করতে সক্ষম হয়।
বিশ্লেষণ: ধারাটির প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় হলো কোন চুক্তি বা দলিল সংশোধন সম্পর্কিত। কোন পক্ষের  প্রতারণা ও প্রতারণা শূন্য উভয়পক্ষের ভুল মনোভাব ভুলভাবে লিখার দরুন আদালত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির মোকদ্দমার প্রেক্ষিতে দলিল সংশোধনের আদেশ  দিতে পারেন । আদালত তার এখতিয়ারধীন ক্ষমতাবলে দলিল বা চুক্তি সংশোধন করতে পারেন ।
ধারা -৩৯। যখন বিলুপ্তির আদেশপ্রদান করা যেতে পারে: যে কোন ব্যক্তি যার বিরুদ্ধে লিখিত চুক্তি অবৈধ বা বাতিলযোগ্য, যার যুক্তিসংগত আশন্কা রয়েছে যে, তেমন দলিল যদি অনিস্পন্ন অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়, তবে তার গুরুতর ক্ষতির কারণ হবে, তবে সে বাতিল বা বাতিলযোগ্য ঘোষনার জন্য মামলা দায়ের করতে পারে ;এবং আদালত তার ইচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে তেমন রায় প্রদান করতে এবং চুক্তি বিলুপ্তি হিসেবে ত্যাগ করার নির্দেশ প্রদান করতে পারেন ।
যদি দলিল রেজিষ্ট্রেশন আইন অনুসারে রেজিষ্ট্রিকৃত হয়ে থাকে, তবে আদালত তার ডিক্রীর একটি কপি সেই অফিসারের নিকট প্রেরণ করবেন, যার অফিসে উক্ত দলিল রেজিষ্ট্রি করা হইয়াছে এবং তেমন অফিসার তার বইতে দলিলের নকলে উহার বিষয় লিপিবদ্ব করেন।
বিশ্লেষণ: ধারা ৩৯ এর প্রতিপাদ্য বিষয় গুরুতর ক্ষতিকর দলিলের বিপর্যয় নিরীহ মানুষকে সংরক্ষণ।
অর্থাত্‍ বাতিল ও বাতিলযোগ্য দলিলের ক্ষতিকর ও ভীতিকর প্রভাব থেকে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে সংরক্ষণ করা। এজন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষকে আদালতে দলিল বিলুপের মোকাদ্দমা রজু করতে হয় । আদালত স্বীয় এখতিয়ার বলে যথাবিবেচ্য ক্ষেত্রে দলিল বিলোপন আদেশ দান করতে পারেন। এবং বিলোপনে ডিক্রীর কপি সংশ্লিষ্ট রেজিষ্ট্রি অফিসে প্রেরণ করবেন ।
                                                                            সুনির্দিষ্ট  প্রতিকার আইন,১৮৭৭



ধর্মের  পার্থক্য


ধর্মের পার্থক্য কি এবং কিভাবে হয়:
মুসলিম আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তি যদি তার ধর্ম পরিবর্তন করে অন্য কোন ধর্মে স্থানান্তরিত হতো সে ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি তার পিতা মারা গেলে তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হতো।
সংশ্লিষ্ট আইন ও ব্যাখা: 
মুসলমান অমুসলমানের মধ্যে আত্নীয়তা থাকলে কেউ কারো উত্তরাধিকারী হতে পারতোনা। ১৮৫০ সনের  ২১ নং আইনের বিধানুসারে এই বাধাটি দুর করা হয়েছে।            
১৮৫০ সনের  ২১ নং আইন

এ ছাড়াও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সাহায্য নিতে পারেন যারা বিনামূল্যে আইনগত সহায়তা প্রদান করে থাকে।

আইনগত সহায়তা প্রদানকারী মানবাধিকার সংগঠন:

১) ব্লাষ্ট অর্থাত্‍ বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাষ্ট, ১৪১/১, সেগুনবাগিচা, ঢাকা -১০০০
 ফোন- ৮৩১৭১৮৫ , ৯৩৪৯১২৬।
২) বাঁচতে শেখা,  শহীদ মশিউর রহমান রোড, আরবপুর,যশোর । ফোন - ০৪২১ ৬৬৪৩৬,৭৩২৩৮]।
৩) মাদারীপুর লিগ্যাল এইড এসোসিয়েশেন নতুন শহর, মাদারীপুর, ফোন - ০৬৬১ ৫৫৫১৮, ৫৫৬১৮]।




No comments:

Post a Comment