Total Pageviews

Saturday, August 30, 2014

মুসলিম আইনে উইল সংক্রান্ত বিষয়

মুসলিম আইনে উইল সংক্রান্ত বিষয়

উইল বা অছিয়ত: মুসলিম আইনে উইলকে অছিয়ত বলা হয়েছে । উইলের আরবী প্রতিশব্দ ওয়াসিয়াত । এর অর্থ ভার  অর্পণ, নিদেশ, উপদেশ মিলানো বা কোন জিনিস অন্যদের পযন্ত পৌছানো ।পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক এ সম্পকে মুসলমানদের অনুমতি দিয়েছেন তা করার জন্য । মৃত্যুকালে  কিংবা মুত্যুর আগে পরের জন্য নিজ মালিকানার কিছু অংশ নিস্বাথভাবে কাউকে দান করার নাম ওসিয়ত বা উইল ।পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক এ সম্পকে মুসলমানদের আনুমতি দিয়েছেন তা করার জন্য । 
ওছিয়ত সম্পকে আল্লাহপাক পবিত্র কোরআন পাকে বলেছেন :
"তোমাদের মধ্যে কারো মৃত্যুকাল উপস্থিত হরে সে যদি ধনসম্পত্তি রেখে যায় তবে প্রচলিত প্রথমত তার পিতামাতা ও আত্নীয়-স্বজনের জন্য ওসিয়ত  করার বিধান তোমাদেরকে দেওয়া হল ।এটি সাবধানীদের জন্য একটি কর্তব্য ।"(২:১৮০)
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে,মৃত্যুকালে পিতামাতা ও নিকট-আত্নীয়দের জন্য ওসিয়ত বা উইল করা অবশ্য করণীয় ।
আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনের সূরা আন নিসায় ১২নম্বর আয়াতে বলেছেন "অছিয়ত পূর্ণ করার পর যেই অছীয়ত করা হইয়াছে, অথবা ঋণ (শোধ)-এর পর, এই শতে যে,(অছিয়্যতকারী ওয়ারেছদের )কাহার ও ক্ষতি না করে, এই নিদের্শ আল্লাহর তরফ হইতে করা হইয়াছে ।"
পবিত্র কোরআনের শানে -নুযুলে বলা হয়েছে -ওসিয়্যত অথে সেই ওসিয়্যত্‍ই বুঝিতে হইবে যাহা শরীয়ত সন্মত হয় ।অথাত্‍ , ওসিয়্যত ওয়ারিশের জন্য না হওয়া এবং কাফন-দাফনের ও ঋণ পরিশোধের পর অবশিষ্ট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের আতিরিক্ত না হওয়া চাই ।ঋণ ও ওসিয়্যতের মধ্যে ঋনকে অগ্রাধিকার দিতে হয় ।এ সম্পকে আরো বলা হয়েছে -ওসিয়্যত যদি অসদুদ্দেশ্য হয়,যেমন ওয়ারিশদের মধ্যে একজনকে ঠকাইয়া অন্যজনকে বেশী দেওয়ার উদ্দেশ্যে হয়, তবে ইহাও কাযকরী হইবে না ।ওয়ারিশদের অংশ কম করার উদ্দেশ্যে অন্য কোন সত্‍কাযের্ জন্য ওসিয়ত্‍ করিলে বাহ্যত: তাহা কাযকরী হইবে বটে; কিন্ত ওসিয়ত্‍কারী গোনাহগার হইবে ।
কতখানি সম্পত্তি উইল করা যায় এ সম্পকে আল কুরআন নীরব ।মিশকাতের একটি হাদীছে দেখা যায় যে, রাসুলুল্রাহ (দ:)এক সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত ওসিয়্যত করার অনুমতি দিয়েছেন ।
ইবনে আব্বাছ (রা:) হতে বণিত আছে, তিনি বলেছেন, আল্লাহর রাসূল এরশাদ করেছেন, প্রকৃত উত্তরাধিকারীকে তার জন্য নিধারিত অংশ প্রদান কর।তারপর যা কিছু অবশিষ্ট থাকে তা পাবে ঘনিষ্ঠ উত্তরাধিকারীগণ ।
সায়াদ ইবনে আক্কাস বলেন,শেষ হজ্জের বছরে রাসুলুল্লাহ (সাল্রালাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) আমাকে অনেকবার মক্কাতে দেখতে এসেছেন ।আমি খুব অসুস্থ ছিলাম, সেই কারণে তিনি এসেছিলেন ।আমি রাসুলুল্লাহ (দ:) কে বললাম :আমার মাত্র  একটি কন্যা সন্তান আছে, আর কেউ নেই ।আমার সম্পত্তি প্রচুর ।
আমার কেউ নেই ।আমার অসুখ ও বেড়ে যাচ্ছে ।আমি কি আমার সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ দাতব্য কাজের জন্য উইল করে যাব ?
রাসুলুল্লাহ (দ:) বললেন: না, আমি বললাম: অধেক ।রাসুলুল্লাহ (দ:) বললেন, না ।তারপর বললেন, তিন ভাগের এক ভাগ দিয়ে যাও ।যতটুকুই দাও না কেন তার জন্য আল্লাহ তোমাকে পুরস্কার দিবেন । আর তোমার ওয়ারিশদের ভিখারী করে রেখে যেও না, সেটা ভালো নয় ।
কাজেই উপরোক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটি পরিস্কার যে ইসলামী আইনের বিধান মোতাবেক এক তৃতীয়াংশের বেশী উইল করা যায় না ।কোন মুসলমানের  সম্পত্তি  তার মৃত্যুর  পর কিভাবে পরিচালিত বা প্রাপ্ত হবে,  সেই মমে তার সম্পত্তি সম্পকে তার অভিপ্রায়ের আইনগত ঘোষণাই হলো উইল বা অছিয়ত ।
ইসলামী আইনে কোন ব্যক্তিকে সমগ্র সম্পত্তি দান করা যায় কিন্ত এক তৃতীয়াংশের বেশী উইল করা যায়না ।হেদায়া বলে, উইল করা আইনসঙ্গতম তবে তা একটি সীমার মধ্যে ।উইল করার অধিকার মুসলিমদের দুটি বিশেষ সীমার মধ্যে নিয়ন্ত্রিত। প্রথমত, সে তার সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের অধিক সম্পত্তি উইল করতে পারেনা ।দ্বিতীয়ত, সে তার ওয়ারিশদের বরাবরে উইল করতে পারেনা ।

মুসলিম আইনে উইল সংক্রান্ত বিষয়

উইলের ফরম: উইলের জন্য ইসলামী আইনে নিদিষ্ট কোন ফরম নেই।মুসলিমের উইল লিখিত না হলে ও চলে, মৌখিক উইল ও আইনগতভাবে সিদ্ধ।তবে সংগত কারণে প্রায় সবক্ষেত্রে উইল লিখিত হয়ে থাকে।লিখিত না হলে অসুবিধা অনেক।মুখের কথার উপর সত্য প্রতিষ্ঠা করা খুবই কঠিন।
উইল লিখিত হলে যে স্বাক্ষরিত হতে হবে এমন কোন কথা নেই।স্বাক্ষরিত হলে প্রত্যায়িত হওয়া আবশ্যক নয়। উইলকারীর অভিপ্রায় বুঝতে পারা গেলেই যথেষ্ঠ। মৃত্যুকালে একটি চিঠি লিখে সম্পত্তির বিন্যাস সম্পকে নিদেশ দিয়ে গেলে সেই চিঠি উইলরুপে গন্য হতে পারে।
লেখা সম্ভব না হলেও ,শুধুমাত্র ইশারা বা ভঙ্গীর মাধ্যমে উইল সৃষ্টি করা যায়।ফতোয়া আলমগীরি বলে, মৃত্যুর সময় এক ব্যক্তি কথা বলতে অক্ষম হয়ে পড়ে।মৃত্যুর পরে তার সম্পত্তির কি ব্যবস্তা হবে তা সে অংগভংগি দ্বারা বুঝিয়ে দেয়।সে কি বলতে চায় তা সকলে বুঝতে পারে। এখানে আইনসংগত উইল সৃষ্টি হয়েছে।মুসলিমের উইল প্রত্যায়িত হওয়া অনাবশ্যক।কারণ কুরআন শরীফে সাক্ষ্য সম্পকে যে কথা আছে তা নিদেশমূলক নয়, উপদেশমূলক।
উইলের সাক্ষ্য: উইলের জন্য স্বাক্ষরের দরকার নেই, এমন কি সত্যায়িত ও।মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশগণ উইল অস্বীকার করলে তা প্রমাণের জন্য দুজন স্বাক্ষী পেশ করতে হবে।
কোনরুপ শর্তযুক্ত করে বা না করে উইল করা যায়।তবে অাইনের ভাষায় উইল হতে হলে,  কোন সুনিদিষ্ট  জিনিসে বা কোন মুনাফায় বা কোন সুবিধাদির মধ্যে আনুতোষিক বা উপহার প্রদানের পদ্ধতিতে উইলকারীর মৃত্যু পযন্ত তা স্থগিত রেখে অধিকার দান করতে হবে। হানাফী আইন মোতাবেক,একজন মুসলমান তার  অন্তেষ্টি ক্রিয়ার ব্যয়ভার ও ঋণ পরিশোধের পর সম্পত্তির অতিরিক্ত বা অবশিষ্টাংশের  এক তৃতীয়াংশের  অধিক উইলের  মাধ্যমে নিস্পন্ন করতে পারেনা। একটি অছিয়ত  নামা বা ইষ্টিপত্রের যতদূর সম্ভব  প্রত্যেকটি অংশের শব্দাবলী পাঠ করে এক অংশের সঙ্গতি রক্ষা করে সামগ্রিকভাবে ব্যাখা করতে হবে  এবং দেখতে হবে যে,উইলটি করা হয়েছে কি না।
উইল কে করতে পারেন: যে কোন সাবালক ও সুস্থভাবে সম্পন্ন পুরুষ বা নারী নিজ সম্পত্তির অংশবিশেষ  অপরের  অনুকূলে উইল করতে পারে।
ক) উইল যেহেতু একটি চুক্তি ,  তাই তা সঠিক হবার জন্য উইলকারীকে সাবালক হতে হবে। ১৮৭৫ সালের  সাবালকত্ব  আইনের বিধান মতে উইল , হেবা ,ওয়াকফ ইত্যাদি  সম্পাদনের ক্ষেত্রে একজন নাবালকত্বের অবসান ঘটে ১৮ বছর বয়সে ,১৫ বছরে নয়। অথাত্‍ উইলকারী অবশ্যই সাবালক হবে। কেউ আদালতের অভিভাবকত্বে থাকলে তাকে ২১ বছর বয়স্ক হতে হবে।
খ) উইলে মুক্ত সম্পত্তি থাকতে হবে। শক্তি প্রয়োগ করে উইল করিয়ে নেওয়া যায়না। নিলে ও তা কাযকরী হয় না।
গ) সুস্থমন: উইলকারীর উইল করার সময় সুস্থ মনের অধিকারী হতে হবে। বিকৃত মস্তিস্কের  হলে হবে না।
ঘ) উইলকারী দেউলিয়া হলে মহাজনের অনুমতি ছাড়া কোন উইল আইনসিদ্ধ হবে না। উইলকারীর ঋণ তার সম্পত্তি হতে পরিশোধ  করতে হবে। পরিশোধের পর কোন অবশিষ্ট সম্পত্তি থাকে তবে তা সে উইল  করতে পারে।
উইলের বৈশিষ্ট্য: মুসলিম আইন অনুযায়ী উইল বা অছিয়ত এর সংজ্ঞা বিশ্লষণ করলে যে বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্য করা যায়, সেগুলো নীচে উল্লেখ করা হলো:
১) মুসলিম আইন আনুযায়ী প্রত্যেক সাবালক ও সুস্থমনা ব্যক্তিই উইল বা অছিয়ত করতে পারে।
২) মুসলিম উইলকে বৈধ করবার জন্য বিশেষ কোন আনুষ্ঠিকতার প্রয়োজন নেই। এটি লিখিত দলিল দ্বারা বা মৌখিক হতে পারে। এ সম্পকে প্রয়োজনীয় বিষয় হলো উইলকারীর ইচ্ছা সুস্পস্টভাবে প্রকাশিত এবং সঠিকভাবে নির্ভরযোগ্য  হতে হবে।
৩) উইলকারী তার যে কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি উইল করতে পারে। কিন্তু উইল যেহেতু উইলকারীর মৃত্যুর পর বলবত হয়, সেহেতু উইলকারী মৃত্যুর সময় অবশ্যই উইলে বনিত সম্পত্তির অস্বিত্ব হবে।

উইল করবার ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা:
মুসলিম আইনের বিধান মতে উইল করবার ক্ষেত্রে নীচের ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে; যেমন :-
১) মুসলিম আইনের বিধান মোতাবেক একজন উইলদাতা যে কোন আগন্তুক ব্যক্তিকে তার সম্পত্তির ১/৩ অংশ এর বেশী উইলমূলে দান করতে পারে না। উইলকারী ১/৩ অংশের বেশী উইল করলেও ১/৩ অংশ কাযকর হবে এবং বাকী অংশ আইনে অগ্রাহ্য হবে  । যে অবশিষ্ট ২/৩ অংশ থাকবে তা স্বাভাবিক ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টন করা যাবে ।
২) মুসলিম আইনের বিধান মতে উইলদাতার মৃত্যুর পর যারা ওয়ারিশ বলে গন্য হবে তাদের বরাবরে কোন সম্পত্তি উইল করতে পারবেনা । কোন সম্পত্তি  ওয়ারিশের বরাবরে  উইল করলে তা বৈধ হবেনা বটে তবে উইলদাতার মৃত্যুর পর তার অন্যান্য ওয়ারিশেরা অনুমোদন বা সন্মতি দেয় তাহলে উইলটি কাযকর বা বৈধ হবে ।
৩) আবার উইলদাতার ঐরুপ কোন উইলে সব ওয়ারিশ যদি অনুমোদন বা সন্মতি না দেয়, তাহলে যারা অনুমোদন বা সন্মতি না দেয় তারা ব্যতীত যারা অনুমোদন করবে বা মেনে নিবে কেবলমাত্র তাদের অংশই সংশ্লিষ্ট উইলগ্রহীতা প্রাপ্ত হবে ।উত্তরাধিকারীদের সন্মতি অবশ্যই উইলকারীর মৃত্যুর পরে প্রদান করতে হবে এবং উইলকারীর জীবদ্দশায় প্রদত্ত সন্মতি অবৈধ হবে ।উইল দলিল রেজিষ্ট্রী করলেই তা বৈধ বলে ধরে নেয়া যায় না।উইলে সন্মতি দানের ক্ষেত্রে নীরবতা সন্মতি বলে ধরে নেয়া যাবে না ।উইল করা হয়নি এবং উইল করার সময় বিদ্যমান ছিল না তাতে সন্মতির প্রযোজন নেই ।
যদি কিছু উত্তরাধিকারী নাবালক থাকে,তবে তারা সাবালক হওয়ার পর উইলে সন্মতি বা অসন্মতি দিতে পারে ।তাদের নাবালকত্বের সময় অভিভাবকগণ কতৃক প্রদত্ত সন্মতির কোন বৈধতা নেই এবং এ অবস্থায় তারা সাবালক হওয়ার পর উইলের বৈধতা সম্পকে বিবাদ করতে পারে ।অতএব, কোন মা যদি নাবালক সন্তানের পক্ষে সন্মতি দেয় তবে যতদূর সন্তান সংশ্রিষ্ট , ততদূর পযন্ত উইলটি অকাযকর হবে ।একমাত্র উইলকারীর মৃত্যুর পরেই সন্মতি কাযর্কর হবে; সুতরাং উইলের উদ্দেশ্যে উইলকারীর মৃত্যুর সময় যারা উত্তরাধিকারী থাকেন তারাই উত্তরাধিকারী বলে গন্য হবেন,  এবং উইল করার সময় যারা ছিলেন তারা নয় ।
বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে উইল সম্পকিত বিষয়টি বোঝা যাবে :
) সমস্যা: করিম এর পুত্র ও কন্যা আছে ।তিনি উইল করে ২৫,০০০.০০ টাকা তার কনিষ্ঠ পুত্রকে এবং আর ও ২৫,০০০ টাকা শাহেদ নামে একজন অনাত্নীয়কে দান করেন ।তিনি ৭৫,০০০.০০ টাকার নীট সম্পত্তি রেখে মারা যান ।তার মৃত্যুর পর তার জ্যেষ্ঠপুত্র ও কন্যা উইল কাযকরী করতে অস্বীকার করল ।
সমাধান: কনিষ্ঠ পুত্রের অনুকূলে ২৫,০০০ টাকার সম্পত্তি উইলের মাধ্যমে দান বৈধ হবে । যদি অবশিষ্ট উত্তরাধিকারীগন তা উইলদাতার মৃত্যুর পর অনুমোদন করে ।প্রম্নমতে, জেষ্ঠপুত্র ও কন্যা উইলটি অনুমোদন করতে অস্বীকার করেছিল । সুতরাং কনিষ্ঠ পুত্রের আনুকূলে উইলটি বাতিল হবে ।
একজন অনাত্নীয় শাহেদ উইলের মাধ্যমে ২৫,০০০টাকা পেয়েছে ।তার প্রাপ্ত অথের্র পরিমাণ উইলদাতার কাছে সম্পত্তির ৭৫,০০০.০০টাকার এক তৃতীয়াংশের অধিক নয়।সুতরাং উইলটির দান বৈধ হবে ।
২) সমস্যা: সাদেক একজন হানাফী মুসলমান, তার সহোদর ভাইয়ের অনুকূলে ৬০০০টাকা প্রদানের একটি উইল করে ।১০-১০-১৯৯৫ তারিখে সাদেক তার স্ত্রী , এক পুত্র, এক কন্যা, এক মৃত পুত্রের পুত্র, এক মৃত কন্যার কন্যা এবং তার সহোদর  ভাইকে রেখে মারা যায় ।মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির মূল্য বেড়ে দাড়ায় ১২,০০০টাকা ।
সমাধান: এক্ষেত্রে সাদেক এর মৃত্যুকালে তার পুত্র বর্তমানে থাকায় সহোদর ভাই ওয়ারিশ না হয়ে আগন্তক শ্রেণীভুক্ত হবে ।উইলটি সাদেক এর অন্যান্য ওয়ারিশান সন্মতি দিয়েছিল কিনা তা বলা হয়নি ।তারা সন্মতি না দিয়ে থাকলে উইলটি সম্পূর্ণ কাযর্কর হবে না এবং বাকী ৮,০০০টাকা ওয়ারিশদের মাঝে বন্টিত হবে ।সাদেক ১০-১০-১৯৯৫ তারিখে মারা যাওয়ায় মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান এক্ষেত্রে প্রযোজ্র্য হবে এবং ওয়ারিশদের অংশ হবে নিম্নরুপ :
স্ত্রী      - ১/৮ = ৬/৪৮ (কারণ সন্তানদি বর্তমান)                 =১,০০০.০০
একপুত্র  -৭/৮ এর ২/৬   =১৪/৪৮                               =২,৩৩৩.৩৩
এক কন্যা ৭/৮ এর ১/৬  =৭/৪৮                                 =১,১৬৬.৪৭
এক মৃত পুত্রের পুত্র-৭/৮ এর ২/৬=১৪/৪৮                       =২,৩৩৩.৩৩
এক মৃত কন্যার কন্যা ৭/৮ এর ১/৬ =৭/৪৮                     =১,১৬৬.৬৭
সহোদর ভাই-পুত্র বর্তমানে বঞ্চিত                            .....................
৮,০০০.০০
পক্ষান্তরে "সাদেক" এর ওয়ারিশেরা উইলটিতে সন্মতি দিয়ে  থাকলে উইলটি সম্পূর্ণ অথাত্‍ ৬,০০০.০০ টাকা পযন্ত কাযকর্র হবে এবং বাকী ৬,০০০.০০ টাকা ওয়ারিশদের মধ্যে মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান মোতাবেক নিম্নবণির্তভাবে বন্টিত হবে :
স্ত্রী  _   ১/৮      = ৬/৪৮ (কারণ সন্তানাদি বর্তমান)         = ৭৫০.০০
এক পুত্র - ৭/৮ এর ২/৬ = ১৪/৪৮                            =১৭৫০.০০
এক কন্যা -৭/৮ এর ১/৬ = ৭/৪৮                              = ৮৭৫.০০
এক মৃত পুত্রের পুত্র - ৭/৮ এর ২/৬ =১৪/৪৮                = ১৭৫০.০০
এক মৃত কন্যার কন্যা - ৭/৮ এর ১/৬                           =  ৮৭৫.০০  
সহোদর ভাই পুত্র     বর্তমানে বঞ্চিত                         ................
                                                             ৬০০০.০০
৩) সমস্যা: কবির মৃত্যর আগে তার স্ত্রীর অনুকূলে ২০,০০০.০০ টাকার একটি উইল করেন । মৃত্যর পর তার দুই পুত্র উক্ত উইলে তাদের সন্মতি দেয় কিন্তু তার দুই মেয়ে এতে সন্মতি দেয় নাই।কবির তার স্ত্রী, দুই পুত্র এবং দুই কন্যা ৩,০০০.০০টাকার আদত মূল্যের সম্পত্তি রেখে মারা যান ।
সমাধান: এ উইলটির কোন আইনগত মূল্য নাই ।কারন, কবির তার  সব ওয়ারিশদের  সন্মতি ছাড়াই এক তৃতীয়াংশের অধিক সম্পত্তি তার স্ত্রী সপক্ষে উইল করেছে ।কবিরের সম্পত্তি ৩,০০০.০০ টাকার মধ্যে কবির তার স্ত্রীর অনুকূলে ২,০০০.০০টাকার একটি উইল করেছেন,যাতে তার পুত্র সন্মতি দিলে ও দুই কন্যা সন্মতি প্রদান করেন নাই । অতএব উইলটি বৈধ নয়।       

উত্তরাধিকারীদের সন্মতি প্রকাশ্য বা পরোক্ষ ও হতে পারে । যেইক্ষেত্রে দেখা যায় যে, উত্তরাধিকারীগন প্রায় ৭৫ বত্‍সর যাবত্‍ উইলটি চ্যালেঞ্জ করেন নাই,সেক্ষেত্রে তারা এতে পরোক্ষভাবে সন্মতি দিয়েছেন বলে গন্য হয় ।সন্মতি প্রদানকারী উত্তরাধিকারীগণকে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং বোধশক্তি সম্পন্ন হলেই চলবে এবং তারা দেউলিয়া হলেও তাতে কিছু আসে যায় না ।
৪) কোন মুসলিম তার অন্যান্য ওয়ারিশদের বঞ্চিত করে কেবলমাত্র একজন ওয়ারিশ বরাবরে উইল করতে পারেনা ।
৫) উইলকৃত সম্পত্তিটি উইলকারীর পক্ষে আইনানুযায়ী হস্তান্তরযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
৬) উইলকারী কতৃক উইলটি শর্ত সাপেক্ষে হলে তা উইলের সাথে সংযুক্ত করে দিতে হবে ।
৭) যদি কোন উইলকারী তার মৃত্যুর সময় জন্মগ্রহন করেনি এমন কোন ব্যক্তির বরাবরে উইল করে, তবে উক্ত উইল বৈধ হবে না । কিন্তু উইল করবার দিন হতে ৬ মাসের মধ্যে ভুমিষ্ট হলে মাতৃগভের সন্তানের বরাবর উইল বৈধ বলে গণ্য হবে ।
৮) উইলদাতা ভবিষ্যতে পাবে এমন কোন সম্পত্তি উইল করতে পারে না।
মুসলিম আইনের বিধান মতে, কোন ভাবী উত্তরাধিকারীকে উইল করা যায়না । যদি কেউ উইল করবার সময় উত্তরাধকারী থাকে এবং উইলদাতার মৃত্যুর সময় যদি না থাকে, তাহলে একে সম্পত্তির ১/৩ অংশ উইল করা হলে তা বৈধ হবে ।আবার যদি কেউ উইল করার সময় ওয়ারিশ না থাকে, কিন্তু উইল দাতার মৃত্যুর সময়ে ওয়ারিশে পরিণত হয়, তাহলে সে উইলমূলে কোন সম্পত্তি পাবেনা। এধরনের উইল আইনবিরোধী হবে ।তবে উইল করবার সময়ে যদি কেউ ওয়ারিশ না থাকে, তাহলে উইলে তার অংশ বৈধ থেকে যাবে ।বিষয়টি পরিস্কারভাবে বোঝার জন্য নীচের উদাহরন দেয়া হলো:
ক) জাহেদের একটি ভাই ও বোন আছে ।জাহেদ তার ভাইকে কিছু সম্পত্তি উইল করলো ।জাহেদের জীবিতকালেই তার একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করলো ।
এমতাবস্থায় ফারায়েজ অনুসারে ভাই আর ওয়ারিশ হলোনা ।সুতরাং ভাইয়ের বরাবর উইলটি বৈধ বলে গন্য হবে ।রহিমের ভাই ১/৩ অংশ পযন্ত  উইলের বলে দাবী করতে পারবে ।জাহেদের পুত্র সন্তানটি জন্মগ্রহণ না করলে তা বৈধ হত না । কারণ ভাই মৃত ব্যক্তির পুত্র সন্তান বা পিতা না থাকলে ভাবী ওয়ারিশ থেকে যেত ।
খ) মারুফের এক পুত্র, স্ত্রী এবং পিতৃহীন এক পৌত্র আছে ।মারুফ তার সম্পত্তির ১/৩ অংশ পৌত্রকে অথাত্‍ নাতিকে উইল করলো এমতাবস্থায় উইল বৈধ হবে, কারণ  পুত্র বতর্মানে কোন মৃত পুত্রের পুত্র অথাত্‍ পৌত্র সম্পত্তি প্রাপ্ত হয়না ।আবার ১৯৬১ সালের ১৫ই জুলাই এর পরে মারুফ মারা গেলে তার আগে মুত পুত্রের পুত্র ওয়ারিশ হবে এবং পৌত্রের বরাবরে উইল বৈধ হবেনা ।
অতএব উপরোক্ত আলোচনায় বিচায বিষয় হচ্ছে যে, উইলের সময় কে ওয়ারিশ হবে বা না হবে তা নির্ণয় করতে হবে উইলদাতার মৃত্যুর পর ।

কার অনুকুলে উইল করা যায়:
মুসলিম আইনের বিধান মতে যার অনুকূলে উইল করা হয় তাকে উইল প্রাপক বা আরবীতে মুছালাহ বলে ।কাকে উইল করা যায় আরো অনেক প্রশ্ন  এসে
যায় । যেমন
১) অজ্ঞাত সন্তান বা যে সন্তান জন্ম গ্রহণ করেনি তার অনুকূলে উইল করা যায় কি ?
২) একজন অমুসলিমের অনুকূলে উইল কি আইন সিদ্ধ ?
৩) হত্যাকারীর বরাবরে উইল করা যায় কি না ?
৪) একাধিক ব্যক্তির অনুকূলে উইল কি সঙ্গত ?
১) অজাত সন্তানের অনুকূলে কৃত উইলের বৈধতা ও কাযর্করীতা:
যদি কোন উইলকারী তার মৃত্যুর সময় জন্মগ্রহন করেনি এমন কোন ব্যক্তির বরাবরে উইল করে, তবে উক্ত উইল বৈধ হবে না । কিন্তু উইল করবার দিন হতে ৬ মাসের মধ্যে ভুমিষ্ট হলে মাতৃগভের সন্তানের বরাবর উইল বৈধ বলে গণ্য হবে । যেক্ষেত্রে উইল গ্রহণকারী ব্যক্তির অনিধার্রিত সন্তান কিন্তু উইলকারীর গতায়ুর সময় অস্তিত্বশীল, এক্ষেত্রে উইল বৈধ হবে। গর্ভস্থ সন্তান যদি জমজ হয় তাহলে উইল সমানভাবে প্রযোজ্য হবে ।
যেক্ষেত্রে উইল গ্রহীতা কোন ব্যক্তির সন্তান হয়, যাকে বা যাদেরকে নিদিষ্ট উল্লেখ করা হয়নি, সে বা তারা যদি উইলকারীর মৃত্যুর সময় বর্তমান থাকে, তাহলে উইলানুক্রমে সম্পত্তির অধিকারী হবে । অজ্ঞাত  ব্যক্তির বরাবরে উইল, উইলদাতার মৃত্যুর সময় উইলগ্রহীতার অস্তিত্ব না থাকলে উইল বিলুপ্ত হবে এবং উক্ত সম্পত্তি উইল দাতার সম্পত্তিতে পরিণত হবে ।
২) অমুসলিমের অনুকূলে উইল:
কোন মুসলিম অমুসলিমের অনুকূলে অনুরুপ কোন অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম ব্যক্তির অনুকূলে উইল করতে পারে ।কেননা মানুষের প্রতি মানুষের সদাচারন প্রদর্শন আল্লাহর নিদের্শ ।
একাধিক ব্যক্তির অনুকূলে উইল:
এক্ষেত্রে দুটি অবস্থার অবতারনা ঘটতে পারে ।যেমন :
ক) একই উইলে একজন উত্তরাধিকারী এবং একজন উত্তরাধিকারী নয় ব্যক্তির অনুকূলে উইল এবং
খ) একের অধিক উত্তরাধিকারী নয় বা উত্তরাধিকারীকে উইল
ক) একই উইলে একজন উত্তরাধিকারী ও একজন উত্তরাধিকারী নয় ব্যক্তির অনুকূলে উইল: এক্ষেত্রে অন্যান্য উত্তরাধিকারীরা সন্মতি না দিলে, উত্তরাধিকারীকে প্রদত্ত দানটি বৈধ হবে না, কিন্তু উত্তরাধিকারী নয় ব্যক্তিকে প্রদত্ত ১/৩ অংশ সম্পত্তির উইল বৈধ হবে ।যেমন রাজিব তার উত্তরাধিকারী এলাহীকে ২/৩ অংশ এর তার উত্তরাধিকারী নয়, আজিজকে ১/৩ অংশ উইল মূলে দান করলো ।রাজিবের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী হালিম ২/৩ অংশ পাবে না যদি অপরাপর উত্তরাধিকারীগণ তাতে সন্মতি দেয় । উত্তরাধিকারী নয় আজিজ ১/৩ অংশ পাবে ।
খ) একাধিক উত্তরাধিকারী নয় ব্যক্তিদের মধ্যে উইল: একাধিক উত্তরাধিকারী নয় এমন ব্যক্তি যত জনকেই উইল করা হোক না কেন মোট সম্পত্তির ১/৩ অংশের অধিক কাযকরী হবে না । তবে সব উত্তরাধিকারীদের ক্ষেত্রে সব উত্তরাধকারীর সন্মতি ব্যতিরেকে কোন সম্পত্তিই উইল মূলে কারোর বরাবরে হস্তান্তরিত হবে না ।
** উত্তরাধিকারীগণ যদি একবার উইলকারী ১/৩ অংশের বেশী সম্পত্তির উইলে সন্মতি দেয় তাহলে তা আর বাতিল করা যাবে না ।
** সম্মতি প্রকাশ্য না হলেও চলে, দাতার আচরণে নিদিষ্ট এবং দ্ব্যথহীন মনোভাব ব্যক্ত হলেই হয় । যেমন :
** "কালাম "তিনটি বাড়ী বিশিষ্ট সমগ্র সম্পত্তি উত্তরাধিকারী নয় এমন ব্যক্তির বরাবরে উইল করেছিল ।তার  উত্তরাধিকারী দুই পুত্র তা সত্যায়িত   করল ।তার মৃত্যুর পর উইলগ্রহীতা উইলকৃত সম্পত্তি ভোগ দখল করতে লাগল ।এতে দুইপুত্রের সন্মতি প্রমানিত হয় ।
** উত্তরাধিকারীদের সম্মতি ছাড়া সমগ্র সম্পত্তির উইল বৈধ নয় ।
উইলের বিষয়বস্ত: উইলের বিষয়বস্ত কে আরবীতে মুসাবিহি বলে ।মুসাবিহিকে অবশ্যই অথের দ্বারা পরিমাপযোগ্য বৈধ মাল বা মালের বৈশিষ্টযুক্ত হতে হবে এবং তা উইলকারীর মালিকানায় থাকতে হবে। হস্তান্তরযোগ্য এবং উইলদাতার মৃত্যুকালে বর্তমান এমন যে কোন ধরনের সম্পত্তি উইলের বিষয়বস্ত হতে পারে ।তবে উইল সম্পাদন কালে উইলকৃত সম্পত্তি উইলদাতার মালিকাধীন না থাকলেও মৃত্যুকালীন সময়ে তা তার হাতে থাকতে হবে।
যখন কোন মুসলিম মারা যায়, তখন তার সম্পত্তি  থেকে প্রথমে তার দাফন-কাফনের খরচ নেওয়া হবে তারপর তার দেনা পরিশোধ করা হবে ।তারপর যা অবশিষ্ট থাকবে, সেটুকুই তার নীট সম্পত্তি । এই নীট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের বেশী উইল করা যায়না। একটি উদাহরনর মাধ্যমে বিষয়টি বোঝা যাবে -
ওমর সাড়ে তিন হাজার টাকা রেখে মারা যান ।একশত টাকা তার দাফনে কাফনে খরচ হয় এবং চারশত টাকা তার দেনা পরিশোধে ব্যয় হয় । অবশিষ্ট থাকে তিন হাজার টাকা । এই তিন হাজার টাকার তিন ভাগের এক ভাগ অথাত্‍ এক হাজার টাকা উইল করা যায় ।
উইলের বিষযবস্ত, উইলের উদ্দেশ্যের প্রেক্ষিতে, তিন শ্রেণীর হতে পারে ।যেমন :
ক) ফরজ কাজের জন্য উইলমূলে দান ।
খ) ওয়াজিব কাজের উদ্দেশ্যে দান ।
গ) নকল কাজের উদ্দেশ্যে দান ।
 
উইল সংক্রান্ত কতিপয় বিষয়:
ক্রমিক গ্রহীতার বরাবরে উইল: একাধিক গ্রহীতার বরাবরে একটি বৈধ উইল করা যাবে।যদি বিভিন্ন উইল গ্রহীতার বরাবরে ক্রমিক উইল করা হয় এবং পূববতী উইল ব্যর্থ হয়, তবে পরবতী উইল ও ব্যথ হবে।কিন্তু এটি কেবল এইক্ষেত্রে ঘটবে যদি উইলকারীর প্রকৃত উদ্দেশ্য পূববতী এবং পরবতী উভয় গ্রহীতারই কল্যাণ বা উপকার, কিন্তু যদি উইলকারীর প্রকৃত উদ্দেশ্য পরবতী উইল গ্রহীতার উপকার করা এবং পূববতী গ্রহীতা কেবলমাত্র সম্পত্তিতে সীমিত স্বার্থ গ্রহণ করে, তবে পূববতী উইলের ব্যথর্তার কারনে পরবতী উইলটি অকার্যকর হবে না। মুসলিম আইনে উইল গ্রহীতার জীবনকালের জন্য উপস্বত্বের উইল বৈধ হবে।
শর্তসাপেক্ষে উইল দ্বারা সম্পত্তি প্রদান: কোনরুপ শর্তযুক্ত করে বা না করে উইল করা যায়।তবে অবৈধ শর্তযুক্ত করলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে এবং উইল সম্পূর্ণভাবে অকার্যকর হবে।
এমন কোন শর্তসাপেক্ষে সম্পত্তি প্রদান করলে যা উইলটিকে সম্পূর্ণ হতে বাধা প্রদান করে, তাহলে তা পরিপূর্ণ মালিকী স্বত্ব এমনভাবে অর্পণ করবে, যেন কোনরুপ শর্তই আরোপিত হয়নি -এই শতে যে,উইল দাতা উইলের অধীনে ক্রমিক গ্রহীতা নিয়োগের মাধ্যমে জীবন স্বত্ব সৃষ্টি করতে পারেন।সময়ের বিবেচনায় সম্পত্তির উপস্বত্ব সীমিত স্বার্থ সৃষ্টি করা যায় এবং বস্তুর দখল এভাবে যেকোন সীমিত স্বার্থ সাপেক্ষ হতে পারে।
উইলে বিকল্প অর্পণ: একটি বিকল্প উইল বা উইলে বিকল্প অর্পণ বৈধ।এক ব্যক্তি তার কন্যার বরাবরে উইলে সম্পত্তি প্রদান করলো এবং তার মৃত্যুর সময় কন্যা মৃত থাকলে কন্যার সন্তানগণ সম্পত্তি পাবে।এই ধরনের উইল বৈধ এবং কন্যার মৃত্যুর কারণে তার সন্তানগণ উইল মূলে সম্পত্তি প্রাপ্ত  হবে।যেমন অপুত্রক কোন রাশেদ মেনন তার সম্পত্তির অবশিষ্টাংশটি উইলে এভাবে দান করলো, "আমার কোন পুত্র সন্তান হলে এবং সে আমার মৃত্যুকালে জীবিত থাকলে, আমার সম্পত্তির অবশিষ্টাংশটুকু তাকে দেবে, কিন্তু যদি ঐ পুত্র আমার জীবদ্দশায় কোন পুত্র সন্তান রেখে মারা যায় এবং উক্ত পোত্র যদি আমার মৃত্যুকালে জীবিত থাকে তাহলে আমার নিবাহকগণ সম্পত্তির উক্ত অবশিষ্টাংশটি দান হিসেবে প্রয়োগ করবে।উইলকারী কোন পুত্র না রেখেই মারা গেল, স্থির হয় যে দানটি ভবিষ্যত শর্তযুক্ত নয়।এটি একটি বিকল্প দান।তাই অবশিষ্টাংশটুকু দান হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
উইলের নিবার্হক: উইলকারী স্বীয় ইচ্ছামত উইলের নিবার্হক নিযুক্ত করতে পারেন।কোন ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি দেখাশুনা করার জন্য যাকে নিয়োগ করেন তাকে ওসী বা নিবাহক বলে।কোন ব্যক্তি নিবাহক নিযুক্ত না করে মারা গেলে আদালত একজন নিবাহক নিযুক্ত করেন।নিবার্হক নারী পুরুষ উভয়ই হতে পারে।একজন মুসলমান তার উইলের নিবাহক হিসেবে একজন খ্রীষ্টান, হিন্দু বা কোন অমুসলমানকে নিযুক্ত করতে পারেন। একাধিক ব্যক্তি নিবাহক নিযুক্ত হলে প্রত্যেককেই যৌথভাবে কাজ করতে হবে। 
উইলের প্রবেট: কোন উইল সরকারীভাবে কায়েম করতে হলে আদালতের কাছ হতে যে স্বীকৃতি নিতে হয় তাকেই প্রবেট বলে।প্রবেট ছাড়া আদালত উইল গ্রহণ নাও গ্রহন করতে পারেন।একজন মুসলমান কর্তৃক সম্পাদিত উইল যখন যথাযথ প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হবে, তখন কোন প্রবেট লাভ না করলেও তা সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হবে।
উইলের প্রশাসনপত্র: ১৯২৫ সালের উত্তরাধিকার অাইনের ২১২(২) অনুযায়ী মৃত ব্যক্তি স্ব-সম্পত্তির প্রাপ্য সংক্রান্ত বিষয় ব্যতীত, উইল না করে কোন মুসলমান মারা গেলে তার সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কোন প্রশাসন পত্রের আবশ্যকতা নেই।
উইলে সম্পত্তি হ্রাস: আইনানুগ উইল প্রদত্ত সম্পত্তি ১/৩ অংশের অধিক হলে এবং উত্তরাধিকারীগণ তাতে সন্মতি প্রদান না করলে, প্রত্যেক উত্তরাধিকারীর প্রাপ্যংশ্যের অনুপাতে উক্ত সম্পত্তি হ্রাস পাবে।একটি উদাহরনের মাধ্যমে বিষয়টি পরিস্কার বোঝা যাবে :
 জাহেদ উইল দাতা তার সম্পত্তির ১/২ অংশ মাজেদকে এবং রফিককে ১/৪ অংশ উইল করে দেয়।এখানে যেহেতু দুজনের উইলকৃত সম্পত্তির ১/৩ অংশের অধিক পরিমাণ বিধায় তাদের অংশ আনুপাতিক হারে হ্রাস পাবে।যেমন :
 মাজেদ পাবে: ১/৩*২/৩ = ২/৯ এবং রফিক পাবে : ১/৩*১/৩=১/৯
অথাত্‍         ২/৯+১/৯  = ৩/৯ = ১/৩
আকস্মিক দান: ঘটতে পারে এমন বিষয়ে উইল বৈধ নয়।
উইল রদ বা প্রত্যাহার করণ: মুসলিম আইনের বিধান মতে তার কৃত উইল প্রত্যাহার বা বাতিল করতে পারে। উইরকারী তার জীবদ্দশায় যে কোন সময় তার কৃত উইল প্রত্যাহার বা বাতিল করতে পারে।কারন এটি তার জন্য বাধ্যতামূলক চুক্তি নয় এবং এর গ্রহন তার মৃত্যুর পরেই অনুষ্ঠিত হয়।গ্রহণের আগে তা কাযকরী হয় না।সুস্পষ্ট বাক্য দ্বারা বা কাযকালের মাধ্যমে উইল প্রত্যাহার করা যায়।
উইলদাতা নিজে উইলের দান অস্বীকার করলে উইলটি বাতিল হবে কিনা সন্দেহ আছে, বাতিল না হবার অভিমতটিই গ্রহণযোগ্য মনে হয়।উইলকারীর মৃত্যুর পর হতে তা কাযকরী হয়ে থাকে।
অর্ন্তনিহিতভাবে উইল রদ: দাতার কোন কাজের মাধ্যমে উইলের বিষয়বস্তুর সম্প্রসারণ বা মালিকানার বিলুপ্তি হলে উইলটি অন্তনিহিতভাবে রদ হয়ে যায়।যেমন :
ক) উইলকৃত জমির উপর উইলদাতা নতুনভাবে বাড়ী নিমাণ করলে তা বাতিল হয়ে যায়।
খ) উইলকৃত কোন ধাতব পদার্থ রুপান্তর করে কোন পাত্র প্রস্তুত করলে।
গ) উইলকৃত বাড়ীটি বিক্রিমূলে বা দানমূলে হস্তান্তর করলে।
পরবতী উইল দ্বারা উইল রদ: আগের উইলকৃত বস্তু বা সম্পত্তিটি যদি উইলকারী পরে অন্যের বরাবরে উইল করে তবে আগের উইলটি বাতিল হয়ে যাবে।তবে একই সম্পত্তি একই উইলে আগের দুব্যক্তিকে উইল মূলে দান করলে প্রথমোক্তটি বাতিল হবে না।উইলগ্রহীতাগণ তা সমান দুইভাগে ভাগ করে নেবে।
উইল গ্রহীতা উইলদাতার আগেই মারা গেলে: উইল গ্রহীতা যদি উইলকারীর আগেই মারা যায় উইলটি বিলুপ্তি হবে এবং উইলকৃত সম্পত্তি উইল দাতার সম্পত্তিতে পরিণত হবে।
অন্যান্য কারণ:
) উইল সম্পত্তি অন্যের মালিকানা ভুক্ত হলে;
খ) উইল গ্রহীতা উইল দাতার মৃত্যুর পর উইলকৃত সম্পত্তি গ্রহণে অস্বীকার করলে;
গ) উইলকৃত সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেলে;
ঘ)উইলদাতাকে উইল গ্রহীতা হত্যা করলে;
ঙ) উইলকারী চিরতরে পাগল হয়ে গেলে;
চ)উইলকারী ধর্ম ত্যাগ করলে;
ছ)ইসলামী আইন অনুযায়ী উইল বাতিল হবার মতো কোন অবস্থার অবতারণা ঘটলে।
ইচ্ছাপত্র বা উইল এর মডেল
পরম করুণাময়ের নামে উইলের বয়ান আরম্ভ করিতেছি যে,
আমার বয়স বর্তমানে ৮৫ বত্‍সর হইয়াছে এবং বিগত কয়েকমাস যাবত্‍ আমার শরীর আদৌ ভাল যাইতেছেনা।আমার আশংকা, যে কোনদিন যে কোন সময় আমার জীবনদীপ নিবাপিত হইতে পারে।আমি জীবনে প্রভূত অথ উপার্জন করিয়াছি এবং অনেক সম্পত্তির মালিক হইয়াছি। আমার মৃত্যুর পর আমার পুত্রকন্যা প্রভৃতি আত্নীয়গণের মধ্যে যাহাতে কোন বিবাদ-বিসংবাদ না হয়, তজ্জন্য নিম্নলিখিতরুপে সকলের সম্পত্তি প্রাপ্তির সু-ব্যবস্থা করিলাম।
এই উইল আমার মৃত্যুর পর কাযকরী উইলের 'এক্সিকিউটর' নিযুক্ত করিলাম।
১। আমার পৈতৃক বসতবাটী আমার তিনপুত্র ও স্ত্রীর অধিকারে থাকিবে।
২। নিমতায় আমার একটি বাড়ী এবং চরতলীতে দুইটি বাড়ী আছে। আমার জেষ্ঠপুত্র নিমতার বাড়ী পাইবে।এতদ্বতীত,অগ্রনী ব্যাংক এবং পোষ্ট অফিস সেভিংস ব্যাংক আমার যাহা জমা থাকিবে তাহার এক চতূথাংশ সে পাইবে।
৩। আমার দ্বিতীয় পুত্র .....চরতলীতে অবস্থিত আমার 'রেড রোজ হাউস' নামে দ্বিতল বাড়ীর সম্পূর্ণ স্বত্ব অধিকার পাইবে। এতদ্বতীত, আমার ব্যান্ক এবং পোষ্ট অফিসের নগদ টাকার এক চতূথাংশ ও পাইবে।
৪। আমার কনিষ্ঠপুত্র ........চরতলীতে অবস্থিত আমার 'বিদিশা'নামক দ্বিতলবাড়ীর সম্পূর্ণ স্বত্ব অধিকার পাইবে, এবং তত্‍সহ অামার ব্যান্ক ও পোষ্ট অফিসে গচ্ছিত টাকার এক চতূথাংশ পাইবে।
৫। আমার স্ত্রী..........ব্যান্ক এবং পোষ্ট অফিসে রক্ষিত টাকার এক চতূথাংশ পাইবে।তাহা ছাড়া, তাহার নামে আমি ইউনাইটেড ইন্ডাষ্ট্রিয়াল ব্যান্কের .....শাখায় বসতবাড়ীর যে কক্ষে বর্তমানে বাস করিতেছি সেই কক্ষে সে আমৃত্য বাস করিতে পারিবে।
এতদথে স্ব-ইচ্ছায় অন্যের দ্বারা কোনপ্রকারে প্ররোচিত না হইয়া সুস্থশরীরে সরল অন্ত:করণে অত্র উইলপত্র সম্পাদন করিলাম।
                                         
 
স্বাক্ষী
 

দানে দাতার ক্ষমতার কি কোন সীমাবদ্ধতা আছে: মৃত্যু ব্যধিগ্রস্ত অবস্থায় মোট সম্পত্তির ১/৩ অংশের বেশী দান করতে পারে না। এক্ষেত্রে-নাবালকের দান বাতিল হবে না; অজ্ঞাত ব্যক্তির অনুকূলে দান বাতিল হবে।
বিশ্লেষণ: সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২২ধারায় দানের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।এই ধারায় বলা হয়েছে যে, এক ব্যক্তি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ও কোন প্রকার পণ গ্রহণ না করে কোন অস্থাবর বা স্থাবর সম্পত্তি অপর ব্যক্তিকে হস্তান্তর করলে এবং সেই ব্যক্তি বা কার ও পক্ষে অন্য কেউ তা গ্রহণ করলে তাকে বলা হয় দান। যে ব্যক্তি অনুরূপভাবে সম্পত্তি হস্তান্তর করে তাকে বলা হয় দাতা এবং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করে তাকে বলা হয় দানগ্রহীতা।
আর দান কখন গ্রহণ করতে হবে সে সম্পকে বলা হয়েছে দাতার জীবদ্দশায় এবং সে যখন দান করতে সম্পূণ সক্ষম সেই অবস্থায় অনুরুপ হস্তান্তর গ্রহণ করতে হয়। দান গ্রহণের পূবে দানগ্রহীতার যদি মৃত্যু ঘটে, তাহলে উক্ত দান বাতিল বলে গন্য হবে।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২২ধারাটি বিশ্লেষণ করলে দান এর নিম্নবর্ণিত উপাদানসমূহ লক্ষ্য করা যায়:
(১) দানের মাধ্যমে সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তর করতে হবে।
(২) দাতা কতৃক দানটি স্বেচ্ছা প্রণোদিতভাবে সম্পাদিত হতে হবে।
(৩) কোন প্রকার বিনিময় মূল্য ব্যতীত দানটি করতে হবে।
(৪) দানকৃত সম্পত্তিটির অস্তিত্ব থাকতে হবে।
(৫) যার বরাবরে দান করা হবে, দানটি গ্রহণ করতে হবে।
(৬) কোন নিদির্ষ্ট ব্যক্তির বরাবরেই সম্পত্তি দান করতে হবে।
(৭) যে ব্যক্তি দান করবেন তাকে সম্পত্তি হস্তান্তরের যোগ্য হতে হবে।
(৮) আইনত অযোগ্য ব্যক্তি এবং নাবালক ব্যক্তি কতৃক সম্পাদিত দান বৈধ বলে গণ্য হবে না।
দানের ক্ষেত্রে দাতা দানকৃত বিষয়বস্তু হতে তার সমস্ত অধিকার পরিত্যাগ করবেন। অন্যথায়, দানকৃত সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তরিত হবেনা। আবার দান দাতা কতৃক স্বেচ্ছা প্রণোদিতভাবে হতে হবে।দান এর মধ্যে জোর-জবরদস্তি, বলপ্রয়োগ,শঠতা থাকলে চলবে না।
উল্লেখ্য যে, দাতা কর্তৃক দানটি বিনামূল্যে বা পণবিহীন হতে হবে। কারণ যে হস্তান্তরে কোন বিনিময়মূল্য থাকে তাকে কোনক্রমেই দান বলে গণ্য করা যায় না। আর দানের সম্পত্তি স্থাবর হোক আর অস্থাবরই হোক বাস্তবে তার অস্তিত্ব থাকতে হবে।দানকৃত সম্পত্তিটি দানগ্রহীতা কতৃক গ্রহণ করতে হবে।
উপরন্ত, কোন দান দাতার এবং গ্রহীতার জীবদ্দশায় সম্পাদন করতে হবে এবং গ্রহণ করতে হবে।কারণ কোন ব্যক্তির বরাবরে দান করা হলে যদি দান গ্রহণের পুবেই দানগ্রহীতার মৃত্যু ঘটে, তাহলে অনুরুপ দান সম্পূর্ণ হয় না।মোদ্দাকথা দান সম্পাদনের সময় দাতা ও দানগ্রহীতাকে জীবিত থাকতে হবে।
দাতা এবং দানগ্রহীতাকে সনাক্ত হতে হবে।একটি উদাহরনের মাধ্যমে দান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে: স্বামী তার নিজের এবং স্ত্রীর নামে কিছু অলংকার ব্যাংকে জমা রাখেন এবং ব্যাংককে নিদেশ দেন যে, তাদের মধ্যে যে সবশেষ বেঁচে থাকবেন  তিনি অলংকারসমূহ পাবেন। এ দান নয়,কারণ স্বামী অলংকারের উপর তার অধিকার ত্যাগ করেন নাই।
দানপত্র গ্রহীতা যে দানকৃত সম্পত্তিতে মোটেই দখল পাননি, দানপত্র দলিল আদালতে দাখিল করার পরে তা মৌখিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করা যাবে।
[Jabbar Pramanic vs. Nurjahan Begum]
রেজিষ্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর ১৭ ধারায় দানপত্র রেজিষ্ট্রেশন সম্পকে বলা হয়েছে যে "নিম্নলিখিত দলিলপত্রাদি রেজিষ্ট্রি করিতে হইবে; যদি উহা ঐ জেলায় অবস্থিত সম্পত্তি সম্পকে সম্পাদিত হয় এবং যদি উহা ১৮৬৪ সালের ১৬ নং আইন অথবা ১৮৬৬ সালের রেজিষ্ট্রেশন আইন অথবা ১৮৭১ সালের রেজিষ্ট্রশন আইন অথবা ১৮৭৭ সালের রেজিষ্ট্রেশন আইন কাযকরী হইবার দিনে বা এর পরে সম্পাদিত হয় :
(ক) স্থাবর সম্পত্তির দানপত্র
(খ) উইল ব্যতীত অন্যান্য দলিলপত্র যা একশত টাকা বা তদূধ্ব অথবা কোন স্থাবর সম্পত্তিতে বতমান বা ভবিষ্যত কায়েমী বা সম্ভাব্য কোন অধিকার  স্বত্ব বা সুযোগ-সুবিধা জন্মায়, ঘোষণা করে, অর্পণ করে, সীমাবদ্ধ করে বা নি:শেষিত করে।"
Act No.XVI of 1908 এর Section এর সংশোধন। - The Registration Act ,1908(Act No.XVI of 1908),অত:পর Act বলিয়া উল্লেখিত, এর সবত্র "of the value of one hundred taka and upwards,''শব্দগুলি ও কমাটি বিলুপ্ত হইবে।
ক) Section 17 এর sub section (1) সংশোধন। ২০০৪ সালের ৭ই ডিসেম্বর রেজিষ্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর ১৭ ধারার, ১ উপধারার শাখ (a)এর সাথে শাখা ( aa) সন্নিবেশিত হয়েছে, এতে বলা হয়েছে ''(aa)declaration of  heba under the Muslim Personal Law (Shariat)'';
কখন দান গ্রহণ করতে হবে: দানকতার্র জীবদ্দশায় এবং সে যখন দান করতে সম্পূর্ণ সক্ষম থাকবে, সে অবস্থায় অনুরুপ হস্তান্তর গ্রহন করতে হবে।দান গ্রহনের পূবে দান গ্রহীতার যদি মৃত্যু ঘটে, তাহলে উক্ত দান বাতিল হবে।

দানের প্রকারভেদ:
মুসলমানদের মধ্যে দান তিন ধরনের হয়ে থাকে।যথা:
(১) হেবা অথাত্‍ সাধারণ দান;
(২) হেবা-বিল-এওয়াজ অথাত্‍ কোন কিছুর বদলে দান; এবং
(৩) হেবা বা শরতুল -এওয়াজ অথাত্‍ প্রতিদিনের শর্তযুক্ত দান।
১) হেবা অর্থাত্‍ সাধারণ দান: সাধারণভাবে হেবা বলতে শর্তবিহীনভাবে ও স্বেচ্ছাপ্রনোদিত হয়ে  বিনিময়মূল্য ছাড়া এক ব্যক্তি কতৃক অন্য ব্যক্তিকে কোন সম্পত্তির হস্তান্তর।একটি সাধারণ দান বৈধ হওয়ার জন্য  আবশ্যকীয় শর্তসমূহ হল এই যে, (এক) দাতা কতৃক দানের বিষয়বস্ত গ্রহীতার বরাবরে হস্তান্তর করবার ইচ্ছা দানের ঘোষণা;(দুই) দান গ্রহীতা কতৃক স্বয়ং অথবা তত্‍পক্ষে কাহারো দ্বারা দান গ্রহণ ;(তিন)দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দানের বিষয়বস্তর দখল অর্পণ করা।যদি উপরোক্ত শর্তগুলো পালন করা হয়,তাহলেই দানটি সম্পূর্ণভাবে বৈধ হবে।মুসলিম আইন বিশেষজ্ঞ আমীর আলীর মতে, বৈধ দানের আবশ্যকীয় শর্তগুলো হলো:(ক) দাতার পক্ষে ইচ্ছার বহি:প্রকাশ (খ) গ্রহীতার পক্ষে পরোক্ষ বা প্রতক্ষ্যভাবে দান গ্রহণ এবং (গ) গ্রহীতা কতৃক প্রকৃতভাবে বা অনুমানসিদ্ধভাবে দানের বিষয়বস্ত গ্রহণ করা।এর অর্থ হলো যে, দাতা কতৃক দানের বিষয়বস্তকে গ্রহীতার কাছে অর্পণ করত: নিজে স্বত্ব ও দখলত্যাগী হবার জন্য একটি সত্‍ মনোভাব থাকতে হবে এবং সেঅনুযায়ী কাজটি সম্পন্ন হতে হবে।
হেবা ও দানের মধ্যে প্রকৃতিগত কোন পাথর্ক্য নেই।কিন্তু পদ্ধতিগত কিছু পার্থক্য পরিদৃষ্টি হয়।যেমন:
হেবা সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের বেলায় প্রয়োজন নয়।কিন্তু দানটি সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ধারা ১২৯ এ বিষয়ে উল্লেখিত হয়েছে।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের বিধান মতে একটি দান লিখিত,সাক্ষী কতৃক সমথির্ত ও রেজিষ্ট্রীকৃত হতে হবে।তাত্‍ক্ষণিক দখল না করলে ও চলবে।কিন্তু মুসলিম আইনে হেবার ক্ষেত্রে মোখিক বা লিখিতভাবে দানের বিষয়বস্তু দাতা কর্তৃক দান গ্রহীতার বরাবরে দখল করলেই হয়।
হেবা বিল এওয়াজ: স্নেহ, ভালোবাসা,মমতা,শ্রদ্ধা ইত্যাদি মানবীয় গুণাবলী একজন মানুষকে হেবা বা দান কায সম্পাদনে উদ্ধুদ্ধ করে। আর যখনই একজন মানুষ অপর একজন মানুষের প্রতি স্নেহ ভালোবাসা আপ্ললিত হয়ে তার স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বিনা শতে অর্পণ করে তখন স্বভাবতই উক্ত দানগ্রহীতা দাতার মহানুভবতায় বেশী মুগ্ধ হয়ে দাতাকে খুশী করার জন্য কিছু সামর্থানুযায়ী উপঢৌকণ বা উপহার প্রদান করে।মূলত এ প্রত্যয় থেকেই হেবা বিল এওয়াজের উন্মেষ। হেবা বিল এওয়াজ অর্থ হলো কোন কিছু প্রতিদানের বিনিময়ে দান। সুতরাং দাতা যদি কোন সম্পত্তি দান করে দানগ্রহীতার কাছ হতে এর বিনিময়ে কিছু গ্রহণ করে, তখন  এধরনের দানকে মুসলিম আইন মোতাবেক হেবা-বিল -এওয়াজ নামে অভিহিত করা হয়।হেবা বিল এওয়াজ দুটি শব্দ।হেবা +এওয়াজ, হেবা অর্থ দান এবং এওয়াজ অর্থ বিনিময়।অতএব হেবা বিল এওয়াজ অর্থ বিনিময় দান। নআইন বিশেষজ্ঞ ডি.এফ.মুল্লার মতে হেবা বিল এওয়াজ হলো প্রতিদানের জন্য প্রদত্ত একটি বিশেষ দান।যেক্ষেত্রে দাতা বিনিময়ে কোন সম্পত্তি লাভ না করেন, সেক্ষেত্রে দানটি বিশুদ্ধ এবং সাধারণ; আর যেক্ষেত্রে দানকায অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ,দানগ্রহীতা নিজেই স্বত:প্রবৃত্ত হয়ে এবং নিজে কোনরকম বাধ্য না হয়ে দাতাকে কিছু সম্পত্তি প্রদানের মাধ্যমে মুল্য দেওয়ার মাধ্যমে দান সম্পন্ন করেন, সেক্ষেত্রে একে হেবা -বিল এওয়াজ বলা হয়।
ইসলামী আইনের ধারণা অনুসারে 'হিবা-বিল-এওয়াজ' দানের প্রথম দুটি কাজের সমন্বয়ে গঠিত হয়, অথাত্‍ দুই ব্যক্তির মধ্যে নিদিষ্ট সম্পত্তির পারস্পরিক দান,যার প্রত্যেকে বিকল্পভাবে একটি দানের দাতা এবং অন্যটির মধ্যে দানগ্রহীতা থাকেন।উভয় দানই সাধারণ দান, কিন্তু একবার দ্বিতীয় দানটি প্রথমটির 'এওয়াজ' হিসেবে প্রথমটির দাতা কর্তৃক গৃহীত হয়ে গেলে উভয় দানই অপ্রত্যাহারযোগ্য হয়ে যাবে।তবে হেবা-বিল-এওয়াজের দুটি উপাদান এর সমন্বয়ে গঠিত হয়: ক) দাতা কর্তৃক দান গ্রহীতাকে যে দান করেছে তার বিনিময়ে দান গ্রহীতা কর্তৃক দাতাকে কিছু না কিছু প্রদান ।
খ) দাতা-দানের বস্তু দানগ্রহীতাকে অর্পনান্তে তার অধিকার থেকে নি:স্বত্ব হওয়ার সদিচ্ছা পোষণ।
সুতরাং দান + প্রতিদান = হেবা বিল এওয়াজ
কখন দান গ্রহণ করতে হয়: দাতার জীবদ্দশায় এবং সে যখন দান করতে সম্পূর্ণ সক্ষম সেই অবস্থায় অনুরুপ হস্তান্তর গ্রহণ করতে হয়।দান গ্রহণের পূবে দানগ্রহীতার যদি মৃত্যু ঘটে, তাহলে উক্ত দান বাতিল হয়।
হেবা বিল এওয়াজের অপরিহায উপাদান:
হেবা-বিল -এওয়াজের উপরোক্ত সংজ্ঞাদৃষ্টে এর অপরিহায উপাদান সহজেই উপলব্ধি করা যায়।যেমন:
প্রথমত: দাতা কর্তৃক দানগ্রহীতাকে বিশুদ্ধ চিত্তে নি:স্বত্ব ভাবে কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি অর্পণের প্রত্যাশা পোষণ।
দ্বিতীয়ত :দান গ্রহীতা কর্তৃক দাতা উক্ত দানের জন্য কিছু বিনিময় প্রদান।
তৃতীয়ত: তাত্‍ক্ষণিক হস্তান্তর হতে ও পারে বা নাও হতে পারে।
চতুর্থত :বিনিময়ের বিষয়টি কোন চুক্তির ফলশ্রুতি নয়।দান গ্রহীতার অধিকরের বিষয়। অথাত্‍ এটি তার স্বাধীন ইচ্ছার বিষয়।
পঞ্চমত:প্রতিদানের বিষয়টি পযাপ্ত হবে কি, হবে না তা গুরত্বপূর্ণ নয়।
হেবা বিল এওয়াজের শ্রেণীবিভাগ: হেবা-বিল -এওয়াজের উপরোক্ত সংজ্ঞা এবং উপাদানগুলো বিশ্লেষণ এবং পাক-ভারত উপমহাদেশে এর অনুশীলন প্রকৃতি দৃষ্টে এর কিছু শ্রেণী পরিদৃষ্ট হয়।যেমন :
১। দুটি পৃথক দান হিসেবে গ্রহণ বা বিশুদ্ধ হেবা-বিল এওয়াজ;
২। আধুনিক হেবা বিল এওয়াজ;
৩। হেবা বা কারত-উল- এওয়াজ।
বিশুদ্ধ হেবা -বিল -এওয়াজ:
প্রথম দিকের ইসলামী আইনবিদগন এর সংজ্ঞা ও ব্যাখা দান করেছেন।তাঁদের মতে হেবা-বিল এওয়াজ অনুশীলনে দুটি দানের অস্তিত্ব পরিদৃষ্ট হয়।একটি দাতাকর্তৃক দানগ্রহীতাকে এবং অপরটি দানগ্রহীতা কর্তৃক দাতাকে।এহেন পারস্পরিক দানের ক্ষেত্রে কোনরুপ শর্ত থাকে না,  থাকে না কোন বিনিময় প্রত্যাশা।উভয় উভয়কে ভালোবাসার বস্তুগত নিদর্শন স্বরুপ একে অপরকে প্রদান করে । এধরনের হেবাতে পরস্পরে যা দান করা হয় তার তুলনামূলক মাত্রা বিবেচ্য নয়।হতে পারে তা এক লক্ষ টাকা সম্পদের স্থলে একটি জায়নামাজ বা এক কপি কোরআন শরীফ।এ ধরনের দান বিশুদ্ধ দান। এটি দান আইন কর্তৃক নিবাহ হয়।দখল অর্পণ আপাত: না হলে ও চলে।এক্ষেত্রে একটি দান প্রথম অনুষ্ঠিত হয়।তারপর অপরটি এবং দ্বিতীয় দানটি ইচ্ছা নির্ভর। তবে দ্বিতীয় দানটি গ্রহণের পর কোন দানই আর প্রত্যাহার করা যায়না।
সম্প্রতিককালের কিছু বিশিষ্ট নজীর এই সম্পকে যথেষ্ট আলোকপাত করেছেন।যে কোন মুসলিম তার জীবনকালে তার সমগ্র সম্পত্তি বা কিছু পরিমাণ সম্পত্তি হেবা করে দিতে পারে।যার উপর ভিত্তি করে সম্পত্তি দাবী করে তার হেবার আবশ্যিক প্রমাণসমূহ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে বাধ্য ।হেবা-বিল-এওয়াজের প্রশ্ন উঠলে বিবেচনা করতে হবে দাতার মনের অবস্থা যদি প্রতিদানের বিনিময়ে তার সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে মনস্থ করিতে থাকে।তবেই সেই সম্পত্তি হেবা-বিল এওয়াজ হবে।হেবা-বিল এওয়াজের মধ্যে দখলার্পণ আবশ্যক।দ্বিতীয় হেবার দাতা হেবা নাও করতে পারে।প্রথম হেবা সম্পূর্ণ করতে হলে তাই দখলার্পণ আবশ্যক।দ্বিতীয় হেবা ও একটি সাধারণ হেবা কিন্তু প্রথম হেবাই তার কারণ।দ্বিতীয় হেবা প্রথম হেবার দাতা যদি গ্রহণ করে তবে উভয হেবাই অপ্রত্যাহারযোগ্য হয়ে যায়।হেবা-বিল এওয়াজের মধ্যে যদি এওয়াজ না থাকে অথাত্‍ প্রতিদান না থাকে তবে সেই হেবাকে, হেবা-বিল এওয়াজ বলা যায়না।অবশ্য হেবা-বিল এওয়াজে, এওয়াজ বা প্রতিদানের কম হলে কিছু আসে যায় না।এওয়াজ অতি সামান্য ও হতে পারে।
উদাহরণস্বরুপ বলা যায় যে, যদি ক, কোনরকম বিনিময় বা প্রতিদানের চুক্তি না করে খ কে একটি আংটি দান করে আংটির দখল অর্পণ করে এবং খ, পরবতীতে কোন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ না হয়েই ক -কে একটি ঘড়ি দান করে বলে যে, এই ঘড়ি ক এর দানকৃত আংটির এওয়াজ বা বিনিময়স্বরুপ, এবং ক-কে এর দখল অর্পণ করে-এই লেনদেনটি একটি বিশুদ্ধ হেবা-বিল -এওয়াজ এবং ক ও খ কেউই তাদের দানগুলো প্রত্যাহার করতে পারবেনা।
কিন্তু যদি খ ঘড়িটি, ক এর দানের এওয়াজ বা বিনিময়ে দান করা হচ্ছে বলে কোনভাবে উল্লেখ কোনভাবে উল্লেখ না করে অর্পণ করে -তবে তা কোন একটি আলাদা দান হবে -যা প্রত্যেকেই প্রত্যাহার  করতে পারবে।যদি ক-খ কে এই বলে একটি আংটি দান করে যে" আমি তোমাকে এটি এই এই .....দেওয়ার জন্য প্রদান করেছি তবে এটি ভারতীয় শ্রেনীর হেবা-বিল-এওয়াজ হবে।এটি প্রকৃতপক্ষে এক শ্রেণীর বিক্রয়।পক্ষান্তরে হেবা -বিল -এওয়াজ এর প্রথম হতে শেষ পযন্ত কোন বিক্রয় নয়।
আধুনিক হিবা -বিল-এওয়াজ:
আধুনিক দানটি শর্তযুক্ত।দাতা গ্রহীতাকে দানের বস্তু দান করবে এবং তার বিনিময়ে দান গ্রহীতা ও দাতাকে কিছু না কিছু দান করবে।এতে যদি দান গ্রহীতা ব্যর্থ হয়,তাহলে দাতাকে কিছু না কিছু দান করবে।এতে যদি দানগ্রহীতা ব্যর্থ হয় তাহলে দানটি বাতিল হয়ে যাবে।এটিও স্মরণযোগ্য এ বিনিময় গতরের খাটনী বা শারীরিক পরিশ্রম হলে হবে না।এতে সম্পদের বিনিময় থাকতে হবে।
বৈশিষ্টাবলী:
প্রথমটি অনুষ্ঠিত হলে পরেরটি অনুষ্ঠিত হতে হবে।আর না হলে পূবোর্ক্তটি অথাত্‍ আগেরটি বাতিল হয়ে যাবে।এখানে দুটি দান পরস্পর নিভর্রশীল।তাই এদেরকে পৃথক করে ভাবা যায় না।পরেরটি অনুষ্ঠিত হলে তা অপ্রত্যাহারযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।
হেবা বা কারত-উল-এওয়াজ:
যেক্ষেত্রে দাতা কাউকে কিছু দানকালে এর প্রতিদানের শর্তসহ তা কাযর্করী করে অথাত্‍ যেক্ষেত্রে প্রতিদানের প্রতিশ্রুতির শর্তসহ কোন হেবা কাযর্করী হয়,তখন তাকে হেবা বা কারত উল -এওয়াজের ক্ষেত্রে দখল অর্পণ আবশ্যক এবং দানটি রদযোগ্য।তার দান গ্রহীতা দাতাকে প্রদান করলে দানটি আর রদযোগ্য থাকবেনা। বাংলা পাক-ভারত উপমহাদেশে এর অনুশীলন ক্ষীন হয়।এটি এক প্রকার বিনিময় চুক্তি।এই উপমহাদেশে হিবাবিল এওয়াজকে বিক্রয়ের তুল্য।সুতরাং দখলার্পণ আবশ্যক।হেবা-বিল-এওয়াজের প্রশ্ন উঠলে বিবেচনা করতে হবে দাতার মনের অবস্থা যদি প্রতিদানের বিনিময়ে তার সম্পত্তি হস্তান্তর করিতে মনস্থ করিতে থাকে।তবেই সেই সম্পত্তি হেবা-বিল এওয়াজ হবে।হেবা-বিল এওয়াজের মধ্যে দখলার্পণ আবশ্যক।
হেবা -বিল এওয়াজের জন্য প্রতিদান:
যে সম্পত্তি দান করা হলো,এরই অংশবিশেষ ফেরত দিলে, মুসলিম আইনে 'এওয়াজ'হিসেবে গণ্য করা হবে না।'এওয়াজ' বলতে এমন কিছু বুঝাবে যা আলাদাভাবে শুধুমাত্র দান গ্রহীতারই এবং যা কেবল দানের ফলশ্রুতিতে ব্যতীত দাতার হাতে আসতে পারতোনা।কিন্তু প্রতিদান বা এওয়াজের পযার্প্ততা কোন গুরত্বপূর্ণ বিষয় নয়।যে সম্পত্তি দান করা হয়েছে, এর মূল্যের তুলনায় এওয়াজ অতি নগন্য মূল্যের হলেও তা সম্পূণৃভাবে বৈধ হবে।এমন কি একটি আংটি ও যথেষ্ঠ প্রতিদানস্বরুপ হতে পারে, কিন্তু যে পরিমাণের প্রতিদান হোক না কেন , এটি অবশ্যই প্রকৃত এবং আন্তরিকভাবে প্রদান করতে হবে।
এই উপ-মহাদেশের বিভিন্ন দেশে এওয়াজের প্রকৃতিতে বিক্রয় মূল্যে সম্পত্তি হস্তান্তরের প্রথা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সে এওয়াজ বা প্রতিদান প্রায়শই পবিত্র কোরআনের একখানা কপি এবং তসবিহ অখবা জায়-ই -নামাজ অথবা অত্যন্ত নগন্য মূল্যের অন্য কোন সম্পত্তি অথবা এমন কোন সম্পত্তি হয়ে থাকে , যার আদৌ কোন মূল্য নাই এবং এধরনের লেনদেন বৈধ।দানের জন্য এধরনের প্রতিদান বিভিন্ন রকম হতে পারে।শুধু আথিক প্রতিদানই নয়, বিবাহ-শাদী ও কোন দানের প্রতিদান হতে পারে।যদি কোন প্রস্তাবিত বিবাহ কোন দানের প্রতিদান হয়, তবে তা বৈধ হবে এবং বিবাহ অনুষ্ঠানের পর সেই দান অপ্রত্যাহারযোগ্য হয়ে পারবে।বিবাহ সম্পন্ন হওয়ায় দাতা তার দানের জন্য প্রতিদান পেয়ে যান, যার  অতিরিক্ত শর্ত যে, দাতা এবং গ্রহীতা একত্রে স্বামী -স্ত্রী হিসেবে বসবাস চালু রাখবেন।যদি দেখা যায় যে,'এওয়াজ' প্রদান করা হয়নি ,তবে দানটি হেবা-বিল-এওয়াজ নয় এবং তা আইনের চোখে অবৈধ হবে।যদি প্রতিদানের অভাবের জন্য কোন দলিল হেবা-বিল-এওয়াজ হিসেবে না টিকে, তবে দাতার ইচ্ছা এবং বৈধ দানের অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো বিদ্যমান থাকে, তবে একে একটি সাধারণ হেবা বা দান হিসেবে গণ্য করা যাবে।
কোন নাবালকের প্রতি হেবা-বিল -এওয়াজ করা হলে সে যদি দানটির জন্য 'এওয়াজ' প্রদান করে , তবে সে তার পক্ষে লেনদেন সম্পন্ন করেছে এবং এইক্ষেত্রে তার নাবালকত্ব স্বত্বে ও তার দান সম্পূর্ণ এবং বৈধ।
কোনরকম সেবা বা কাজকে দানের জন্য এওয়াজ হিসেবে গণ্য করতে হলে এর অবশ্যই একটি মূল্য থাকতে হবে, অন্যথায় এটি সাধারণ দান হিসেবে গণ্য হবে।
হেবা বি শর্ত -উল -এওয়াজ: যখন বিনিময়ের (এওয়াজ) চুক্তিতে (শর্ত)হেবা করা হয় তখন সেই আদান -প্রদানকে হেবা-বি শাত- উল এওয়াজ বলে।যে এওয়াজ সম্পকে শর্ত করা হয় তা নিধার্রিত বা অনিধারিত উভয় হতে পারে।এধরনের দানের ক্ষেত্রে এওয়াজের সাথে সংশ্লিষ্ট দানের সব শতাদিসহ তা কাযকরী হয় এবং তাকে বৈধ করতে হলে দখল অর্পণ প্রয়োজন এবং উভয় পক্ষই দখল অর্পণের আগে তা প্রত্যাহার করতে পারে কিন্ত উভয় দানের দখল অর্পণের পর বিক্রয়ের মত তা কাযকরী হবে।
হেবা -বি -শর্ত-উল এওয়াজ সম্পকে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক নজীর: দলিলের মধ্যে দাতা যেখানে স্বীকার করেছে যে,সম্পত্তির দখলার্পণ গ্রহীতার বরাবরে করা হয়েছে। সেই স্বীকৃতি দাতার উত্তরাধিকারীর উপর বাধ্যকর।হেবা-বি-শত-উল এওয়াজের দলিলের মধ্যে এধরনের স্বীকৃতি উত্তরাধিকারীর উপর বাধ্যকর হলে ও দখল সম্পকে চুড়ান্ত প্রমাণ নয়।
বাংলাদেশে হেবা-বিল-এওয়াজের যথেষ্ঠ প্রচলন দেখা যায়।এক জিলদ কোরআন শরীফ, একখানা জায়নামাজ ও একছড়া তসবীহের বদলে মূল্যবান ভূ-সম্পত্তি দান করার রেওয়াজ বাংলাদেশে রয়েছে।বাংলাদেশের সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে দানের সম্পকে নিম্নবণিত বিধানসমূহ পাওয়া যায়।
দান হচ্ছে স্থাবর বা অস্থাবর বিদ্যমান সম্পত্তির দাতা কর্তৃক প্রদত্ত এবং দান গ্রহীতা কর্তৃক গৃহীত স্বেচ্ছামূলক ও পনহীন হস্তান্তর।দাতার জীবনকালে এবং তার দান ক্ষমতা অব্যাহত থাকা-কালে দান গ্রহণীয় অন্যথায় দান অসিদ্ধ।দান যেহেতু একটি হস্তান্তর সেহেতু হস্তান্তরের সব আইন দানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
একটা আদান-প্রদান দান কি না, তা বিচার করতে হলে  সমগ্র পরিস্থিতিকে বিবেচনার অধিকারে আনতে হয়।পক্ষবৃন্দ, ঐ আদান-প্রদানের সময় কি অভিপ্রায় বা ইচ্ছা মনে পোষণ করেছিলেন তা নিধারণ করে তবে তার প্রকৃতি সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয় ।দানের বিষয়বস্তু বিদ্যমান থাকা আবশ্যক।যা ভবিষ্যতে অধিকারে আসবে, এমন বস্তু সম্পত্তি দান করা যায়না।দানকে স্বেচ্ছামূলক হতে হবে, অন্যথায় তা অসিদ্ধ।একটা আপাত: প্রতীয়মান দান বাস্তবিক পক্ষে আইনানুগ যথাথ দান কি না, তা নিধারণ করতে হলে দুটি বিষয়ে প্রাধান্য দিতে হবে :
প্রথমত: দাতা তার কাজের মর্ম দানের সময় বুঝতে সক্ষম ছিলেন কি না।দ্বিতীয়ত, দেখতে হবে দলিলে যা লিখিত হয়েছিল তা তিনি পরিস্কার বুঝতে পেরেছিলেন কি না।দাতা যদি পদার্নশীল স্ত্রীলোক হন কিংবা অশক্ত বৃদ্ধ হন, তবে দানগ্রহীতার উপর দানের যথার্থতা প্রমাণ করবার বিশেষ দায়িত্ব বতার্য়।দান গ্রহীতাকে নিদির্ষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ হতে হবে।জনসাধারণের বরাবরে দান অসিদ্ধ।দানগ্রহীতাকে দান গ্রহণ করতে হবে।
উপরোক্ত  দানের পদ্ধতি কি:
স্থাবর সম্পত্তি রেজিষ্ট্রীকৃত দলিলের মাধ্যমে দান করতে হয়।ঐ দলিল দাতার দ্বারা বা তার পক্ষে কার ও স্বাক্ষরিত এবং অন্যান্য দুজন সাক্ষী দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে।অস্থাবর সম্পত্তি এই ধরনের রেজিষ্ট্রী দলিল কিংবা দখলার্পণ দ্বারা দান করা যায়।
দুই বা ততোধিক ব্যক্তির কাছে দান করা হলে যে ব্যক্তি দান গ্রহণ করতে ব্যর্থ হন, তার অংশ দানের বহিভূর্ত থাকবে।দান সবর্দা ব্যক্তির নিকট করা হয় এবং গ্রহণ এর একটি আবশ্যকীয় উপাদান।গ্রহীতা না হলে দান অকাযর্কর।
উপরোক্ত  দান স্থগিত বা রহিত করা যায় কি?
যখন দাতা এবং দান গ্রহীতা একমত হন, তখন করা যায়।একমত হতে হবে এর বিশেষ ঘটনা ঘটা সম্পর্কে এবং ঐ ঘটনা ঘটা দাতার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল হবে না।দান রহিতের শর্ত যদি দাতার ইচ্ছাভিত্তিক হয়,তবে ঐ দান অবৈধ।যে কারণে চুক্তি নাকচ করা যায়, সে কারণে দান ও নাকচ করা যায়।অন্যভাবে দান রহিত করা যায় না।দান করার অর্থ সম্পূর্ণভাবে দেওয়া।সুতরাং যে দান দাতার ইচ্ছায় ফিরিয়ে নেওয়া যায়, তা দান নয়।দানের পর দাতা দানকৃত বস্তু নিজের ইচ্ছায় ফেরত পেতে পারেননা।
দায়যুক্ত দান সম্পকে আইনের কি বিধান?
যেখানে দানকৃত সম্পত্তি একাধিক এবং যার একটা মুক্ত ,অন্যটা দায়যুক্ত।যেখানে দায়যুক্ত, সেখানে দান গ্রহীতা সমগ্র সম্পত্তি গ্রহণ না করলে দান অসিদ্ধ।তবে দানকৃত সম্পত্তিগুলো একাধিক হস্তান্তরের বিষয়বস্তু হলে একটি বাদ দিয়ে অপরটি গ্রহণ বৈধ।যার চুক্তি করবার ক্ষমতা নেই, তিনি দান গ্রহণ করতে পারেন না।যেক্ষেত্রে দাতা তার সমগ্র সম্পত্তি দান করেন, সে ক্ষেত্রে দানগ্রহীতা দাতার সমস্ত অধিকার ও দায়িত্ব গ্রহন করতে বাধ্যথাকেন।দান সম্বন্ধীয় এই বিধানসমূহ মুসলিমদের দানের উপর অপ্রযোজ্য।
হেবা-বিল এওয়াজ এবং হেবা-বি-শরত-উল-এওয়াজের মধ্যে পার্থক্য জানার জন্য ক্লিক করুন
মোহরানা ঋণের পরিবতে হেবা-বিল এওয়াজ: স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মোহরানা সংক্রান্ত হেবা-বিল-এওয়াজ আইন সন্মত।স্ত্রী কোন প্রতিদান ছাড়াই স্বামীর বকেয়া দেন মোহরের পাওনা টাকা দান করে দেয়।স্ত্রী এর প্রতিদান স্বরুপ পৃথকভাবে স্বামীকে কোন সম্পদ দান করলে তা হেবা -বিল -এওয়াজ হিসেবে বিবেচিত হবে।এটি দলিল মূলে ছেড়ে দেওয়া হলে তাও দান আইন মোতাবেক হেবা -বিল-এওয়াজ হিসেবে গ্রাহ্য হবে।

হেবা-বিল এওয়াজ এবং হেবা-বি-শরত-উল-এওয়াজের মধ্যে পার্থক্য: হিবা-বিল-এওয়াজ এবং হেবা-বি-শরত-উল-এওয়াজের ক্ষেত্রে যখন প্রথম দানটি হয়, তখন দাতা এর জন্য প্রতিদান চিন্তা করেন না। পরবতীর্তে প্রথম দানের গ্রহীতা ঐ দানের জন্য একটি বিনিময় বা প্রতিদান প্রদান করেন। কিন্তু হেবা-বি-শরত -উল -এওয়াজের ক্ষেত্রে দাতা দানটি করার সময়ই এমন শর্ত আরোপ করেন যে, গ্রহীতাকে এর জন্য একটি প্রতিদান করতে হবে। এইক্ষেত্রে দাতা অপর পক্ষ কর্তৃক প্রতিদান প্রদান না করা এবং এটি গ্রহণ করা ও দখল না নেওয়া পযর্ন্ত তার দান বাতিল বা প্রত্যাহার করতে পারেন ।
এরপর ও কিছু গুরত্বপূণ বিষয়ে হেবা-বিল-এওয়াজ ও হেবা-বি-শরত -উল এওয়াজের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে:
ক্রমিক
পার্থক্যের বিষয়
হেবা-বিল এওয়াজ
শর্ত উল এওয়াজ
১.দখলের প্রশ্নেহেবা -বিল এওয়াজের ক্ষেত্রে দখল অর্পণবশ্যক নয়।শর্ত -উল- এওয়াজের ক্ষেত্রে দখল হস্তান্তর বশ্যক।
২.প্রতিদান লাভের ক্ষেত্রেদানদাতা দানগ্রহীতার কাছ থেকে প্রতিদান লাভ করে থাকে।শর্তসহ এওয়াজের ক্ষেত্রে দাতা গ্রহীতার কাছ থেকে কিছুই লাভ করতে পারেনা।
৩.শর্তের অস্তিত্ব থাকার প্রশ্নেহেবা-বিল-এওয়াজের কোন শর্ত থাকেনা, কারণ এটি বিনিমেয় দান।শর্তসহ দানে শর্ত থাকে এবং তাতে উল্লেখিত শতাবলীর দ্বারাই দান কাযটি পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।
৪.রদের প্রশ্নেসংশ্লিষ্ট দানটি দাতা রদ করতে পারেনা।দাতা সংশ্রিষ্ট দানটি রদ করতে পারে।তবে দাতা যদি দানগ্রহীতার কাছ থেকে প্রতিদান পেয়ে থাকে তাহলে শর্তসহ দানটি রদ করতে পারেনা।
৫.দানকৃত সম্পত্তি বতাবার প্রশ্নেদানগ্রহীতার মৃত্যুর পর সম্পত্তি তার নিজস্ব উত্তরাধিকারীদের উপর বতায়।দাতার উত্তরাধিকারীদের উপর বতায় না।শর্ত থাকলে দান গ্রহীতার মৃত্যুর পর দানের বিষয়বস্ত দাতার উত্তরাধিকারীদের উপর বতার্য়।
৬.এওয়াজের প্রশ্নেএওয়াজটি দান-গ্রহীতার পক্ষ হতে স্বেচ্ছায় সে।এওয়াজটি পক্ষদ্বয়ের মধ্যে সুষ্ঠভাবে উল্লেখিত হয়ে থাকে ।
৭.বিক্রয়ের উপাদানের প্রশ্নেহেবা-বিল-এওয়াজ প্রকৃত পক্ষে বিক্রয় বলে গন্য হয়। কারণ বিক্রয়ের সব উপাদান এতে রয়েছে।শর্তসহ এওয়াজের বিক্রয়ের উপাদান পরিলক্ষিত হয় না।কারণ দাতা গ্রহীতার কাছ থেকে কোন মূল্য পায় না।
৮.প্রচলনের ক্ষেত্রেহেবা-বিল এওয়াজ এদেশে বহুলাংশে প্রচলিত ছে ।শর্ত-উল -এওয়াজ এর প্রচলন এদেশে নেই বললেই চলে।
৯.এওয়াজের প্রতুলতার ক্ষেত্রেএওয়াজ অপ্রতুল হতে পারে,যেমন-একখানি কোরন শরীফ কিংবা জায়নামাজ,টুপি বা আংটি ইত্যাদি হতে পারে।শর্ত-সহ এওয়াজের ক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে এওয়াজ অথাত্‍ বিনিময় নিধারিত হয়ে থাকে।




দান ও উইলের পার্থক্য:
সংজ্ঞার মধ্যেই ইচ্ছাপত্র এবং দানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
১) অবিলম্বে বা তাত্‍ক্ষনিক হস্তান্তর দানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট ,কিন্তু উইল বা ইচ্ছাপত্রের দ্বারা মৃত্যুর পরে সেই হস্তান্তর কাযকরী হয়।দান সুসম্পূর্ণ হইতে হইলে সম্পত্তিটি যেই রকমভাবে দখলযোগ্য, সেইভাবে এর দখল দিতে হবে এবং যাকে দান করা হইবে সেই ব্যক্তি অথাত্‍ দান গ্রহীতা কতৃক তা গ্রহণ করতে হবে।ইসলামী আইনে এইরুপ দান মৌখিক বা বিনা রেজিষ্ট্রী দলিলে ও হতে পারে।
২) ইসলামী আইনে উইলের মাধ্যমে এক তৃতীয়াংশ সম্পত্তি বিলিবন্দোবস্ত করা যায়।দানের বেলায় যতখানি ইচ্ছা ততখানি সম্পত্তি ও হস্তান্তর করা যায়।ইসলামী আইন, আল্লাহর আইনে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের যে ব্যবস্থা আছে তা উইলের মাধ্যমে রদ করতে দিতে উত্‍সাহ দেয় না।কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছা করে তবে সে দানের মাধ্যমে একজনকে তার সমগ্র সম্পত্তি দিয়ে উত্তরাধিকারীর বিধিকে বানচাল করে দিতে পারে। সম্পত্তির বস্তকে নিরপেক্ষভাবে তাত্‍ক্ষণিক এবং শতহীনভাবে হস্তান্তরকে হেবা বলে।
৩)দান যে কোন সময় কাযকর করা যায়,কিন্তু উইল মৃত্যুর পর কাযকরী হয়ে থাকে।
দান ও উইলের ধারণাকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজ করে তোলার জন্য নীচে দুটি ভাগ করে দেখানো হলো:           
হেবা বা দান 
উইল
১। কোন মুসলিম তার সমুদয় বাংশিক সম্পত্তি যে কোন ব্যক্তির বরাবর হেবা বা দান করতে পারে।কোন মুসলিম তার সম্পত্তির ১/৩ অংশ্ উত্তরাধিকারী নয় এমন ব্যক্তির বরাবর উইল করতে পারে।
২।হেবা অবশ্যই জীবিত ব্যক্তির বরাবর করতে হবে।সুতরাং অজাত(Unborn)ব্যক্তির বরাবর হেবা বৈধ হবেনা। অজাত  (Unborn)ব্যক্তির বরাবর উইল আইনসিদ্ধ নয়। তবেযে শিশু মাতৃগভে ছিল এবং উইল সম্পন্ন করবার তারিখ হতে ছয় মাসের মধ্যে শিশু জন্মগ্রহণ করলে উইল বৈধ হবে।
৩।মুসলিম ইনে হেবা সঙ্গে সঙ্গে কাযর্করী হয়।উইল কাযর্করী হয় উইল দাতার মৃত্যুর পর।
৪।সম্পত্তি দখল হস্তান্তর এর পর কেবলমাত্র দালতের ডিক্রী ব্যতীত হেবা বাতিল করা যায়না।উইলদাতা তার মৃত্যুর গে যে কোন সময় বাতিল করতে পারে।
৫।হেবার ক্ষেত্রে দাতার কোন উত্তরাধিকারীর সন্মতি প্রয়োজন হয় না।উইলদাতার উত্তরাধিকারীর সন্মতি প্রয়োজন হয়, যদি উইল কোন উত্তরাধিকারীর বরাবর হয়। অবশ্য দাতার সম্পত্তি এর ১/৩ অংশ গরত্নীয় বরাবর উইল করলে উত্তরাধিকারীদের সন্মতি প্রয়োজন হয়না।
৬।হেবার ক্ষেত্রে সম্পত্তির দখল সঙ্গে সঙ্গে প্রদান করতে হয়।কারণ দখল হস্তান্তর ছাড়া হেবা কাযর্করী হয় না।উইলের ক্ষেত্রে দখল প্রদানের কোন প্রশ্ণই উঠে না।
৭।হেবার ক্ষেত্রে হেবার বিষয়বস্তুর অস্তিত্ব থাকতে হবে।উইলের ক্ষেত্রে উইলের সময়ই যে বিষয়বস্তুর অস্তিত্ব থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই।উইল দাতার মৃত্যুর সময় এর অস্তিত্ব থাকলেই চলবে।


হেবা ও ছদকা:
ছদকা হল ধমীর্য় পূণ্য অর্জনের উদ্দেশ্যপ্রদত্ত দান।হেবার মত ছদকা ও সম্পত্তি হস্তান্তরের অন্যতম একটি উপায়।হেবা অথাত্‍ দানের সাথে ছদকার মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে।
১) হেবা বা দান হলো দান গ্রহীতার প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা পোষিত হয়ে সম্পাদিত হয়।কিন্তু ছদকা একমাত্র আল্লাহরই করুণা প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে করা হয়।
 ২) দান যে কাউকে ধনী-দরিদ্র নিবির্শেষে করা যায়।অথচ ছদকা একমাত্র গরীব মিসকিনদের করতে হয়।
৩) দানের ক্ষেত্রে বৈষয়িক স্বার্থ থাকতে পারে।কিন্তু ছদকার ক্ষেত্রে তা থাকে না।
৪) দানের মত ছদকার সাথে দখল প্রদান না করলে কিংবা তা বিভাগযোগ্য সম্পত্তির অবিভক্ত অংশ বা মুশাহ হলে তা বৈধ হবে না।তবে দখল অর্পণ
করা হলেও সেই দান বাতিল বা রদ করা সম্ভব, ছদকার ক্ষেত্রে একবার দখল প্রদান করা হলে ও তা আর কোন অবস্থাতেই রদ করা সম্ভব নয়।দুই বা
ততোধিক গরীব ব্যক্তিকে ছদকা করলে তা অবৈধ হবে না ।
ছদকা ও ওয়াকফ: ছদকা এবং ওয়াকফের  মধ্যেও পার্থক্য পরিদৃষ্ট হয়।১)ছদকার ক্ষেত্রে দানের মূল বস্তুটি ভোগ করে শেষ করা যেতে পারে; কিন্তু ওয়াকফের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সম্পত্তির উপস্বত্বটি ভোগ করা যাবে।২)দখল অর্পণ ছাড়া ছদকা হয় না, কিন্তু দখল অর্পণ ছাড়াই ইচ্ছামত ঘোষণা দ্বারাই ওয়াকফ সম্পন্ন হয়।৩)ওয়াকফ ,ওয়াকফ আইন কর্তৃক পরিচালিত হয়।ছদকা ধমীর্য় বিধান কর্তৃক সৃষ্ট।৪)ছদকার উদ্দেশ্য থাকে একমাত্র  আল্লাহর সন্তুষ্টি।কিন্তু ওয়াকফ এর উদ্দেশ্য বৈষয়িক ও হতে পারে।
হেবা ও আরিয়া: হেবা বলতে সম্পত্তির,বস্তুর বা শরীরের (আইন) বিনিময় বা পণ ব্যতিরেকে পূর্ণ দান বোঝায়।আর আরিয়া বলতে সম্পত্তির ব্যবহার বা মুনাফার দান বোঝায়।দুররুল মোখতার বলে, আইনের দানকে হেবা আর মুনাফার দানকে আরিয়া বলে। হেবাতে সম্পত্তি গ্রহীতার কাছে চলে যায় আর আরিয়াতে কিছুকালের জন্য সম্পত্তি ব্যবহারের অধিকার গ্রহীতার বরাবরে চলে যায়।
কে দান করতে পারে:
সেই ব্যক্তি হেবা বা দান করতে পারে, যিনি
ক) সাবালক; কারণ চুক্তি সম্পাদনের যোগ্যতা না থাকায় নাবালক দান করতে পারেনা।
খ) সুস্থ বুদ্ধির অধিকারী
গ) দানযোগ্য সম্পত্তির মালিক, যা দান গ্রহীতার অনুকূলে -হস্তান্তরযোগ্য বলে বিবেচিত। অছি জিন্মাকৃত সম্পত্তি হতে দান করতে পারেনা, যদি না জিন্মাদানের শতাবলীতে তার অনুমোদন থাকে।
ঘ) কোন প্রকার চাপ বা বল প্রয়োগের ভয়ে দান করবেনা।স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে মানব ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দান করবে।
একজন মুসলমান তার জীবদ্দশায় যেইভাবে তিনি উপযুক্ত মনে করেন ,সেইভাবে তার সম্পত্তি ব্যবহার বা হস্তান্তর করতে পারেন এবং এই ব্যাপারে তার ক্ষমতা অনিয়ন্ত্রিত।উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, তিনি তার সমস্ত ভূ-সম্পত্তিই দান করে দিতে পারেন এবং তিনি এর দ্বারা পরিকল্পিত বা অন্যভাবেও তার সব উত্তরাধীকারীদের বঞ্চিত করতে পারেন।
দানগ্রহীতা: দানগ্রহীতা সেই ব্যক্তি যিনি দান গ্রহণ করেন। চুক্তি সম্পাদনের যোগ্যতা নাই এমন ব্যক্তির দান অন্য কেউ দানগ্রহীতার পক্ষে অথবা স্বয়ং গ্রহণ করতে পারবে।
ক) দানগ্রহীতা সাবালকত্ব অর্জন করবার পর তাকে সেই দান গ্রহণ করতে হবে, না হয় ফেরত দিতে হবে।'দানগ্রহীতার পক্ষে অথবা স্বয়ং গ্রহণ করার 'শব্দগুচ্ছ দ্বারা একথাই বুঝান হয়েছে যে ,দানগ্রহীতা এমন ব্যক্তি ও হতে পারে যে ,তার গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করতে অপারগ, যেমন শিশু।
খ) দানগ্রহীতাকে অবশ্যই দান গ্রহণের সময় জীবিত হইতে হইবে।দানগ্রহীতাকে সনাক্তযোগ্য ব্যক্তি হতে হবে।জনসাধারন দানগ্রহীতা হতে পারবেনা ।
রেজিষ্ট্রিকৃত নয় এমন কোন সংঘকে দান করা যাবেনা ।
গ) ভুমিষ্ট হয়নি এমন ব্যক্তির অনুকূলে দান বৈধ নয় ।
ঘ) উত্তরাধিকারী নয় এমন ব্যক্তিকে উইল মূলে সম্পত্তির ১/৩ অংশ দান করা যায়।
ঙ) কতিপয় ক্ষতিপূরণ সাপেক্ষে কোন পুত্রকে সমস্ত বা অংশ বিশেষ সম্পত্তি দান করতে পারে।
দানের উদ্দেশ্য: একটি দান কাযকরী করতে হলে তা অবশ্যই একটি খাঁটি লেনদেন হতে হবে এবং অবশ্য কেবলমাত্র ভবিষ্যতের কোন এক দূরবতী উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য হতে পারবেনা।যেমন, ভবিষ্যতে শুধু কতিপয় ওয়ারিশকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যেই দান করা হয়ে থাকলে তা অবৈধ হবে ।কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে,কতিপয় ওয়ারিশকে বঞ্চিত করে দান করলে সব দান অবৈধ হবে।একটি দান কেবল তখনই অবৈধ হবে যখন উদ্দেশ্যটিই হয় 'ওয়ারিশগণকে বঞ্চিত করা ' কিন্তু কেবলমাত্র দানের ফলের কারনেই নয়।

কিভাবে দান করা যায়: মুসলিম আইনে দানের উপায় অতি সহজ।তিনটি শর্ত পূরণান্তে একটি দান সম্পাদিত হতে পারে।যেমন দাতা কতৃক দান ঘোষণা, দানগ্রহীতা কতৃক তা গ্রহণে স্বীকৃতি এবং দাতা কতৃক দানকৃত সম্পত্তি দানগ্রহীতার বরাবরে দখল অর্পণ।
প্রথমত: দানের জন্য শুদ্ধ ঘোষণা:
ঘোষণা দু,ভাবে ক) মৌখিক খ) লিখিত দলিল দ্বারা।
ক) মৌখিক ঘোষণা: মৌখিক ঘোষণা দ্বারা যদি প্রমানিত হয় যে, দানটি আইনগতভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে তাহলে মৌখিক ঘোষণা দ্বারা দান করা যায়।
উক্ত ঘোষনাটি দলিলে লিপিবদ্ধ করে রেজিষ্ট্রী করা না হলে ও দানটি বৈধ।সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ১২৯ ধারা নিম্নরুপ।
১২-ধারা মৃত্যু সম্ভাবনাজনিত দানের ব্যতিক্রম ও মুসলিম আইন: এই অধ্যায়ের কোন কিছু মৃত্যুর সম্ভাবনাকালে অস্থাবর সম্পত্তি দানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবেনা অথবা মুসলিম আইনের কোন বিধানকে প্রভাবিত করেছে বলে গণ্য হবে না। এই ধারায় বলা হয়েছে যে সম্পত্তি হস্তান্তর  আইনের কোন বিধানকে প্রভাবিত করেছে বলে গণ্য হবে না। এই ধারায় বলা হয়েছে যে সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের অষ্টম অধ্যায় ইসলামী অাইনের অধীন দানের প্রযোজ্য নয়।
খ) লিখিত দান: দাতা লিখিত দলিল মূলে তার সম্পত্তি দান করতে পারে।রেজিষ্ট্রেশন আইনের বিধান মতে দানটির মূল্য একশত টাকার উধ্বে হলে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।এতে মুসলিম আইনের বিধান মতে অন্যান্য শতাবলী পূরণ ব্যতীত কেবলমাত্র রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে দান বৈধ হবে না ।
দ্বিতীয়ত: দখল অর্পণ:
(১) একটি বৈধ দান সুষ্ঠভাবে সম্পাদনের জন্য দানের বিষয়বস্ত দান গ্রহীতার অনূকূলে দখল অর্পণ অপরিহায।দাতাকে দানের বিষয়বস্ত অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। আলোচ্য ওয়াকফ আইন ১৯৬২ এর ১২৯ ধারা এই বিধান দিয়েছে যে, বর্তমান ধারা মুসলমানদের উপর প্রযোজ্য নয়। মুসলিম আইনে দখল অর্পণ অত্যন্ত মূল্যবান।দখল-অর্পণের সাথে সাথেই দান কাযকরী হয়।দখল অর্পনের সাথে সাথে যদি একটি দলিল ও করা হয়, সেক্ষেত্রে ঐ দলিল অনাবশ্যক গন্য হবে।ঐ দলিল রেজিষ্ট্রি না হইলে বা প্রত্যায়িত না হইলে এটি বলা যাইবে না যে, দান কাযকরী হয় নাই।মুসলমান আইনে রেজিষ্ট্রী দলিল করিবার কিংবা প্রত্যয়ন করিবার কোন বিধান নাই।
কোন মুসলমান যদি হিন্দুকে সম্পত্তি দান করেন তা মৌখিক করতে পারেন।এক্ষেত্রে বর্তমান ধারা প্রযুক্ত হয়না। হিন্দু আইন ও এক্ষেত্রে প্রযুক্ত হয় না।
বৌদ্ধ আইনে দানকে সিদ্ধ করতে হলে দখল অর্পণ একান্তভাবে আবশ্যক।বৌদ্ধ আইনের এই বিধান আলোচ্য ধারা রদ ও রহিত করে দিয়েছে ।সুতরাং বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধমাবলম্বিগণ দখল ব্যতিরেকে শুধুমাত্র রেজিষ্ট্রী দলিল দ্বারা দান সম্পন্ন করতে পারেন।
(২) দখল ও রেজিষ্ট্রিকরণ: দানের সম্পত্তিটি দখল না দেয়ার অবৈধতা, দানটি রেজিষ্ট্রিকৃত করলেই বৈধ হবে না।
(৩) দখল প্রদান করা হয়েছে এ মমে দান পত্রে প্রদত্ত কোন ঘোষনা দাতার ওয়ারিসকে বাধ্য করবে।
(৪) দান নামায় নাবালক ভাইপোকে দখল দেয়া হয়েছে মমে ঘোষণা, পিতা বা অভিভাবকের মাধ্যম ছাড়া দাতার ওয়ারিসদের বিরুদ্ধে স্বত্ব সৃষ্টির জন্য যথেষ্ঠ নয়।
(৫) সম্পত্তিটি দাতা ও দানগ্রহীতার উভয়ের দখলে থাকবে: দানকালে যদি দানের বিষয়বস্ততে দাতা ও দানগ্রহীতা উভয়ে যদি একত্রে বসবাস করে, এমন ক্ষেত্রে দাতার শারীরিকভবে উক্ত দানের বিষয়বস্ত পরিত্যাগ এবং দান-গ্রহীতা কতৃক দখল গ্রহন আবশ্যক নয়।এক্ষেত্রে দখল হস্তান্তরে পরিস্কার মানসিকতা দাতার থাকলে দানটি বৈধ হবে।সম্পত্তিটি দান গ্রহীতার অনুকূলে দখল অর্পণ করতে হবে কিংবা মালিকানা সংক্রান্ত দখল হস্তান্তর করতে হবে কিংবা রাজস্ব খাতায় দান গ্রহীতার নামজারী করতে হবে।
(৬) দাতা -দানগ্রহীতা: দানের বিষয়বস্তুর দখল দানের বিষয় যা কিছু করণীয় তা করে থাকলে দানটি বৈধ।
(৭) বস্তুস্ব হীন সম্পত্তি ও মোকাদ্দমার দাবী দান সংক্রান্ত দখল:
দাতা কতৃক ঘোষিত দানের বিষয় বস্তুটি যদি বস্তু স্বত্বাধীন সম্পত্তি বা মোকাদ্দমাযোগ্য দাবী হয়ে থাকে।সেক্ষেত্রে উক্ত সম্পত্তি হতে দাতার সমুদয় অধিকার প্রত্যাহার করে দান গ্রহীতার কাছে দখলদানের জন্য পরিস্কার মনোভাব প্রদর্শন করলে দানটি সম্পূর্ণ হবে।
(৮) সরকারী অঙ্গীকার পত্র: সরকারী অঙ্গীকারগণের দান, পত্র সমর্থন ও দানগ্রহীতাকে হস্তান্তরের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে পারে ।যেমন উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝা যাবে, রাজন জমাকৃত টাকার, যা হস্তান্তর যোগ্য নয় একটি রশিদ, স্ত্রীকে অর্পনান্তে বললো, আমি এটি তোমার নামে ব্যাংকে গিয়ে হস্তান্তর করবো।হস্তান্তরের আগেই সে মারা গেল।দানটি অসম্পূণ।
(৯) প্রত্যয় ও অবস্থার প্রেক্ষিত দখল: দাতা কতৃর্ক দানকৃত কোন কোন সম্পদ করা যায় এবং কোন কোন গুলো হস্তান্তর করা যায়না -এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।সুতরাং দানের বৈধতার বেলায় এটি বিবেচনাযোগ্য।
(১০) দখলবিহীন দান: দখলবিহীন দান গোড়া থেকেই বাতিল।
(১১) যেমন দখল ছিল তেমন দান: দাতা দানকৃত সম্পত্তিতে যেমন দখল ছিল, ঠিক তেমনি দখল দান গ্রহীতাকে দখল অর্পণ করবেন ।
(১২) আদালতের বিবেচনা: আদালতকে দখলের প্রকৃতি ও বিরাজমান অবস্থা খুঁটিয়ে দেখতে হবে যে, ঠিক তেমনি দখল দানগ্রহীতাকে অর্পণ করবেন।
(১৩) নামজারী: কেবলমাত্র নামজারী দখলদানের বিকল্প নয়।দানের সম্পত্তি হস্তান্তর যথেষ্ঠ, নামজারী নয়।
(১৪) দানের পর দখল: দানটির দখল আইনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।পরে উক্ত দানগ্রহীতা কতৃক অন্যের বরাবরে দখলদান করা যেতে পারে এবং তা বৈধই।
(১৫) দলিলে দখল অর্পণের ঘোষণা: দলিলে দখল অর্পণের ঘোষণা থাকলেই যথেষ্ঠ নয়।প্রমাণের মাধ্যমে তা যাচাইযোগ্য।এটি একটি খন্ডনযোগ্য অনুমান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।অনেক ক্ষেত্রে দলিলের দখল অর্পণের ঘোষণা উত্তরাধিকারীদের উপর বাধ্য বাধকতা সৃষ্টি করে।

কি দান করতে পারে: দাতার মালিকাধীন যে কোন বৈধ মাল হেবা করা যায়।কোন অবৈধ  মাল দান করা বৈধ নয়।যেমন মদ,শুকর ইত্যাদি।
অবিভক্ত সম্পত্তি দান করা যায়।
  • যেসব সম্পত্তি বিভক্ত করা যায় না তা হেবা করা যায়;
  • বিভক্ত করার উপযুক্ত সম্পত্তি বিভক্ত না করে হেবা করলে তা বাতিলযোগ্য বলে গন্য।কিন্তু
  • একজন ওয়ারিশ থাকলে ওয়ারিশের অনুকূলে বিবাদযোগ্য সম্পত্তি বিভক্ত না করে দান করতে পারে।
  • অবিভক্ত সম্পত্তি হলে মুশা , যা হতে পারে স্থাবর বা অস্থাবর।
সম্পত্তির উপস্বত্ব দান: কোন সম্পত্তি দাতা কতৃক দানগ্রহীতার বরাবরে এ শতে হস্তান্তর করল যে, দানগ্রহীতার গতায়ুর পর উক্ত দান সম্পত্তি দাতা,র কাছে বা তার উত্তরাধিকারী বা তার বৈধ প্রতিনিধির কাছে পুনরায় ফিরে আসবে।এটি বিধিসন্মত দান।এ ধরনের দান,দানগ্রহীতার জীবনকালপর্যন্ত বহাল থাকে।
  • পাওনাদেরকে প্রতারিত করার উদ্দেশ্য কোন দান বাতিলযোগ্য, কেননা পাওনাদার দান সম্পাদনের পর দান করে দিলে পাওনা মওকুফ করে দিতে পারে।
  • কোন বিনিময়পত্র বা সরকারী প্রজ্ঞাপত্র।
  • স্বত্ব ভাড়া ,লীজের জমি ও বন্ধককৃত সম্পত্তি।
  • কোন দরগায় প্রদত্ত শিরণীর নিদির্ষ্ট অংশ লাভের অধিকার।
  • বিপরীত মুখী আইন স্বত্বের কোন বীমা পলিসি ঘটনা সাপেক্ষ হবে তার দান অবৈধ।
  • কোন খাই খালাসী বন্ধকী জমির খালাসের সম অধিকার।
  • দাতার বেদখলী সম্পত্তি দান অবৈধ।
  • প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী শতযুক্ত দান।             
কোন বৈধ দানের শর্ত হলো দাতা কতৃক দানের বস্তর দখল সংরক্ষণ না করা।তবে দাতা এরুপ শর্তারোপ করতে পারেন যেদাতা তার জীবন কাল পযর্ন্ত দানগ্রহীতা দানকৃত সম্পত্তি হতে যে আয় হবে তা থেকে প্রদান করবে।এটি বৈধ হবে।এধরনের দানকৃত সম্পত্তির আয় কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি বগের বরাবরে অপণের্র শতারোপ করতে পারেন।
  • সম্ভাব্য ঘটনা সাপেক্ষে হেবা বৈধ নয়।
  • হেবার বস্তু ও উপস্বত্ব: দানের বিসয়বস্ত হস্তান্তর করত এর উপস্বত্ব সংরক্ষণ করা চলে।তবে বস্তর হস্তান্তর না করলে দানটি বৈধ হবে না।
দুই বা ততোধিক গ্রহীতাকে দান: বিভাগযোগ্য কোন সম্পত্তি বিভক্ত না করে কতিপয় দানগ্রহীতাকে দান করলে দান বৈধ নয়, তবে দানগ্রহীতারা দানের সম্পত্তি হস্তান্তর গ্রহনের পর বিভক্ত করে নিলে তা বৈধ।অন্য একটি মোকাদ্দমার রায়ে বাতিলযোগ্য বলা হযেছে ।কেননা তা পরবতী ব্যবস্থাপনা সাপেক্ষ।
দাতা ও দানগ্রহীতাকে যৌথ দখলের বেলায়: দাতা ও দানগ্রহীতা যেখানে একই সম্পত্তিতে বসবাস করছে, সেখানে বাস্তব হস্তান্তর এবং তা গ্রহন দরকার পড়েনা।
ক) মা কর্তৃক কন্যাকে দান: মা-মেয়ে একই জমিতে বসবাস করে মা যদি কন্যাকে সব সম্পত্তি দান করে, তাহলে এর দখল অর্পণ প্রয়োজন নেই।দানটি বৈধ।
খ) পিতা কর্তৃক পুত্রকে দান: পিতা প্রথমত: পুত্রকে একটি বাড়ী দান করত তার দখল অর্পণ করল।পরে পিতা যদি পুত্রের সঙ্গে সে বাড়িতে বসবাস করে তাহলে উক্ত দান অবৈধ।
গ) সহ-কারীদের মধ্যে দান: একত্রে বসবাসরত একটি বাড়ী একজন সহকারী যদি অপর সহকারীকে দান করে উক্ত বাড়ীটির দান অবৈধ হবে না।
ঘ) ভাই এর পুত্রকে দান: জনৈক মহিলা তার ভাইয়ের পুত্রের সাথে একই বাড়ীতে বসবাসরত অবস্থায় ঐ বাড়িটি ভাইয়ের পুত্রকে দান করে।
দানটি বৈধ।
ঙ)মা কর্তৃক শিশুপুত্রকে দান: পিতা জীবিত নেই এর অন্য কোন অভিভাবক ও নিযুক্ত হয়নি এমন অবস্থাতে মা তার শিশু সম্পত্তি সন্তানকে সম্পত্তি দান করতে পারে। এখানে দখল অর্পণ নিষ্প্রয়োজন।পিতা বেঁচে থাকলে দানকৃত সম্পত্তিটি পিতার কাছে হস্তান্তর করা প্রয়োজন।
চ) পিতা কতৃর্ক পুত্রকে দান: সম্পত্তি পিতা কতৃক পুত্রকে দান বৈধ।তবে তা দখল অর্পণ করতে হবে যদি পুত্র সাবালক হয়।পুত্র নাবালক হলে আনুষ্ঠানিকভাবে দখল অর্পণ প্রয়োজন নেই ।সদিচ্ছা থাকা দরকার।এটি দানপত্র দলিলে উল্লেখ থাকাই উত্তম।দানগ্রহীতা নাবালক এবং অভিভাবক পিতা,দাদা উক্ত নাবালক নাতীকে দান করতে চাইলে তার পিতার বরাবরে দান সম্পত্তির হস্তান্তর আবশ্যক।যদি ও নাবালকের কাযত: অভিভাবক হিসেবে দাদাই থেকে থাকেন তাহলে ও উক্ত দান সম্পত্তিটি পিতার বরাবরে দখল অর্পণ করতে হবে।
ছ) স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে দান: স্বামী তার স্ত্রীর অনুকূলে দান করতে পারে।অথাত্‍ যেক্ষেত্রে বিবাহিত দম্পতি একই বাড়িতে বাস করে এবং যে বাড়ীর মালিক স্বামী কিংবা স্ত্রী হয়, সেক্ষেত্রে একে অপরের বরাবরে হেবা করে দিতে পারে।এমন পরিস্থিতিতে দখল অর্পণের প্রয়োজন নেই।এমন পরিস্থিতিতে দখল অর্পণের কথা বলা মানে একজনকে গৃহত্যাগ করতে বলা। আইন এধরনের কঠোর মনোভাব পোষণ করতে বলেনা। এজন্য দখল অপর্ণ প্রয়োজন নেই।দানকৃত সম্পত্তিটি খারিজ করে স্ত্রীর নামে নাম পত্তন করে দিলেই চলে।স্বামীর দানকৃত সম্পত্তি হতে ভাড়া আদায় বা তথায় নিজে বসবাস করলেও তা বৈধ হবে।
যেমন: এক ভদ্রলোক তার বসতবাড়ি এবং বহিমর্হলের কিছু ঘর স্ত্রীর বরাবর হেবা করেন।তিনি ঐ বাড়ির চাবি তার স্ত্রীর বরাবরে স্ত্রীর হাতে তুলে দেন। স্ত্রীকে যে তিনি সম্পূর্ণভাবে দখল ছেড়ে দিয়েছেন তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করবার জন্য তিনি কিছুদিন অন্যত্র অবস্থান করেন।তারপর ফিরে এসে তার স্ত্রীর সাথে মৃত্যুকাল পযর্ন্ত বাস করেন।এই হেবা সম্পূর্ণ এবং আইনসন্মত ।স্ত্রীর বরাবরে হেবা দেবার পর এবং স্ত্রীর নামজারি করে দেবার পর স্বামী যদি ঐ স্ত্রীর সাথে ঐ বাড়িতে বসবাস করে বা ভাড়া আদায় করে তবে তবে হেবাকে অকাযকর বলা যায়না।এই ক্ষেত্রে ধরে নিতে হয় যে স্বামী-স্ত্রীর এজেন্ট রুপে কাজ করেছে।
হেবানামার মধ্যে যদি লেখা থাকে যে স্ত্রীর বরাবরে দখলার্পণ করা হয়েছে এবং হেবানামা যদি স্ত্রীর হাতে দিয়ে দেওয়া হয়, তবে হেবাকে কাযকরী করতে নাম জারির ওপ্রয়োজন পড়ে না।এই সম্পকে সাম্প্রতিককালের একটি নজীর উদ্বৃত করা হচ্ছে।শুধুমাত্র স্ত্রী ভাড়া আদায় করেছে এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় না যে স্বামী-স্ত্রীকে বাড়িখানি হেবা করে দিযেছিলেন।কোন হেবানামা সম্পাদিত হয় নাই, কোন নামজারি হয় নাই এগুলি হলে স্বামী-স্ত্রীর  মধ্যে এই বাড়ি দখলার্পণ নিয়ে কোন গুরুতর প্রশ্ন উঠত না।এইক্ষেত্রে শুধু ভাড়া আদায়ের উপর ভিত্তি করে হেবার দাবি মেনে নেওয়া যায় না।যে পক্ষ হেবার দাবি করে সে পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে সেই দাবির প্রমাণ দিতে বাধ্য।
জ) ভাড়াটিয়ার দখলীয় সম্পত্তি দান: যেইক্ষেত্রে দানকৃত সম্পত্তি ভাড়াটিয়ার দখলে থাকে, সেইক্ষেত্রে ভাড়াটিয়া কতৃক দান গ্রহীতাকে নতুন মালিক হিসেবে মেনে নেওয়ার মাধ্যমেই গ্রহীতার বরাবরে দখল অর্পণ কাযকরী হইতে পারে।যখন দান গ্রহীতা দানকৃত বাসা বাড়ীতে উপস্থিত থাকেন, তখন, দাতার ঘোষণার দ্বারাই গ্রহীতার বরাবরে দখল হস্তান্তরিত হবে।যেইক্ষেত্রে দাতা স্বত্বের দলিল এবং দালিলিক প্রমাণাদি গ্রহীতার দখলে প্রদান করেন এবং গ্রহীতাকে তার স্বত্ব প্রতিষ্ঠায় সমর্থ করেন এবং ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে দখল উদ্ধার করেন বা গ্রহীতার বরাবরে দখল ছেড়ে দেবার জন্য প্রকাশ্যভাবে ভাড়াটিয়াকে নিদের্শ দেন , সেইক্ষেত্রে এই দাতার সব কাযাবলী দানকে বৈধ করার মত দখল অর্পণ বলে গন্য হতে পারে।
ভাড়াটিয়াদের দখলীয় স্থাবর সম্পত্তির দান তখনই সম্পন্ন হবে, যখন দাতা ঐ সম্পত্তির দখল দান গ্রহীতাকে দেবার জন্য ভাড়াটিয়াদেরকে অনুরোধ করবে।অথবা মালিকানা সংক্রান্ত দলিল হস্তান্তর করবে কিংবা রাজস্ব খাতায় বা মালিকের সেরেস্তায় নাম জারী করবে।তবে, স্বামী যেক্ষেত্রে তার জীবদ্দশায় এ জমির ভাড়া আদায়ের অধিকার স্বয়ং সংরক্ষিত রেখেছেন পৌর কর প্রদান করেছেন, সেক্ষেত্রে দলিলে দান গ্রহীতাকে দখল প্রদান করা হয়েছে বলে উল্লেখিত থাকলেই এতে দানটি সম্পূর্ণ হবে না।যেইক্ষেত্রে দাতা গ্রহীতার বরাবরে সম্পত্তিটি  পৌর  এবং সরকারী ভূমি রেকর্ড হস্তান্তর করেছেন, সেক্ষেত্রে এ দানটি বৈধ হবে।কিন্তু যেক্ষেত্রে দান করার ইচ্ছা সম্পকে এধরনের নি:শর্ত ঘোষণা নাই, অথাত্‍ দানপত্র দলিল বা নাম খারিজ , দানের প্রস্তাবিত সম্পত্তির ভাড়া আদায় সেইক্ষেত্রে ভাড়াটিয়া কর্তৃক গ্রহীতাকে মেনে না নিলে বৈধ দান প্রমাণিত হবে না।
ট্রাষ্টের মাধ্যমে দান: ট্রাষ্টের মাধ্যমে ও দান করা যাবে।ট্রাষ্টের মাধ্যমে দান কোন তৃতীয় ব্যক্তির মাধ্যমে দান ব্যতীত আর কিছুই নয়।সুতরাংএই ক্ষেত্রেও দাতা কতৃক ট্রাষ্টীর বরাবরে দখল হস্তান্তর করার প্রয়োজন আছে।তবে সেক্ষেত্রে উইল দ্বারা ঘোষণা করা হয় বা গ্রহীতা নিজেকে ট্রাষ্টী হিসেবে ঘোষণা দেয়, সেক্ষেত্রে দখল অর্পণ করা দরকারী নয়।অন্যান্য সব ক্ষেত্রে দাতাকে দানের বিষয় বস্তর উপর সব নিয়ন্ত্রণ হতে নিজেকে বিমুক্ত করতে হবে এবং যদি তা না করে, তবে দান অবৈধ হবে।সাধারণ দানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শতাবলী ট্রাষ্ট্রের মাধ্যমে সৃষ্ট দানের ক্ষেত্রে ওপ্রযোজ্য।
ভবিষ্যতের জন্য দান: ভবিষ্যতের কোন কালের কোন এক সময়ে কাযকরী হবার জন্য কোনভাবে দান করা যাবেনা। অতএব, কোন সম্পত্তি বা ভূসম্পত্তির ভবিষ্যতে উত্‍পাদিত হবে এমন দ্রব্যাদির বা আয়ের ব্যাপারে কোন দান করা অবৈধ।ভবিষ্যতের কোন দান অবৈধ বা বাতিল হওয়ার এই নীতি এই মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত যে,দানের বিষয়বস্ত অবশ্যই দানের সময় বিদ্যমান বা অস্তিত্ব সম্পন্ন থাকতে হবে।
(ক) ক কে খ'কে বলিল, ''আমি তোমার জন্য যে বাড়ীটি নিমার্ণ করবো, তা দান করলাম।" এই দানটি বাতিল, কারণ বাড়ীটি ভবিষ্যতে তৈরী হবে।
(খ) একজন মুসলমান এই মমে তার স্ত্রীর অনুকূলে একটি দানপত্র করলো যে,কোন একটি গ্রাম্য জায়গীরের আয়ে তার প্রাপ্য অংশ হতে প্রত্যেক বত্‍সর তার স্ত্রী ও স্ত্রীর উত্তরাধিকারীগণ আজীবন ৪০০০/ = টাকা করে পাবে।এটি ভবিষ্যতে তৈরি হবে।
(গ) ক, খ এর অনুকূলে এই বলে একটি দানপত্র দলিল সম্পাদন করলো যে, "যতদিন আমি জীবিত থাকবো, এই সম্পত্তির ভোগদখল করবো এবং তা বিক্রয় কিংবা কাউকে দান করে দিব না; তবে আমার মৃত্যুর পর তুমি মালিক হবে। "এই দানটি বাতিল কারণ এতে দখল প্রদান করা হয় নাই এবং ক এর মৃত্যু না হওয়া পযর্ন্ত এটি কাযর্কর হতে পারবেনা।
অমুসলিমকে দান: একজন মুসলিম একজন অমুসলিমকে সম্পত্তি দান করতে পারে , তবে তা দখল অর্পনান্তে করতে হবে।এক্ষেত্রে সম্পত্তি হস্তান্তর আইন কাযর্করী হবে না।দানের পর দাতা উক্ত সম্পত্তি স্বীয় ব্যক্তিগত আইন বলে হস্তান্তর যোগ্যতা অর্পণ করে।
মসজিদের জন্য হেবা: মসজিদ একটি আইনগত ব্যক্তি।এর বরাবরে দান বৈধ।এ দান ওয়াকফ হিসেবে গন্য হবে।মসজিদের মত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ও দান করা যায়।
একজন অমুসলিম ও একজন মুসলমানকে দান করতে পারে। স্বামী তার নাবালিকা স্ত্রীকে ও দান করতে পারে।

কখন দান করা যায়: দান সাধারণত দু,অবস্থায় করা যায়। যেমন -
(ক) সুস্থ অবস্থায়
(খ) মৃত্যু ব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায়।
সুস্থ অবস্থায় দান: সাধারণত দাতা যখন সুস্থ থাকেন, তখনই তিনি দান করতে পারেন এবং সে দান, দানের শতাবলী - সাপেক্ষে কাযকরী হয়ে থাকে।
দানের প্রমাণ: মুসলিম আইন অনুসারে একজন সম্পত্তির মালিক তার মালিকাধীন সম্পত্তির সবটা কিংবা আংশিক হেবার মাধ্যমে দান করতে পারেন।
দাতার দানসংক্রান্ত বিষয় যারা প্রমাণ করতে চায় তাদেরকে এটি প্রমাণ করতে হবে যে দানটি যথারীতি সম্পাদিত হয়েছে।দখলের বিষয়টি যতটুকু সম্ভব ততটুকু অপির্ত না হলে দানটি বৈধ হবে না।এছাড়া দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ই দানটি মৌখিকভাবে হয়েছিল বলে স্বীকার   করেছেন এবং গ্রহীতা দানটি গ্রহণ করেছেন, এবং অন্যান্য প্রমাণেও দেখা যায় যে, দানটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেক্ষেত্রে দান করার বিষয়টি প্রমানিত বলে গণ্য হবে।একইভাবে হেবা বিল-এওয়াজের ক্ষেত্রে দখল কালের আবশ্যকতা নেই।কেবলমাত্র প্রতিদানটি প্রকৃতভাবে প্রদত্ত হয়েছে কিনা এবং তা কাযগ্রহীতা কতৃর্ক গ্রহণ প্রমাণই যথেষ্ঠ।
দানটি পরে হলে,
হেবার নিয়মানুযায়ী হেবার ঘোষণার উপর দখল অর্পণ ছাড়া হেবা সম্পূর্ণ হয় না।তবে অনেক ক্ষেত্রে পরে অর্পণ করলে চলে। 
কে প্রশ্ন করতে পারে?
দাতা বা তার মাধ্যমে দাবীকারী ব্যক্তি, অথবা দানগ্রহীতা বা তার মাধ্যমে দাবীকারী ব্যক্তি, আগন্তুক নয়, দানের বিষয়বস্তুর হস্তান্তর সম্পকির্ত প্রশ্ন তুলতে পারে।
মৃত্যু ব্যধিগ্রস্ত অবস্থায় দান: মৃত্য ব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় দান করা বৈধ নয়।কিন্তু দানকৃত সম্পদ গ্রহীতার কাছে হস্তান্তর করলে সবাধিক ১/৩ অংশ সম্পত্তিতে তা কাযকর হবে এবং হস্তান্তরের আগেই দাতা মারা গেলে দানটি বাতিল বলে গণ্য হয়।
দান প্রমানের দায়িত্ব: মুসলিম অাইনের বিধান মতে একজন সম্পত্তির মালিক তার মালিকাধীন সবটা কিংবা আংশিক হেবার মাধ্যমে দান করতে পারেন।দাতার দান সংক্রান্ত বিষয় যারা প্রমাণ করতে চায় তাদেরকে এটি প্রমাণ করতে হবে যে দানটি যথারীতি সম্পাদিত হয়েছে।দখলের বিষয়টি    যতটুকু সম্ভব ততটুকু অপির্ত না হলে দানটি বৈধ হবে না।অনুরুপভাবে হেবা-বিল-এওয়াজের ক্ষেত্রে দখল কালের অাবশ্যকতা নেই।কেবলমাত্র প্রতিদানটি প্রকৃতভাবে প্রদত্ত হয়েছে কিনা এবং তাত্‍ক্ষণিকভাবে দাতা দান সম্পত্তি দানগ্রহীতার অনুকূলে অপির্ত এবং কাযর্গ্রহীতা দ্বারা গ্রহণ প্রমাণই যথেষ্ট ।অথাত্‍ যখন দাতা এবং গ্রহীতা উভয়ই দানটি মৌখিকভাবে হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন এবং গ্রহীতা দান করেছেন, এবং অন্যান্য প্রমাণে দেখা যায় যে দানটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেক্ষেত্রে দান করার বিষয়টি প্রমাণিত বলে গণ্য হবে।
দানটি পরে হলে হেবার নিয়মানুযায়ী হেবার ঘোষনার উপর দখল অর্পণ ছাড়া হেবা সম্পূর্ণ হয় না।তবে অনেক ক্ষেত্রে পরে অর্পণ করলে চলে।
কে প্রশ্ন তুলতে পারে?
দানগ্রহীতা বা তার মাধ্যমে দাবীকারী ব্যক্তি, অাগন্তুক নয়, দানের বিষয়বস্তুর হস্তান্তর সম্পকিত প্রশ্ন তুলতে পারে।
মুশাহ বা অবিভাজ্য সম্পত্তি: মুশাহ শব্দের অর্থ অবিভক্ত অংশ।কোন একজন মুসলমানের স্থাবর কিংবা অস্থাবর সম্পত্তিতে অবিভক্ত অংশ থাকলে একে 'মুশাহ' বলা হয়।বিভাগযোগ্য বস্তু বা সম্পত্তিতে ভাগ না হয়ে থাকলে সেখানে বিশৃংখলার সৃষ্ট হতে পারে।সেখানে যাতে বিশৃংখলার সৃষ্টি হতে না পারে তা রোধই মূলত মুশার উদ্দেশ্য।কেননা এটি দখলের সাথে সম্পকির্ত। যে সম্পত্তি যে স্থলে ভাগ করা যায় সেখানে তা ভাগ করে দখল দান করলে বিশৃংখলা হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
ডি.এফ মোল্লার মতে "Musha is an undivided share in Property either movable or immovable"
সম্পত্তি অবিভাজ্য হলে মুশাহর দান:
সম্পত্তি যদি ভাগ না করা যায় সে সম্পত্তির প্রাপ্য অবিভক্ত অংশ (মুশা) হেবা বা দান করা যায়।অথাত্‍ সম্পত্তিটি এই প্রকৃতির হয় যে, ভাগ বাটোয়ারা করার চাইতে অবিভাজ্য অবস্থায় এর ভোগ দখল বেশী লাভজনক ,তবে মুশাহ বা অবিভক্ত সম্পত্তির দান বৈধভাবে করা যাবে।
উদাহরণ:১) কবির একটি বাড়ীর মালিক। সে নইমকে উক্ত বাড়ী এবং পার্শ্ববতী একটি বাড়ীর মালিকের সাথে যৌথভাবে ব্যবহূত  একটি সিড়ি ব্যবহ্রারের অধিকার হেবা করে দিল।উক্ত সিড়িতে কবিরের অবিভক্ত অংশের হেবা বা দান বৈধ।কারণ সিড়িটি বিভাগযোগ্য নয়।
২) একটি পুকুরের পানির অংশ ভাগ করা সম্ভব নয় ,কাজেই এরা অবিভাজ্য অংশ, একটি বৈধ দানের বিষয়বস্তু হতে পারে।
৩) তেমনিভাবে, একটি পুকুরের অবিভক্ত পাড় প্রকৃতিগতভাবে ভাবেই ভাগ করার চাইতে অবিভক্ত অবস্থায় সুবিধাজনকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে।
সুতরাং উপরোক্ত অবিভক্ত সম্পত্তি অবিভক্ত অবস্থায় বৈধভাবে দান করা যাবে।
সম্পত্তি বিভাজ্য হলে মুশাহর দান:
যে সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করা যায় অথাত্‍ বিভাগযোগ্য সম্পত্তির অবিভক্ত অংশের বা মুশাহর দান অনিয়মিত (ফাসিদ)হবে কিন্তু বাতিল হবে না।দানটি অনিয়মিত, কিন্তু বাতিল না হওয়ায় পরবতীকালীন বিভাগ দ্বারা এবং দানগ্রহীতাকে তার অংশের দখল অর্পণ দ্বারা উক্ত দানকে বৈধ করা যেতে পারে।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝা যাবে :
এলাহী তার একখন্ড বিভাজ্য জমি অথচ বর্তমানে অবিভাজ্য মালেককে দান করলো।দান করলে অংশটি ভাগ বাটোয়ারা করা হলে এবং এলাহী তার হেবাকৃত অংশটুকু মালেকের বরাবরে দখল প্রদান করলো।দানটি প্রথম অবস্থায় অথাত্‍ শুরুতে অনিয়মিত ছিল বর্তমানে তা নিয়মিত হয়ে গেল।একবার দখল গৃহীত হলেই দানটি বৈধ হবে।এই নিয়মের কারণ হল ,যা করা হয়েছে, তা সম্পকে যাতে কোন দ্বিধাদন্ধ না থাকে।যদি সম্পত্তিটি পৃথকভাবে দখল করা সম্ভব হয় কিন্তু তা স্বত্বেও দাতা তার  অন্য দখলীয় অংশ হতে যা দিতে চান, তা পৃথক না করেন, তাহলে কেউই বলতে পারবেন না যে তিনি কি দিতে চেয়েছিলেন এবং এর ফলে অবশ্যই দ্বিধার উদ্রেক হবে।
ব্যতিক্রমসমূহ:
অবিভক্ত অংশের হেবা যদি ও তা বিভাগযোগ্য সম্পত্তির অংশ বিশেষ তবু ও হেবা গঠনের মুহুর্ত হতে তা বৈধ হবে যদি ও নিম্ন বণির্ত ক্ষেত্রসমূহ প্রদত্ত অংশটি বিভক্ত করা হয়নি এবং দান গ্রহীতাকে তা হস্তান্তর করা হয়নি ।
শরীকের বরাবরে:
যেখানে দানটি একজন সহ উত্তরাধিকারী কর্তৃক অন্য একজন সহ উত্তরাধিকারীকে সম্পাদন করা হয়েছে সেক্ষেত্রে দানটি বৈধ হবে।
যেমন একজন মুসলিম মহিলা,মা, একছেলে এবং একমেয়ে রেখে মারা যায়।উত্তরাধিকারী সূত্রে ঐ মহিলার সম্পত্তির ষষ্ঠমাংশ তার মা পায়।তার মা তার ঐ অবিভক্ত ষষ্ঠমাংশ মরহুমার ছেলে এবং মেয়ের বরাবরে হেবা করে দেয়।প্রিভি কাউন্সিল এই হেবাকে সিদ্ধ ঘোষণা দেয়।কোন সমাজের উন্নতিশীল অবস্থায় মুশাহর মতবাদটি সম্পূর্ণভাবে অনুপযোগী এবং একে অবশ্যই খুবই সীমিত গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা উচিত।একটি দান অবিভাজ্য হওয়ায় সম্পত্তির কোন একটি অংশের দখল দানটিকে কাযর্কর করতে পারে।
জমিদারী বা তালুকের অংশ:
যেখানে দানটি একটি জমিদারী বা তালুকের অংশ সেখানে মুশাহ এর ব্যতিক্রম প্রযোজ্য।অথাত্‍  কোন জমিদারী বা তালুকের অংশ দান করা হলে দানটি বৈধ হবে। যেমন ক,খ, ও গ একটি জমিদারীতে সহ-অংশীদার। প্রত্যেক শেয়ার সরকার কতৃর্ক পৃথকভাবে হিসাবকৃত ও আদায় রহিতে পৃথক নম্বরে লিখিত এবং প্রত্যেক শেয়ারের স্বত্বাধিকারী খাজনায় একটা নির্দিষ্ট অংশ সংগ্রহের অধিকারী।ক জমিদারী ভাগ না করেই খ কে তার অংশটি দান করলো।
দানটি বৈধ।
বাণিজ্যিক শহরে লাখেরাজ সম্পত্তি:
যেখানে হেবাটি একটি বাণিজ্যিক শহরে লাখেরাজ সম্পত্তির অংশ সেখানে দানটি বৈধ হবে। যেমন ক এর রেঙ্গুনে একটি বাড়ী অাছে। সে এর ১/৩ অংশ খ কে দান করলো ।সম্পত্তিটি একটি বড় বাণিজ্যিক শহরে অবস্থিত বলে প্রদত্ত হেবা বৈধ।
কোম্পানীর শেয়ার বা অংশ:
যেখানে দানটি কোন কোম্পানীর শেয়ার বা অংশ।যেমন ক একটা কাযের্র অংশীদার। সে তার অংশের শেয়ারটি খ কে দান করলো।যতক্ষণ পযর্ন্ত  না অংশটি বিভক্ত হচ্ছে এবং খ কে দখল অর্পণ না করা হচ্ছে ততক্ষণ পযর্ন্ত  ওটি বৈধ নয়।
অপিত অবশিষ্টাংশের বা দানে অন্যকে দান: (Vested remainder or gift over):
মুসলিম আইনের কোন মতবাদেই অপিত অবশিষ্টাংশের দান বা দানে অন্যকে দান বৈধ নয়।সম্পত্তির বস্তুর উপর আইন কেবলমাত্র নিরংকুশ দখল, উত্তরাধিকারযোগ্য এবং সময়ের দৃষ্টিকোণ হতে অসীম অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় ; এবং যেক্ষেত্রে বস্তুর দানে এধরনের দখল ও অধিকারের সাথে অসংগতিপূর্ণ শর্ত আরোপ করা হয়, সেক্ষেত্রে শর্তটি পরিপন্থীরুপে প্রত্যাখাত হবে।
যেমন উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, ক যদি কোন সম্পত্তি খ এবং গ কে এই শতে দান করে যে, তাদের যে কেউ ছেলে সন্তান না রেখে মারা গেলে তার অংশটি অন্যজনের কাছে চলে যাবে।আগে শিয়া আইনে এধরনের দান বৈধ ছিল।কিন্তু পরবতীর্তে বিভিন্ন সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে,এই নীতি প্রযোজ্য হবে না এবং এইভাবে অন্যকে দান ( gift over  ) বাতিল হবে এবং ক  ও খ শর্তহীনভাবে তাদের স্ব স্ব অংশ প্রাপ্ত হবে।
সুন্নী আইন অনুসারে এ ধরনের দানে আরোপিত শতটি বাতিল হবে এবং ক ও খ দানকৃত সম্পত্তিতে তাদের প্রত্যেকের অংশ শর্তহীনভাবে পাবেন এবং এটি তাদের নিজ নিজ ওয়ারিশদের উপর বতাবে।
দান প্রত্যাহার বা রদ: দান রদ বা প্রত্যাহার করা যায় কিনা প্রশ্নে জবাব এক কথায় দেয়া দুস্কর।তবে বলা যায় ক্ষেত্রবিশেষে তা রদযোগ্য।নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো:
দানের বস্তু দখলার্পণের আগে যে কোন সময় তা রদ করা হয়।কারণ দখল প্রদানের আগে দানটি পূর্ণভাবে কাযকরী হয় না।একবার দখল অপিত হলে, আদালতের ডিক্রী ছাড়া অন্য কিছুই দানটি রদের জন্য যথেষ্ঠ হবে না।দাতা কর্তৃক দান প্রত্য্যাহার বা রদের ঘোষণা কিংবা দান রদের জন্য মোকাদ্দমা করলেই দান রদের জন্য যথেষ্ঠ হবে না।যতক্ষণ পযর্ন্ত না আদালত ডিক্রি প্রদান করেন,ততক্ষণ পযর্ন্ত দান গ্রহীতা দানের বিষয়বস্তুটি ভোগ এবং হস্তান্তর করতে পারেন।
তবে নিম্নলিখিত ক্ষেত্র ব্যতীত দানের বিষয়বস্তু দানগ্রহীতার বরাবরে হস্তান্তর করলে তা রদের জন্য আদালতের ডিক্রী প্রয়োজন।
১) স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে দান করলে;
২) যেক্ষেত্রে যাকে দান করা হয়, সেব্যক্তি দাতার সাথে নিষিদ্ধ স্তরের ভেতরে সম্পকির্ত হয়;
৩) যখন দাতা বা দানগ্রহীতা মারা যায়;
৪) যখন দানের বস্তুটি দান গ্রহীতা কর্তৃক দান, বিক্রয় বা অন্যভাবে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে।
৫) যখন দানের বস্তুটি দান হারিয়ে যাবে বা ধংস্বপ্রাপ্ত হবে;
৬) যে কোন কারণেই হোক, যখন দানের বস্তুর মূল্য বৃদ্ধি পাবে;
৭) দান সম্পত্তির এমন পরিবর্তন হয়েছে, যাতে তা চিহ্নিত করা যায় না।যেমন সরিষা ভাংগিয়ে তেল তৈরী করা।
৮) যখন দাতা দানের বিনিময়ে কিছু গ্রহণ করবেন।
৯) যখন দানের মূখ্য উদ্দেশ্য ধমীয় বা আধ্যাত্নিক, কারণ এক্ষেত্রে দানটি একটি ছদকা ছাড়া আর কিছুই নয়।
মুসলিম আইনে দান প্রত্যাহার বা রদ করার অধিকারটি দাতার একটি ব্যক্তিগত অধিকার এবং তার মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা এই দান বাতিল করতে পারে না।দান রদে গ্রহীতার আইন নয়, দাতার আইন প্রযোজ্য।একমাত্র আদালতের ডিক্রী দ্বারাই রদ সম্পূর্ণ হয়, দান রদের জন্য কেবলমাত্র দায়েরই যথেষ্ট নয়।সুতরাং দান রদের ডিক্রীর অাগে দাতার মৃত্যু হলে দাতার মৃত্যুর সংঙ্গে দান রদের অধিকার শেষ হয়ে যায় এবং যদি আপীল চলাকালে ও দাতার মৃত্যু হয়, তবে যদি প্রথম বিচারকারী আদালতে দান রদের মোকাদ্দমা কারিজ হয়ে থাকলে, সেক্ষেত্রেও দাতার মৃত্যুর ঐ অধিকারটি নষ্ট হয়ে যাবে।কিন্তু যদি মোকদ্দমাটি দানের দলিল বাতিলের জন্য হয়ে থাকে, তবে বাদীর মৃত্যু হলে ও মোকাদ্দমা বা সেই অধিকার টিকে থাকবে এবং তার স্থলে তার বৈধ প্রতিনিধিদেরকে স্থলাভিষিক্ত করা যাবে।
যখন দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দখল অর্পণ করা হয়েছে,তখন একমাত্র আদালতের ডিক্রী দ্বারাই দান রদ করা যাবে।ডিক্রী না হওয়া পযর্ন্ত গ্রহীতা দানের বস্তু ভোগ ও হস্তান্তর করতে পারবে।অবশ্য হেবা যদি প্রতারণামূলে হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীগণের মামলা করার অধিকার থাকে।
আইনের মাধ্যমে দান বাতিল বা প্রত্যাহৃত হতে পারে ।সে আইন হচ্ছে চুক্তি আইনের ১৯ ধারা। চুক্তি আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, যেক্ষেত্রে জোর করে অযথা প্রভাব খাটিয়ে বা প্রতারণা করে বা মিথ্যা বিবরণ দিয়ে যখন অঙ্গীকার আদায় করা হয় তখন সেই অঙ্গীকারভিত্তিক চুক্তি আহত ব্যক্তির ইচ্ছাধীনে বাতিলযোগ্য।দাতা যদি একারণে একজন বৃদ্ধা এবং অশক্ত মহিলা হন কিংবা তিনি যদি পদার্নশীল হন,তবে দানগ্রহীতাকে প্রমাণ করতে হবে যে, এই দান স্বেচ্ছামূলক।যেক্ষেত্রে দাতার অবস্থা এমন যে তিনি দানগ্রহীতার প্রভাবাধীনে আছেন, সেক্ষেত্রেও দানগ্রহীতাকে প্রমাণ করতে হয় যে তা সেচ্ছামূলক।
হেবা -বিল-এওয়াজ প্রত্যাহার:
হেবা-বিল এওয়াজে যে পযর্ন্ত না দান গ্রহীতা বিনিময় প্রদান করে সে পযর্ন্ত তা প্রত্যাহারযোগ্য।কিন্তু এওয়াজ প্রাপ্ত হলে তা অপ্রত্যাহারযোগ্য হয়ে যাবে।
তথাপি নিম্নলিখিত ক্ষেত্রসমূহে তা প্রত্যাহারযোগ্য হতে পারে।
১) যদি হেবার এক অংশের এওয়াজ প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহলে অন্য অংশ প্রত্যাহার করা যাবে।
২) পিতা নাবালেগ সন্তানের পক্ষের অন্য কাউকেও সম্পত্তি দান করলে, তা নাবালেগ কর্তৃক কিংবা দান গ্রহ্রীতা কতৃর্ক প্রত্যাহৃত হতে পারে।
৩) যদি সম্পত্তি বেদখল করার জন্য সাব্যস্ত হয়, তাহলে তা দান গ্রহীতা কর্তৃক প্রত্যাহৃত হতে পারে এবং সে এওয়াজ আদায় করে নিতে পারে ।
৪) যদি এওয়াজ অন্যের বিরুদ্ধ দাবীক্রমে তা প্রমাণিত হয়, কিংবা আংশিকভাবে উদ্ধার করা হয় তাহলে দাতা প্রথম ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে এবং
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তা গ্রহণ করেই হেবা সম্পূর্ণ করতে পারে কিংবা তা প্রত্যাহার করতে পারে।
৫) যখন দুইজনকে হেবা দিয়ে দান করা হয়, তার মধ্যে শুধু একজনের কাছ হতে এওয়াজপ্রাপ্ত হলে দ্বিতীয় জনের অনুকূলে হেবা প্রত্যাহার করা যাবে। 
৬) যদি দান-গ্রহীতার পথ হতে অন্য কেউ এওয়াজ প্রদান করে এবং যদি দানগ্রহীতা ঐ এওয়াজ দাতার সঙ্গে ঐ এওয়াজ পরিশোধ করার জন্য কোন প্রকার চুক্তিবদ্ধ না হয়, তাহলে হেবার দাতা ঐ হেবা প্রত্যাহার করতে পারবে।

মারজুল মউত
মানুষ মরণশীল। কিন্তু সে জানেনা সে কখন মরবে। তবু মানুষের জীবনে এমন সময় আসে যখন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মৃত্যুর কথা তাকে ভাবতে হয়।
যে পীড়ায় ওষুধে কাজ হয় না, সে পীড়া গুরতর আকার ধারন করলে মৃত্যু অবিলম্বে ঘটতে পারে এধরনের আশংকা মানুষের মন জুড়ে বসতে পারে।
একেই বলে মৃত্যুর সম্ভাবনা।
মারজুল মাউত: 'মারজ' শব্দের অর্থ রোগ এবং 'মউত' শব্দের অর্থ মৃত্যু।এ থেকে মারজুল মউত অর্থ দাড়ায় মৃত্যুরোগ অথাত্‍ যে রোগে একজন ব্যক্তির মৃত্যু বর্তমান থাকে।মারজুল মউত হল্র এমন এক ব্যাধি বা অসুখ যা সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে আশু -মৃত্যুর অাশন্কা সৃষ্টি করে এবং যার ফলে শেষ পযর্ন্ত ঐ ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে।ডি.এফ.মোল্লা তাঁর মুসলিম আইনের মূলনীতি গ্রন্থে মারজুল মউতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন,''এটি এমন কঠিন ব্যাধি যাতে মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং পরিশেষে তা সংঘটিত হবে।'' মুসলিম অাইনে মৃত্যু ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তির কোন কোন কাজের ফল সুস্থ ব্যক্তির কাজের ফল হতে এত ভিন্ন হয় যে, তদ্দরুন এটি বিশেষভাবে প্রধিনানযোগ্য ।
মারজুল মাউত (মৃত্যু শয্যায়) দান ও এর অত্যাবশকীয় শর্তাবলী: মরজ-উল-মউত বা মৃত্যু শয্যায় থেকে একজন মুসলমান দান করলে এবং দাতার মৃত্যুর পর ঐ দানে উত্তরাধিকারীগণ কোন সন্মতি প্রদান না করলে, দাফন-কাফন ও দেনা পরিশোধের পর মোট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের উধ্বে উক্ত দান কাযকরী হবে না; এমনকি অন্যান্য উত্তরাধিকারীগণ সন্মতি প্রদান না করলে কোন একজন উত্তরাধীকারী কে প্রদত্ত এই দান ও কাযকরী হবে না।
মরজ-উল-মউত এর কিছু শর্ত থাকা উচিত এবং তা আছে:
১) আক্রান্ত বা অসুস্থ ব্যক্তির মধ্যে অবশ্যই আসন্ন মৃত্যুর আশংকা থাকতে হবে। এটি এমন এক রোগ যাতে প্রাননাশের উচ্চ সম্ভাবনা থাকে।
২) অসুখটি দীর্ঘস্থায়ী হলে, যেমন ক্ষয়রোগে বা এলবুমিনুরিয়ার আসন্ন মৃত্যুর কোন আশন্কা না থাকলে অসুখটি মরজ-উল-মউত নয়; এমন কিছু পুরাতন ব্যাধি আছে যাতে রোগী অভ্যস্ত হয়ে গেছে।যেমন যক্ষা,বহুমূত্র,হাপানী,পক্ষাঘাত ইত্যাদি রোগ।এসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুভয় সৃষ্টিকারক বলে ধরা হয় না।হেদায়ার মতে এক বত্‍সর কাল স্থায়ী হলে তাকে ''দীর্ঘস্থায়ী অসুখ'' বলা হবে।তবে এই এক বত্‍সরের এই সময় কোন বাধাধরা বিধি নয়, এটি প্রায় এক বত্‍সর বা কিছু বেশী হতে পারে।সংক্ষেপে দানটি মৃত্যুর আশংকায় করা হলে ,প্রিভিকাউন্সিলের মতে,তা মরজ-উল-মউত বলে ধরতে হবে।কিন্তু পরে যদি এটি মৃত্যুকে উচ্চ সম্ভাবনাময় করে তোলে এবং এর ফলে যদি তার মৃত্যু ঘটে, তবে অসুখটি মরজ-উল-মউত বলা হবে।
৩) রোগীর এমন অবস্থা হওয়া যাতে তার মৃত্যু ঘটবে।একেই মৃত্যু ব্যাধি হিসেবে ধরা হয়েছে।
৪) কিছু বাহ্যিক লক্ষণ থাকবে যাতে সে তার সাধারণ কাজ কমে যেতে অসমর্থ হবে।
৪)অসুস্থ ব্যক্তির মনে মৃত্যু সম্পকে কিছু পরিমাণ মানসিক ভয় বা আশংকা থাকবে।
৫) প্রসব বেদনাকে ও মৃত্যু ব্যাধি হিসেবে ধরা হয়েছে।তবে একজন গর্ভবতী মহিলাকে মরজ-উল -মউত এর রোগী বলে গন্য করা যাবে না, যদিও তার ব্যাথা উঠার পর সে কোন দান করে থাকে এবং এই ক্ষেত্রে মরজ-উল-মউত এর মতবাদ প্রযোজ্য হবে না।
৬) ব্যাধি ছাড়া ও মৃত্যু ভয় হতে পারে।যেমন হত্যার অপরাধে বিচারাধীন ব্যক্তির মৃত্যুর ভয়।
৭) অন্যের কাছে মারাত্নক বলে অনুভূত হবার প্রয়োজন নেই।

মৃত্যু অবস্থায় দান ও সুস্থ অবস্থায় দানের মধ্যে পাথর্ক্য:
সুস্থ অবস্থায় সম্পন্ন দান এবং মৃত্যু ব্যাধিগ্রস্ত দানের মধ্যে অনেক পাথর্ক্য রয়েছে। নিম্নে সে পাথর্ক্যগুলো বণিত হলো :
১) সুস্থ অবস্থায় সমুদয় সম্পত্তি বিনা প্রতিদানে দান করলে তা বৈধ এবং আইনসিদ্ধ , কিন্তু মরজুল মউত অবস্থায় কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তি সম্পূর্ণ বা    আংশিক দান করলে তা উইলের মতো কাযর্কর হয়।
২) সুস্থ অবস্থায় দানের ক্ষেত্রে দাতার মানসিক দৃঢ়তা ও সুস্থতা দেখা যায় তবে মৃত্যুব্যাধি অবস্থায় দানের ক্ষেত্রে দাতার হৃদয়ে মৃত্যুর ভয় দ্বারা আচ্ছন্ন থাকে।
৩)মৃত্যু ব্যধি অনুমিত অবস্থায় কোন দানের পর যদি দাতা সুস্থ হয়ে উঠে তাহলে উক্ত দান স্বাভাবিক দান বলে গণ্য হবে এবং তার ফলাফল সেরকম হবে।কিন্তু সুস্থ অবস্থায় দানের ফলাফল অপরিবতির্ত থাকে।
৪) সুস্থ অবস্থায় স্ত্রী স্বামীকে দেনমোহর সংক্রান্ত দান করলে তা বৈধ বলে গণ্য হবে।
কিন্তু মৃত্যুব্যাধি আক্রান্ত অবস্থায় স্বামীকে দেনমোহর দান করলে তা বৈধ বলে গণ্য হবে তার স্বামীকে মুক্ত করার চেষ্টা করলে তা বাতিল বলে গন্য হবে। কেননা স্বামী স্ত্রীর উত্তরাধিকারী।
দানের বৈধতার জন্য দখল প্রদানসহ যে সকল শতাবলী রয়েছে , মরজ -উল -মউতের জন্য ও ঐ সব শতাবলী প্রযোজ্য হবে।যেমন, দাতা যক্ষারোগে ভুগছিল , এটিই কেবল মরজ-উল-মউতের মতবাদ প্রয়োগের জন্য যথেষ্ঠ হবে না।কিন্তু যেক্ষেত্রে এই মমে পযার্প্ত প্রমাণ আছে যে, রোগী রোগটির কারণে মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে এবং সে খুবই দূবল ছিল এবং আশাহীন অবস্থায় ভুগছিল , সেক্ষেত্রে মরজ-উল-মউত এর মতবাদ প্রযোজ্য হবে।
মরজ -উল-মউত অবস্থায় দান এর ফলাফল:
মরজ -উল-মউত অবস্থায় দান দ্বিপ্রকৃতির পুরোপুরি দান নয়।এ উক্তিটি প্রখ্যাত মুসলিম আইনবেত্তা এ ফয়েজীর।উক্তিটি বাস্তব ও সঠিক। কেননা মুসলিম আইনে মরজুল মউত তথ্য ঘটিত বিষয়,আইন ঘটিত নয়। এ কারণে ফয়েজী মৃত্যু- ব্যাধিতে আক্রান্ত কোন ব্যক্তি কর্তৃক সম্পাদিত একটি দান পূনাঙ্গ দান কায কিংবা সম্পূর্ণ উইল লব্ধ সম্পত্তি নয়।এটি দু'প্রকারের হস্তান্তরের একটি শংকর বা সংমিশ্রণ। যেমন দানের ক্ষেত্রে:
দাতা কর্তৃক হস্তান্তরিত বিষয়টি মরজ-উল-মউত এর পযার্য়ে পড়ে কিনা তা চারটি তথ্য ঘটিত বিষয়ের উপর নির্ভরশীল, যেমন:
ক) রোগাক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর আশংকা ছিল কি না,
খ) রোগের দ্বারা মৃত্যুর ভয় সঞ্চার করেছিল কিনা,
গ) দাতার বাহ্যিক আচরণ দৃষ্টে তা প্রতীয়মান ছিল কিনা এবং
ঘ) রোগের দীর্ঘ স্থায়ীত্বের কারণে দাতার মনে মৃত্যু ভীতি সঞ্চার না হওয়া।
এ অবস্থায় দাতার সম্পত্তি দান যদি কোন অনাত্নীয়ের অনুকূলে হয় তবে ১/৩ অংশ কাযর্কর হবে।এবং যদি তা উত্তরাধিকারীদের সন্মতির উপর নির্ভরশীল।তারা সম্পত্তি দিলে কাযর্কর হবে এবং না দিলে তা কাযর্কর হবে না।তবে দাতার মৃত্যুর আগে গ্রহীতাকে অবশ্যই দখল অর্পণ করে থাকতে হবে কিন্তু দাতা দানের চুক্তির পরে এবং দখল অপর্ণের আগে মারা গেলে, সম্পত্তিটি তার ওয়ারিশদের কাছে চলে যাবে।
শিয়া আইনে উত্তরাধকারীদের বিনা সন্মতিতে একজন উত্তরাধিকারীকে দেওয়া এক তৃতীয়াংশ সম্পত্তির দান বৈধ।
মৃত্যু ব্যাধি আক্রান্ত অবস্থায় কোন দান করার পর দাতা যদি সুস্থ হয়ে উঠে তবে তা সুস্থ অবস্থায় দানের ন্যায় কাযর্কর হবে।স্বাভাবিক অবস্থায় দানের ক্ষেত্রে দাতার সুস্থ শরীর -মন থাকা অপরিহায এবং দানের অপরাপর শর্ত পূরণ করতে হবে।যেমন: দান ঘোষণা, দখল অর্পণ এবং বিনিময় গ্রহণ না করা ইত্যাদি।এগুলো কোন দান কাযর্কর হবে না।
সুতরাং এ থেকে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, মৃত্যু ব্যাধি আক্রান্ত অবস্থায় কোন দান পুরোপুরি দানের আইনগত ফলাফল অনুসরণ করে না।অন্যদিকে মৃত্যু ব্যাধি অবস্থায় দানটি উইলের মত কাযর্কর হলে ও তা পুরোপুরি উইলের লব্ধ সম্পত্তি হিসাবে গণ্য হয় না।
কারণ হলো উইলের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে আইনগত বিধান হলো এই যে, কোন মুসলিম তার দাফন-কাফনের ব্যয়  ও ঋণ পরিশোধের পর তার যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকবে তার ১/৩ অংশ পরিমাণ উইলের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে।উইলকারী তার বৈধ উত্তরাধিকারীর অনুকূলে উইলের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর অবৈধ হবে। তবে যদি অন্যান্য উত্তরাধিকারী তাতে সন্মতি দেয় তাহলে তা বৈধ হবে।
হেদায়া এবং বিভিন্ন মামলার উদাহরণে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, উইল দাতার উত্তরাধিকারীর তার সম্পত্তির স্বত্ব তার সম্পত্তির সাতে সম্পৃক্ত। উইলদাতা মৃত্যু ব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় তার সম্পত্তির কোন প্রয়োজন উপলব্ধি করে না।এ কারণে সম্পত্তির উপর তার স্বত্ব রদ হয এবং উত্তরাধিকারীদের উপর তা বতার্য়।সহজভাবে বলতে গেলে মৃত্যু ব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় কোন ব্যক্তির উইলের ক্ষমতা বা অভিপ্রায় দৃঢ়তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে না। আর এ কারণেই মৃত্যু-ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি তার জীবনের পাপের প্রায়শ্চিতত্করণের জন্য ১/৩ অংশ সম্পত্তি প্রদান করতে পারে।
সুতরাং এ অালোচনা থেকে স্পষ্টতই বলা যায় যে, মৃত্যু ব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায সম্পাদিত দান প্রকৃত দান নয়। মারজুল মউত উইলের মত কিন্তু প্রকুত উইল নয় দুটির সংমিশ্রন মাত্র। অতএব উক্তিটি যথাযথ।

হেবা ( দানপত্র) দলিলের  নমুনা
মডেল - ১
হেবা দলিল
ক (পূণ ঠিকানা)    গ্রহীতা
খ (পূণ ঠিকানা)    দাতা
কস্য হেবানামা পত্রমিদং কাযাঞ্চাগে আমি নিম্ন তপশীল বণিত সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক দখলকার নিয়ত আছি।তুমি আমার অতি স্নেহভাজন।
বহুদিন হইতে তুমি আমাকে সেবা করিয়া আসিতেছ।এক্ষণে আমি আমার স্বত্ব দখলীয় নিম্ন তপশীল বনির্ত সম্পত্তি তোমাকে অত্র হেবা দলিল মূলে দান করিলাম।তাহার দখল তোমাকে বুঝাইয়া দিলাম।অদ্য হইতে তপশীল বণির্ত সম্পত্তির আমার যাবতীয় স্বত্ব দখল তোমাকে বতিল।অদ্য হইতে সরকারের নিকট আমার নামের পরিবতে তোমার নিজ নাম জারী করিয়া খাজনাদি আদায়ে পুত্র পৌত্রাদি ওয়ারিসান ও স্থলবতিগর্ণক্রমে তপশীল বণিত সম্পত্তি দান বিক্রয়, হস্তান্তর , রুপান্তর ইত্যাদি যাবতীয় ক্ষমতা যুক্তের ভোগ দখল করিতে হয়।ইহাতে আমার কি আমার পুত্র পৌত্রাদিময় ওয়ারিসান ও স্থলবতিগণক্রমে কোন ওজর আপত্তি নাই ও রহিল না; যদি করি বা করে তাহা হইলে সবার্দালতে অগ্রাহ্য ও বাতিল হইবে।অদ্য হইতে আমি তপশীল বণিত সম্পত্তি সম্পকে চিরতরে এককালীন নি:স্বত্ববান হইলাম।এতদথে স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে অন্যের বিনা প্ররোচনায় অত্র হেবা দলিল সম্পাদন করিলাম।
ইতি
তাং..............
তপশীল
সম্পত্তির পরিচয় লিখিত  হইবে
অত্র দলিল লেখক সহ                  ফদ্দে লিখিত
সাক্ষী              জন সাক্ষী
লিখক  ও সাক্ষী
সাক্ষী
মডেল - ২
হেবা বিল এওয়াজ দলিল
ক (পূণ ঠিকানা)          দলিল গ্রহীতা          
খ (পূণ ঠিকানা)          দলিল দাতা
কস্য হেবা বিল  এওয়াজ নামা দলিল পত্রমিদং কাযাঞ্চাগে তুমি একজন সত্‍ সরল ও অনুগত আমার ভাতুষ্পুত্র।তুমি অামাকে অাদর যত্ন ও সেবা শুশ্রুষা করিয়া আসিতেছ।তোমাকে কিছু স্থাবর সম্পত্তি দিবার মনস্থ করিয়াছি।সেইহেতু পৈত্রিক ওয়ারিস সূত্রে প্রাপ্ত নিম্ন তপশীল বণির্ত ভূমি আমার অপর শরীকান সহিত ...... তারিখের ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত নিম্ন তপশীল বণির্ত ভূমি আমার অপর শরীকান সহিত......তারিখের ........নং এক বন্টননামা দলিল দ্বারা অন্যান্য সম্পত্তিসহ নিম্ন তপশীল বণির্ত ভূমি আমার ছাহামে প্রাপ্ত হইয়া মালিক ও দখলকার আছি।ইহার আনুমানিক মূল্য নং .............টাকা হইবে, তাহা অদ্য তোমার নিকট হইতে একখানা জায়নামাজ ও একছড়া তসবি বুঝিয়া নিয়া তাহার বিনিময়ে অত্র হেবা বিল এওয়াজ দ্বারা দান করিলাম।অদ্য হইতে নিম্ন তপশীল বণির্ত সম্পত্তির আমার যাবতীয় স্বত্ব অত্র হেবা বিল এওয়াজ মূলে মালিক ও দখলকার হইয়া সরকারে আমার নামের পরিবতে তোমার নিজ নাম জারী করত:দান, বিক্রয়, কট, রেহান ইত্যাদি সবর্প্রকার হস্তান্তরের ও কাটিয়া ভরিয়া ভাঙ্গিয়া গড়িয়া বাস্তবাগেয়াত বানাইয়া যদৃচ্ছা রুপান্তরের ক্ষমতা পরিচালনে তুমি পৌত্রাদীময় ওয়ারিসান ও স্থলবতির্গনক্রমে পরম সুখে ভোগ দখল করিতে থাক ও থাকুক।ইহাতে আমার কিংবা আমার পুত্র পৌত্রাদীময় ওয়ারিসান ও স্থলবতির্গণক্রমে কোনরুপ ওজর আপত্তি দাবি দাওয়া কিছুই রহিল না।যদি করি বা কেহ করে তাহা সর্ব আদালতে অগ্রাহ্য ও বাতিল হইবে।এতদথে স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে সুস্থ শরীরে অন্যের বিনা প্ররোচণায় অত্র হেবা বিল এওয়াজ দলিল সম্পাদন করিলাম। ইতি - তাং
তপশীল হেবাকৃত ভূমি এখানে তপশীল লিখিত হইবে -
সাক্ষী                                        লিখক
 
মডেল -৩
দানপত্র বা হেবানামা দলিল
কস্য স্থাবর সম্পত্তির দানপত্র বা হেবানামা দলিল পত্রমিদং কাযাঞ্চাগে।দলিল গ্রহীতা তুমি ....... আমার ঔরসজাত পুত্র হইতেছ। আমার অন্যান্য সন্তান-সন্তনি বিদ্যমান থাকিলেও আমাকে ও আমার স্ত্রীকে দেখাশুনা করার দূরের কথা একখানা পত্র দ্বারা ও আমাদের খোঁজ খবর নেয় না। তুমি দলিল গ্রহীতা সবদাই আমার নিকটে থাকিয়া অামাকে এবং আমার স্ত্রী অথাত্‍ তোমার মাতাকে যথেষ্ঠ সেবা, যত্ন এবং ভক্তি শ্রদ্ধা করিয়া আসিতেছ। তদ্দরুন আমি তোমাকে অত্যন্ত স্নেহ মমতা করিয়া থাকি। মানব দেহ অনিত্য। এই খোদার রাজত্বে কাহার কখন ও কি হয়, তাহা খোদা ভিন্ন আর কেহ জানে না। সে কারণে অদ্য রোজ হাজিরান মজলিশের মোকাবেলা আমার অনেক দিনের কামনা বাসনা পূরণ করার নিমিত্ত আমার স্বত্ব দখলীয় নিম্ন তফসিলের লিখিত সম্পত্তি যাতে আমি স্থিতিবান রায়তি স্বত্বে মালিক স্বত্ববান ও ভোগ দখল করে বিদ্যমান আছি এবং যার আনুমানিক মূল্য .........বটে তা অত্র দলিল সম্পাদনে তোমাকে দান করত দানকৃত বা হেবাকৃত সম্পত্তি দখল চিরতরে নি:সত্ববান হইলাম।
দলিল গ্রহীতা তুমি অদ্য হইতে অত্র দলিল বলে নিম্ন তফসিলের লিখিত সম্পত্তিতে আমার সব স্বত্বে স্বত্ববান মালিক ও খাস দখল করে নিত্য থাকিয়া যথাস্থানে প্রযোজন তোমার নাম জারি ইত্যাদি ক্রমে সব প্রকারের হস্তান্তর ও দায়বন্ধের ক্ষমতা যুক্ত যদৃচ্ছামতে নিম্ন তফসিলের লিখিত সম্পত্তি তুমি ভোগ দখল তছনছ করে নিয়ত রহ।যে সম্পত্তি তোমাকে দান করা গেল তাহা সবর্তোভাবে নিদোর্ষ ও নিষ্কন্টক অবস্থায় আছে।এতদথে অত্র দলিলের ভাবাথ ও তফসিল সম্পূর্ণরুপে বুঝিতে পারিয়া স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে সুস্থদেহে এই দানপত্র দলিল লিখিয়া দিলাম। ইতি- তফসিল -দানকৃত সম্পত্তি পরিচয়।
মডেল -৪
ধমীয় প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত ভূ - সম্পত্তির হেবা বা দানপত্রের নমুনা
চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার অন্তর্গত হুলাইন গ্রামের "মুছাখান মসজিদ" পক্ষে পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী বা সম্পাদক (নাম) ...............দানগ্রহীতা।
অামি মেহের আলী চৌধুরী, পিতা -মরহুম আলহাজ্ব ফরিদ আহমদ চৌধুরী, গ্রাম- মগনামা, থানা- চকরিয়া, জেলা -কক্সবাজার ।..................দাতা।
মূল্য - ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার ) টাকা।
পরম করুণাময় আল্লাহ তা'লার নামে অত্র দানপত্র দলিল সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বণিত হইতেছে যে, চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার অন্তর্গত হুলাইন গ্রামের উক্ত ''মুছাখান মসজিদে'' দীর্ঘ দিন হইতে জুন্মার নামাজ আদায়ক্রমে স্থানীয় জনগণ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়িয়া আসিতেছেন।মসজিদটি দীর্ঘকাল পূবে নিমির্ত বিধায় বর্তমানে বহুবিধ সমস্যার সন্মুখীন।স্থানীয় মুসাল্রীগণের নামাজের জায়গার সংকুলানসহ বিজলি বাতি, বেদ্যুতিক পাখা, ইত্যাদি খরচের ব্যয় সামাল দিয়া ইমাম এবং মোয়াজ্জিনের বেতন সংকুলান সম্ভবপর হইতেছে না।
পরম করুণাময় আল্লাহ তা'লার নামে অত্র দানপত্র দলিল সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বণিত হইতেছে যে, চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার অন্তর্গত হুলাইন গ্রামের উক্ত ''মুছাখান মসজিদে'' দীর্ঘ দিন হইতে জুন্মার নামাজ আদায়ক্রমে স্থানীয় জনগণ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়িয়া আসিতেছেন।মসজিদটি দীর্ঘকাল পূবে নিমির্ত বিধায় বর্তমানে বহুবিধ সমস্যার সন্মুখীন। স্থানীয় মুসাল্রীগণের নামাজের জায়গার সংকুলানসহ বিজলি বাতি, বেদ্যুতিক পাখা, ইত্যাদি খরচের ব্যয় সামাল দিয়া ইমাম এবং মোয়াজ্জিনের বেতন সংকুলান সম্ভবপর হইতেছে না।
ক্ষণস্থায়ী মানব জীবনে আল্লাহর অনুগ্রহ কামনায় প্রত্যেক সম্ভবপর অনেক কিছু দান করে থাকেন। পটিয়া থানার অন্তর্গত হুলাইন গ্রামের নিম্নবণিত তফসিলের জমি জমা আর,এস,মালিক আমার নানা মরহুম জিন্নাত আলী চৌধুরী এবং দাদা মরহুম ওয়াইজুদ্দিন সিকদার তাহাদের নিকট হইতে আমার মিরাসপ্রাপ্ত, খরিদসূত্রে অজিত খাস দখলী সম্পত্তি বটে।মসজিদের যাবতীয় খরচ নিবার্হ করার নিমিত্তে ও আমার নিজের এবং মুরব্বীগণের ইহকাল ও পরকালের ছওয়াব অজর্নের আশায় আমার খাস দখলী (এক একর ) ভূ সম্পত্তি, আপনি মসজিদ কমিটির পক্ষে সেক্রেটারী (সম্পাদক) নিকট মসজিদের বরাবরে দান করিবার প্রস্তাব করিলে মসজিদের পক্ষে আপনি দখল গ্রহন করিতে ইচ্ছুক হওয়ায় আমি নিম্ন তফসিলের মোট এক একর ভূ সম্পত্তি মসজিদের অনুকূলে দখল হস্তান্তর ক্রমে ফি ছাবিলিল্লাহ দান করে চিরকালের জন্য স্বত্ব ত্যাগ করিলাম। ইহাতে আমার অথবা আমার অলি ওয়ারিশগণের কোনরুপ দাবী-দাওয়া থাকিবে না।দাবী করিলে তাহা সবার্ আদালতে অগ্রাহ্য হইবে।এই দানকৃত সম্পত্তি যাবতীয় ভোগ, ব্যয়, ময় তছরুপ।এমনকি মসজিদের বৃহত্তর প্রয়োজনে মুসল্লীগণের রেজ্যুলিউশন মূলে উপযুক্ত কতৃপর্ক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে বিক্রি ও করতে পারবেন।প্রকৃত পক্ষে নগদ টাকা দান করিলে যেইভাবে মসসজিদের জন্য ব্যয় করা হয় সেইভাবে মসজিদের   উন্নয়নের কাজে এই সম্পত্তি ব্যবহার করিতে পারিবেন। প্রজাস্বত্ব আইন আনুযায়ীআমার নামের স্থলে মসজিদের পক্ষে সেক্রেটারীর নামে খতিয়ানে নামজারি করিয়া খাজনা আদায় করিবেন।মসজিদ কমিটির যখন যে লোক সেক্রেটারী নিযুক্ত হইবেন তিনি মসজিদের পক্ষে এই সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও যাবতীয় কায সমাধা করিবেন।দানকৃত সম্পত্তি ইতিপূবে কোথাও কোনরুপ হস্তান্তর বা দায়বদ্ধ করা হয় নাই।বনিত বক্তব্যের আলোকে আমি স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে অত্র  দানপত্র লিখিয়া দিলাম।
ইতি
সন, তাং ................।
তফসিল
সম্পত্তির পরিচয় এবং বিবরণ পরিস্কারভাবে উল্লেখ করিতে হইবে।অত্র দলিলের লেখকসহ মোট তিনজন স্বাক্ষী স্বাক্ষর করিবেন।
লেখকের স্বাক্ষর ও ঠিকানা এবং পাঠক হিসাবে প্রত্যয়ন। (দাতা নিরক্ষর না হইলে নিজে পাঠ করিবেন)
সাক্ষী
(১) স্বাক্ষর ও ঠিকানা
(২) স্বাক্ষর ও ঠিকানা

তথ্যসূত্র:
১) মুসলিম ও পারিবারিক আইন পরিচিতি- মোহন্মদ মজিবর রহমান
২) মুসলিম আইন- মো: আনসার আলী খান
৩) ফারায়েজ আইন [মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান উত্তরাধিকার আইন]- বাসুদেব গাঙ্গুলী
৪) ফারায়েজ আইন [মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান এবং সাকসেশন এক্ট১৯২৫]- এ. কে. এম. মনিরুজ্জামান 
৫) Outlines of  Muhammadan Law by- Asaf  A.A. Fyzee
৬) MULL'S Principles of MAHOMEDAN LAW by- M. HIDAYATULLAH & ARSHAD HIDAYATULLAH.
৭) ওয়াকফ বিষয়ক আইন  ( হেবা, উইল  ও দেবোত্তর সহ)- ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া
৮) ফারায়েজ আইন- গাজী শামছুর রহমান
১০) সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২- অধ্যক্ষ  মো: আলতাফ হোসেন
১১) রেজিষ্ট্রশন আইনের ভাষ্য- গাজী শামছুর রহমান
১২) বিভিন্ন বিষয়ক সরকারী গুরত্বপূর্ণ আইনের গেজেট ২০০৪-২০০৫                      -
১৩) Exploring the possibilities for Reforms of the Muslim Law Of SuccessionFollowing the Muslim Family Laws Ordinance -1961 [a research Monograph ]- By Fatema Ferdous
১৪) আইনে নারী নিযার্তন প্রসঙ্গ- আইন  ও সালিশ কেন্দ্র ( আসক)
১৫) WOMEN AND LAW- By Nahid Ferdousi, Shahin Zohora & Noor-e-Medina S. Jesmin.
১৬) পারিবারিক আইনে বাংলাদেশের নারী- আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
১৭) বাংলাদেশে পারিবারিক অাইন ও তার প্রয়োগ-শাহীন আখতার, ফাওজিয়া করিম

1 comment: